বাজারে সরবরাহ ও উৎপাদন কম থাকার কারণে বেড়েছে সবজি, পেঁয়াজ, ডিম ও মাছের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম বেড়েছে গড়ে ২০ থেকে ৪০ টাকা।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই তথ্য পাওয়া গেছে। 

আরো পড়ুন:

মাগুরায় ‘রেডি টু কুক ফিশ’ প্রযুক্তিতে সফল উদ্যোক্তা লিজা

কাপ্তাই হ্রদ: মৎস্য আহরণের প্রথম দিন রাজস্ব আয় ২০ লাখ টাকা

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি; যা শুক্রবার (৮ আগস্ট) থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। এই হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা।

গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের মুগরির ডিম বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এই হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির বাজার
বাজারে মিষ্টি কুমড়া ও পেঁপে বাদে ৬০ টাকার কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, দেশি শশা ১০০ টাকা, বেগুন ১০০ থেকে ১২০টাকা, করলা ১২০ টাকা, গাজর (এলসি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। 

অন্যান্য সবজির মধ্যে শুক্রবার প্রতিটি লাউ ৬০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ৬০, বরবটি ১০০ থেকে ১২০, ঢেঁড়শ ৮০, জালি কুমড়া ৬০, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৩০, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫, পটল ৬০, কাঁকরোল ৮০, কচুরমুখী ৬০ ও মুলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার
বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। চাষের পাঙাস কেজি ২০০ থেকে ২৫০, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৮০, মাঝারি সাইজের কৈ ২৮০ থেকে ৩০০, দেশি শিং ৭০০ থেকে ৭৫০, বড় সাইজের পাবদা ৫০০ থেকে ৬০০, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ এবং এক কেজি ওজনের ওপরে ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে।

বিক্রেতারা বলছেন, নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলেদের মাছ কম পাওয়া ও উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ার কারণে মাছের দাম বেড়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাস মাছের বাজারে দাম বেশি থাকতে পারে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য
খুচরা বাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। আলুর কেজি ২৫ থেকে ৩০, রসুন ২০০ থেকে ২২০, দেশি আদা ২৩০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

প্রতি কেজি ফার্মের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০, সোনালি ৩২০ থেকে ৩৫০, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ এবং খাসির মাংস ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
রাজধানীর রায়েরবাজারের কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আমান উল্লাহ রাইজিংবিডিকে ডটকমকে বলেন, “আজকে বাজারে সব কিছুর দাম বাড়তি। ডিম, মাছ, সবজি, পেঁয়াজ সব বাড়তি। যেদিকে যাই সেদিকেই দাম বেশি।”

“বাজারের হিসাব মিলাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে কম কম নিতে হচ্ছে। সরকারকে বলব, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে,” বলেন আমান উল্লাহ।

নিউ মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী হাসান মিয়া রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “হঠাৎ পেঁয়াজের দাম এক লাফে ২০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। এটা আমাদের জন্যও বিব্রতকর। ক্রেতাদের কথা শুনতে হয়। আমাদের তো কোনো হাত নেই। আমরা পাইকারি কিনে সামান্য লাভে ছেড়ে দেই।”

ঢাকা/রায়হান/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০ থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী

জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।

একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।

দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।

এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।

ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ