রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকায় নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের শাস্তিপ্রাপ্ত নেতা-কর্মী ও অনেক সাবেক শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার রাতে রাকসুর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভোটার তালিকা প্রকাশিত হলে বিষয়টি সামনে আসে।

গত ১২ ডিসেম্বর বিভিন্ন সময়ে র‍্যাগিং, ছাত্র আন্দোলনে হামলা, সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৩৩ জনকে নানা মেয়াদে শাস্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে রাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় স্থায়ী বহিষ্কৃত হওয়া ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ শাস্তিপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজনের নাম এসেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর২৮ জুলাই ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায়কে মাদার বখ্শ হলের খসড়া ভোটার তালিকার ১৪৬ নম্বর সিরিয়ালে ও মাদার বখ্শ হল ছাত্রলীগের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ মিশকাত হাসানের নাম হলের ৪৪৭ নম্বর সিরিয়ালে দেখা গেছে। তবে তাঁদের দুজনকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের তিন নেতার নামও খসড়া ভোটার তালিকায় এসেছে। বিজয়-২৪ (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ৩৮১ নম্বর সিরিয়ালে, নবাব আবদুল লতিফ হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা ১৮৫ নম্বর ও ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহ আত তাসরিফের নাম শাহ মখদুম হলের ৩৫৩ নম্বর সিরিয়ালে এসেছে। এ ছাড়া এক বছরের শাস্তিপ্রাপ্ত আলফি শারিন আরিয়ানার নাম রোকেয়া হলের ৫৭৯ নম্বর সিরিয়ালে আছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাস ছেড়ে দেওয়া অনেক ছাত্রলীগ নেতার নাম খসড়া ভোটার তালিকায় এসেছে।

গত ১২ নভেম্বর স্নাতকোত্তরের ফলাফল প্রকাশিত হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়া মেশকাত চৌধুরীর। তবে প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ২২৪ নম্বর ভোটার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই আমার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। ভোটার তালিকায় নাম থাকার কথা না। যেহেতু অভিযোগ করার সময় আছে, তাই সমাধান করা হবে আশা করছি।’ এ ছাড়া খসড়া তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত শতাধিক সাবেক শিক্ষার্থীর নাম এসেছে।

রাকসুর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বেআইনি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে একাডেমিক প্রোগ্রাম থেকে স্থগিত করা হয়েছে এমন শিক্ষার্থীরা সদস্যপদ লাভের যোগ্য হবেন না।’

এদিকে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অনেক শিক্ষার্থী বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ইনস্টিটিউটের পঞ্চম থেকে অষ্টম ব্যাচের যাঁরা হলে সিট বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁরা ব্যতীত অন্য শিক্ষার্থীদের নাম আসেনি।

আরও পড়ুনরাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি প্রকাশ, প্রার্থী হলে করাতে হবে ডোপ টেস্ট৩১ জুলাই ২০২৫

এ বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর নির্বাচন কমিশন আমাকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠাতে বলে। আমি তালিকা প্রস্তুত করে নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠিয়েছি।’

সার্বিক বিষয়ে রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের এই তালিকাগুলো হল প্রশাসন, রেজিস্ট্রার দপ্তর এবং আইসিটি সেন্টার থেকে দিয়েছে। এখন রাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যাঁরা ভোটার হতে পারবেন না, তাঁদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দেব। কোনো অছাত্র বা বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীকে ভোটার তালিকায় রাখা হবে না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগেই আমরা এটি সংস্কার করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ র খসড়

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লার সেই বিএনপিকর্মী ইব্রাহিম মারা গেছেন

ফতুল্লার বিএনপি কর্মী ইব্রাহিম (৫২) মারা গেছেন। সে ফতুল্লা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ছিলেন। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীনবস্থায় মারা যান।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে হাজিগঞ্জ জামে মসজিদে নিহতের নামাজের জানাজা শেষে পাঠানটুলি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

নিহত ইব্রাহিম ফতুল্লা থানার ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড হাজীগঞ্জের আব্দুল জলিলের পুত্র। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক।

জানা যায়,২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার পল্টনে বিএনপির ডাকা মহা সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি ও যুবদলের ব্যানারে সে অংশগ্রহণ করে।

সমাবেশের শেষের দিকে মুল মঞ্চের পেছনের দিকে পুলিশের সাথে বিএনপির নেতা,কর্মীও সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। সে সময় পুলিশ বিএনপি নেতা- কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের কে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

ইব্রাহিম পুলিশের হামলায় মারাত্নক আহত হয়ে রাস্তায় পরে থাকে। সে সময় সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ঘটনার চারদিন পর তার সহোযোগিরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খুঁজে পায়। দীর্ঘদিন সহোযোগিরা নিজেদের অর্থায়নে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর আল বারাকা নামের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা করায়। 

পরবর্তীতে ইব্রাহিমকে নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন হলে বিএনপি নেতা ও শিল্পপতি আবু জাফর আহমেদ  বাবুল তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই রোববার রাতে তিনি মারা যান।

ফতুল্লা ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ পারভেজ মিয়া জানান,নিহত ইব্রাহিম ২০২৩ সালে ২৮ অক্টোবর  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ঘোষিত পল্টন পার্টি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপি ও  ইউনিয়ন যুবদলের সাথে ঢাকায় গিয়েছিলেন । 

সমাবেশ চলাকালে ফতুল্লা ইউনিয়ন ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রুহুল আমিন টিপু  ও নিহত ইব্রাহিম এবং তিনি সহ আরো নেতা-কর্মীরা পল্টন পার্টি অফিস সংলগ্ন  চায়না টাওয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।  হঠাৎ পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়। এতে করে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে  পরে।

অতর্কিত হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার  পর  প্রায় চার দিন পর  পত্রিকার নিউজে দেখতে পায় ইব্রাহিম নামে একজন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সেই সংবাদের পর  তার পরিবারের লোকজন  এবং ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রওশন আলী ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নেওয়ার পরে তারা নিশ্চিত হন যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে থাকা চিকিৎসারতি হচ্ছে তাদের নিখোঁজ  ইব্রাহিম।

ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসা শেষ করে তাকে বাসায় আনা হয়। বাসায় আনার পরে উনি আবার অসুস্থ হয়ে পরে। ফলে ৮ নং ওয়ার্ডের সকল নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় পুনরায় তাকে মদনপুর আল বারাকা হসপিটালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় তিন মাস চিকিৎসা  শেষে তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে তিনি আবারও অসুস্থ হয়ে পরেন। 

এমতাবস্থায় নাসিক ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক রিপন তাকে দেখতে আসলে স্থানীয় গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রকাশ পায়। প্রকাশিত সংবাদের পর বিএনপি নেতা শিল্পপতি  প্রাইম বাবুল ভাই তার চিকিৎসার দ্ধায়িত্ব নেন। 

বাবুল ভাই নিজে এসে তার দাত্ব নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য পিজি হাসপাতালে ভর্তি করান। দীর্ঘদিন চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমান ১১ টা ৪০ মিনিটের সময় তিনি ইন্তেকাল করেন।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ