ছয়জনের পরিবারে চারজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর মধ্যে পরিবারের প্রধান মো. কামাল হোসেন মাঝি নিজেও একজন। জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষটির জীবনের শুরু হয়েছিল বড় একটি স্বপ্ন নিয়ে—ধর্মীয় বক্তা হবেন, মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করবেন, হামদ-নাথ গাইবেন, মানুষকে আলো দেখাবেন। মুখস্থ করেছিলেন ১৫ পারা কোরআন। কিছুদিন মাদ্রাসায়ও পড়েছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়নি। অভাব আর দারিদ্র্য তাঁকে নামিয়ে এনেছে এমন এক বাস্তবতায়, যেখানে এখন তাঁর একমাত্র চাওয়া—দুবেলা খেতে পারা আর মাথার ওপর ছাউনি।

ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কন্দর্পপুর গ্রামে থাকেন কামাল। জনতাবাজার থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে তাঁর ঘর। বর্ষায় কর্দমাক্ত রাস্তা পেরিয়ে কোনো রিকশা যায় না, হাঁটতে হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশীর আধা মণ বীজধানের বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কামাল পড়ে যান। পথচারীরা তুলে দিয়ে আবার বস্তা কাঁধে তুলে দেন। হয়তো এর বিনিময়ে কিছু টাকা পেয়েছেন। কিন্তু এত কষ্টের কাজ করেও পরিবারে তেমন কিছু যোগ হয় না।

কামালের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী মোসাম্মৎ তানজিলা বেগম (৩৯) ও ছোট মেয়ে উম্মে হাবিবা (৭) ছাড়া পরিবারের সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তাঁর বড় মেয়ে কামরুন নাহার (২৫), ছেলে আবুল বাশার (১৩), মেজ মেয়ে শশী আক্তার (১০)—তিনজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। এ ছাড়া দুই মেয়ের স্বামীও প্রতিবন্ধী। বড় জামাই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী, মেজ জামাই শারীরিকভাবে অক্ষম। কারও তেমন উপার্জন নেই।

কামালের জন্ম উত্তর রাজাপুরের রামদাসপুর গ্রামে। বাবা চাষাবাদ করতেন। মেঘনার বারবার ভাঙনে সব হারিয়ে দক্ষিণ রাজাপুরে এসে সরকারি পতিত জমিতে ঘর তোলে পরিবার। কামাল ছোটবেলায় ওস্তাদের মুখে শুনে কোরআন মুখস্থ করেন। কিছুদিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়লেও অর্থাভাবে পড়া থেমে যায়। সেই সময়েই বক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে মনে। কিন্তু পরিবারের অভাব তাঁকে স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

বিয়ের পর থেকে কামালের স্ত্রী তানজিলা ছোট ছোট কাজ করেন, শাকপাতা বিক্রি করে, হাঁস-মুরগি পুষে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। একসময় চারটি গরুর মালিকও হন। কিন্তু ২০২৪ সালে এক রাতে চারটি গরুই চুরি হয়ে যায়। এ খবর প্রকাশ হয় প্রথম আলোতেও। তানজিলা বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছেন, গরুগুলো পাননি। মানুষের সহায়তায় একটি বাছুর কেনেন, আর মৎস্য বিভাগ আরও একটি দেয়। এখন সেগুলো বড় হচ্ছে। গরু দুটি এখন তাদের সম্বল।

কামাল বলেন, ‘এই বছর বিষ্টির শেষ নাই। আসমান দিয়াও পরে, বাড়িতদারের ইলশা নদীর জোয়ার ওডে ডোয়াদ্দারে। গরবিডি ডুবি যায়। বিষ্টিরসুম্ গরে-বাইরে একাকার। গরেও পানি, বাইরেও পানি। এই অবস্থা দেইকখা জনতাবাজারের জামাল ডাকতোর ৫১ হাজার টিয়ার (টাকা) টিন দিছে বাকিত্। কইছে টিয়া ছিরি ছিরি (অল্প অল্প) নিবো। কিন্তুক এহোন টিয়ারলাই চাপ দেয়।’

এমন করেই জীবন পার করছে কামাল মাঝির পরিবার। কামালের চাওয়া দিনে দুবেলা খেতে পাওয়া, একটু নিরাপদে থাকা। ছোট যে তিনটি ছেলে-মেয়ে আছে, তাদের স্বাবলম্বী করা। কিন্তু কোনো কূল খুঁজে পাচ্ছে না। স্ত্রী তানজিলা বলেন, ‘পুতেরে (পুত্র) একজন এট্টা ছাগল ছদকা (দান) দিছিল। হেইডা বেইচ্চা চালে টিন লাগাইছি। এহোনো ব্যারা ভাঙা।’

ভোলা জেলা প্রশাসক মো.

আজাদ জাহান বলেন, খোঁজ নিয়ে তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মো. কামাল হোসেন মাঝির পরিবারকে যথাসাধ্য সাহায্য করবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ

জন্মদিন উপলক্ষে টানা উৎসবের মেজাজে রয়েছেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমণি। মালয়েশিয়া সফর শেষে ঢাকায় ফিরেই রাজধানীর পল্লবীতে সাংবাদিক ও সহকর্মীদের জন্য পার্টির আয়োজন করেন পরীমণি। দাওয়াত পেয়ে পার্টিতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানান লাক্স তারকা অভিনেত্রী প্রসূন আজাদ। 

গতকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা চললেও নীরব ছিলেন পরীমণি। অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন আলোচিত এই নায়িকা। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাতে তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন পরীমণি। 

আরো পড়ুন:

পরীমণির পার্টিতে গিয়ে প্রসূনের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতা

প্রশ্ন করবেন না, সব বলে দেব: পরীমণি

লেখার শুরুতে পরীমণি বলেন, “প্রিয় প্রসূন আজাদ, আপনি আমাকে নিয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে, ‘আমি আমার লোক দেখানো পার্টিতে আপনাকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে অপমান করেছি!’ আপনি এ-ও বলেছেন, ‘আমি আমার নাম রৌশন করতে টাকা দিয়ে কতগুলো সান্ডা সান্ডা পান্ডা লোক রাখি, তারা অনুষ্ঠানে আসা গেস্টদের জিজ্ঞেস করেন যে, তারা কারা!’ 

প্রসূনের কাছে প্রশ্ন রেখে পরীমণি বলেন, “আচ্ছা আপু, সত্যিই কি তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছোট ফিল করানোর জন্য তোমাকে আমার একটা স্পেশাল ইভেন্টে ইনভাইট করব? কখনোই না বোন। তুমি নিজেও জানো আমি তোমাকে কতখানি পছন্দ করি। আমাদের কখনো দেখা হয়নি। তোমার একটা টিভি ইন্টারভিউ দেখে মুগ্ধ হয়ে আমি সাংবাদিক ইমু ভাইয়ের কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার নিয়ে তোমাকে কল করেছিলাম। সেদিন কত কথা হলো আমাদের! তোমার মনে আছে, আমি তোমাকে প্রথম কী বলেছিলাম!” 

“বলেছিলাম, তুমি একজন পিওর সোল। সত্যিকারের একজন খাঁটি মানুষ তুমি। তোমার বাচ্চাদের নিয়ে তোমার এই জার্নি সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে। তুমি একটা ইন্সপারেশন। তোমার খারাপ লেগেছে তুমি আমাকে একটা টেক্সট তো করতে পারতা আপু!” বলেন পরীমণি।

অনুষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপারে পরীমণি বলেন, “যাইহোক, আমার ওই অনুষ্ঠানে আমার হায়ার করা কোনো মানুষ ছিল না; যারা ছিলেন তারা ওই প্রতিষ্ঠানের ম‍্যানেজমেন্ট থেকে ছিলেন। তারা কাউকে অপমান বা অসম্মান করার জন্য অ‍্যাপয়েন ছিলেন না। তারা আমি এবং আমার সমস্ত গেস্টদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতেই গেটে ছিলেন। ভাবুন তো, ওনারা গেটে এই সিকিউরিটি না দিলে ওই জায়গায় কী জনসাধারণের ভীড় ঠেকানো যেত? না কি এত সুন্দর শৃঙ্খল পরিবেশে পুরো অনুষ্ঠানটা শেষ করতে পারতাম! তারা কেবল তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।”

দুঃখ প্রকাশ করে পরীমণি বলেন, “আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, যারা ওই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থানে কত বড় মানুষ। তারা কিন্তু কেউ ছোট ফিল করেননি। আপনি জানেন না হয়তো তাহলে, এই দেশের প্রচুর মানুষ এখনো আমার নাম জিজ্ঞেস করেন। এই তো সেদিন সিজেএফবির অনুষ্ঠানে আমাকে ইউরোর চেয়ারম্যান বললেন কি নাম তোমার? আমি তাতে মোটেও অবাক হইনি। বরং আমার ভালো লাগে আমার নাম বলতে। আমি পরীমণি। আমি খুবই দুঃখিত আপনার কাছে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কত টাকা আয় করেছে রাশমিকার নতুন সিনেমা?
  • নাটোরে যৌথবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ২০
  • জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান
  • মসজিদে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটক ১
  • ‘মেরিনার কাজে প্রকৃত শিল্পীর অভিব্যক্তি দেখা যায়’
  • ভারতের নির্বাচনে ব্রাজিলের মডেল কীভাবে ‘২২ বার ভোট’ দিলেন
  • জাহানারার পাশে বাংলাদেশ, কিন্তু…
  • গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে লেমুর চুরির ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার
  • আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক
  • প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ