ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ইসলামপুর-হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বিদ্যালয় চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি–সমর্থিত মাসুদুর রহমান, রহমত উল্লাহ, গোলাম মোস্তফা ও ইমদাদুর রহমান, জামায়াত–সমর্থিত শামীম হোসাইন, মুক্তার বিশ্বাস, সফর আলী, তোতা মিয়া, জহুরুল ইসলামসহ ১৫ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় চার মাস আগে ইসলামপুর-হরিপুর কবি ফজের আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য চার সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে আহ্বায়ক হন জামায়াত–সমর্থিত জহুরুল ইসলাম। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের বিরোধ তৈরি হয়। আজ সকালে বর্তমান আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বিদ্যালয়ে গেলে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটিতে জহুরুল ইসলাম সভাপতি নির্বাচিত হন। এ নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা বিবাদে জড়ান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে কমিটির অনুমোদন করা হয়েছে।

জামায়াত–সমর্থিত আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন, শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সব পক্ষ মিটিং করে অ্যাডহক কমিটি হয়েছে। প্রথম দিন আমরা স্কুলে গেলে তারা বাধা দেয়। আজ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় এবং তারই জেরে এই মারামারি।’

এ বিষয়ে মহারাজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহজাহান আলী বলেন, স্কুলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হতে পারে, এমন আশঙ্কায় তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে ছুটে যান মীমাংসা করার জন্য। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলার সময় জহুরুল, তাঁর ভাইসহ তাঁদের সমর্থকেরা তাঁদের লোকজনকে মারধর শুরু করেন। তাঁরা ভোর থেকেই লাঠি, রামদা নিয়ে স্কুলে বসে ছিলেন। বর্তমান যে আহ্বায়ক, তাঁর তো কোনো বৈধতা নেই।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি এবং থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমর থ ত ব এনপ র ক কম ট স ঘর ষ র সমর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য খাতে সমস্যা ১০টি, এর সমাধানই সংস্কার

স্বাস্থ্য খাতের মূল রোগ, সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ ১০টি। এগুলো সমাধানের মধ্য দিয়ে এই খাত সংস্কারে হাত দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা মনে করেন, অন্য কোনো খাতের সংস্কার অর্থবহ হবে না, যদি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে) অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এই প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মো. সায়েদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে, মতামত নিয়ে মনে হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা, রোগ বা চ্যালেঞ্জ মূলত ১০টি। এগুলো হচ্ছে: বর্তমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতাবিচ্ছিন্ন; এই ব্যবস্থা অতিকেন্দ্রীভূত; এই ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা উপেক্ষিত, বিশেষায়িত সেবায় উৎসাহী; এখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি অত্যন্ত প্রবল; এখানে কাজ করেন উৎসাহ ও মনোবলহীন জনবল; আছে মনন ও মানসিকতার সংকট; এই খাতে নৈতিকতার অবক্ষয় ও স্বাস্থ্যের দ্বন্দ্ব প্রবল; আছে পরনির্ভরশীলতা; এখানে নেতৃত্ব দুর্বল এবং চলছে বরাদ্দের ঘাটতির সঙ্গে পরিকল্পনাহীনভাবে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এই ১০টি সমস্যার বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় বলেন, স্বাস্থ্য সরকারের ভাবনার কেন্দ্রে না থাকলে সব সংস্কার অর্থহীন হবে।

এর আগে ব্রিফিংয়ের শুরুতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম গত এক বছরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কী করেছে, তার বর্ণনা দেন। এই এক বছরে বড় কাজগুলোর মধ্যে আছে: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের দেশে ও বিদেশ চিকিৎসা, বিদেশ থেকে চিকিৎসক এনে চিকিৎসা করানো, কয়েক হাজার চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ, ৭ হাজার চিকিৎসকের জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুই পালা চালু, মেডিকেল শিক্ষায় মৌলিক বিষয়ের শিক্ষকদের বেতন ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি, আবার লিভার ও বোনম্যারো প্রতিস্থাপন করার উদ্যোগ, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ১৯টি হোস্টেল নির্মাণের উদ্যোগ, সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য অভিন্ন নীতিমালা তৈরি।

নূরজাহান বেগম আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার সময় নির্দলীয়, সৎ ও দক্ষ মানুষ পাওয়া কঠিন। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের পদে, চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বা বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগের সময় এটা দেখা গেছে।

সংস্কার কত দূর

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিরা বলেন, ১০টি সমস্যার সমাধানের মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের কাজ মূলত শুরু হয়ে গেছে। সব কাজ তাঁরা শেষ করতে পারবেন না।

অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, সব ধরনের পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষায় ইন্টার্নশিপ ১৮ মাসের হবে এবং এর মধ্যে শিক্ষার্থীকে ছয় মাস গ্রামে থাকতে হবে। বিশেষায়িত সেবা রাজধানীর বাইরে নেওয়ার জন্য বিশেষায়িত সেবার একটি ‘মেডিকেল সিটি’ হবে উত্তরবঙ্গে, নারী স্বাস্থ্যের বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দক্ষিণবঙ্গে এবং প্রবীণদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে দেশের পূর্বাঞ্চলে। এসব হাসপাতাল বিদেশি বিনিয়োগে হবে।

মানুষের নিরাপদ ও মানসম্পন্ন ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ফার্মাসি নেটওয়ার্ক তৈরির কথা ভাবছে মন্ত্রণালয়। মো. সায়েদুর রহমান বলেন, মুদিদোকান আর ফার্মেসি এক জিনিস নয়। ওষুধ দেওয়া একটি বিশেষায়িত কাজ। এর জন্য চাই ফার্মাসিস্ট। এই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। স্বার্থের দ্বন্দ্ব যেন না থাকে, সে জন্য ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে চিকিৎসকদের সব ধরনের উপহার নেওয়া বন্ধের আইনি ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতারা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু উদ্যোগ ওষুধশিল্পের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। অন্য এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হযবরল পরিস্থিতি। এই দুটি বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বিশেষ সহকারীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকেরা।

মো. সায়েদুর রহমান স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের মন্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, সরকার কার স্বার্থ দেখবে। সরকার চাইবে মানুষ মানসম্পন্ন ওষুধ পাক আবার কোম্পানিগুলো ন্যায়সংগত মুনাফা করুক। সরকার কোম্পানিগুলোর কোনো ক্ষতি করবে না, বরং বিকাশে সহযোগিতা করবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী দেড় ঘণ্টা কথা বলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাঈদুর রহমান, শিক্ষাসেবা বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ