আলু উৎপাদন বাড়তেই কপাল পুড়ল কৃষকের
Published: 9th, August 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যদিও গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর খুচরায় আলুর দাম অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। আলুর দামের এমন দরপতনে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন আলু ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। হিমাগারমালিকেরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
আলু নিয়ে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের এই দুরবস্থার প্রধান কারণ বাড়তি উৎপাদন। গতবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা এবার উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। এর ফলে এ বছর চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়। ফলে দাম পড়ে যায়। কৃষি অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার দাম পড়ে গেছে। এবার দাম না পেয়ে বড় লোকসান হলে কৃষকেরা আগামী বছর আলুর উৎপাদন আবার কমিয়ে দেবেন। এটা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বড় ব্যর্থতা। কৃষকদের বড় অঙ্কের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য সহায়তা দিতে বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। তাই দাম পড়ে গেছে। আগের দুই বছর এমনটা হয়নি। তবে পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষিপণ্যের দাম কমে গেলে সরকার একটি নির্দিষ্ট দামে পণ্য কিনে নেয়। এভাবে মূল্য সহায়তা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করা যায়। এ ছাড়া আলু সংরক্ষণ খরচের অর্ধেক বহন করতে পারে সরকার। সবচেয়ে বড় কথা আলু প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও রপ্তানি না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই সঠিক চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কারণে এবার আলুতে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। বেসরকারি হিসাবে তা ১৭ টাকা। আর সেই আলু হিমাগার গেটে (পাইকারি) বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অথচ হিমাগার ভাড়ার সঙ্গে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয় যুক্ত করে প্রতি কেজিতে আলুতে কৃষকের খরচ প্রায় ২৫ টাকা। এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের ন্যূনতম লোকসান ১০ টাকার বেশি।
হিমাগারমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন। এর আগের বছর উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন। অর্থাৎ গত বছর বাজারে দাম বেশি থাকায় এবার উৎপাদন অনেক বেড়েছে। গত নভেম্বরে খুচরায় আলুর দাম সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় উঠেছিল।
দেশে আলুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাস্টডোম গ্রামের বাসিন্দা রাসেল রানা এবার সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলু পেয়েছেন ৬৩০ মণ। লাভের আশায় ৩২০ মণ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। তাতে এখন বড় লোকসানে তিনি।
রাসেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখার ভাড়া ৩৫০ টাকা। সেই সঙ্গে বস্তার দাম ৮৫ টাকা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ ১০০ টাকা যোগ হবে। সব মিলিয়ে এক বস্তা আলু হিমাগারে রাখার পর তার দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকার কিছু বেশি। কিন্তু এখন এক বস্তা আলু জাতভেদে হিমাগার থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এখন যাঁরা আলু বিক্রি করছেন, তাঁদের প্রতি বস্তায় (৬০ কেজি) লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
এবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) তথ্যমতে, এ বছর দেশের ৩৫৩টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টনের বেশি। যেখানে গত বছর সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টন। এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে মাত্র ১১ শতাংশ আলু বের হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে ৪১ শতাংশ আলু বের করেছিলেন কৃষকেরা। দাম না পেয়ে এবার হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না কৃষকেরা। তাই কোল্ডস্টোরেজের (হিমাগার) মালিকেরা হিমাগার গেটে আলুর সর্বনিম্ন দাম ২৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওএমএস কার্যক্রমে ৫৫ লাখ পরিবারে ১০ কেজি করে আলু প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। গত মাসে এসব দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সংগঠনটি। এ সময় সংগঠনটি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষক দাম না পেলে আমরাও ভাড়া পাব না। আট মাস আলু সংরক্ষণ করে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। হিমাগারশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না। আর মাত্র তিন মাস সময় আছে, সরকার উদ্যোগ না নিলে এ সময়ে ২০ লাখ টন আলু হিমাগার থেকে বের করা সম্ভব হবে না। আর দাম না পেয়ে চাষিরা বিমুখ হলে আমদানি করেও আলু পাওয়া যাবে না।’ কৃষকের পাশাপাশি আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এখন দিশাহারা বলে জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। তাই আলু সমস্যার সমাধানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশন ব্যবস্থায় আলু যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রি করতে হলে আলাদা অর্থ বরাদ্দ লাগবে। টিসিবির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে অর্থসচিব মো.
সম্প্রতি কৃষি উপদেষ্টাও গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে আলু বিক্রির কথা ভাবছে সরকার।
ওএমএস কার্যক্রমে আলু বিক্রির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওএমএস কার্যক্রমে চাল সরবরাহ করে থাকি। এখন আলু বিক্রি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলু কম দামে বিক্রি করলে দাম আরও কমে যেতে পারে। আর সরকার তো ওএমএস থেকে আলু কিনতে বাধ্য করতে পারবে না। তাতে আবার সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎপ দ ত হয় প রথম আল ক আল র দ ম ব যবস য় গত বছর র পর ম স রক ষ ল খ টন পর ম ণ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আলু উৎপাদন বাড়তেই কপাল পুড়ল কৃষকের
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। যদিও গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর খুচরায় আলুর দাম অর্ধেকের বেশি কমে গেছে। আলুর দামের এমন দরপতনে উৎপাদন খরচই উঠছে না কৃষকের। বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন আলু ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। হিমাগারমালিকেরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
আলু নিয়ে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের এই দুরবস্থার প্রধান কারণ বাড়তি উৎপাদন। গতবার বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা এবার উৎপাদন বাড়িয়ে দেন। এর ফলে এ বছর চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়। ফলে দাম পড়ে যায়। কৃষি অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় এবার দাম পড়ে গেছে। এবার দাম না পেয়ে বড় লোকসান হলে কৃষকেরা আগামী বছর আলুর উৎপাদন আবার কমিয়ে দেবেন। এটা উৎপাদন ব্যবস্থাপনার বড় ব্যর্থতা। কৃষকদের বড় অঙ্কের লোকসান থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে মূল্য সহায়তা দিতে বলছেন কৃষি অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এবার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। তাই দাম পড়ে গেছে। আগের দুই বছর এমনটা হয়নি। তবে পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষিপণ্যের দাম কমে গেলে সরকার একটি নির্দিষ্ট দামে পণ্য কিনে নেয়। এভাবে মূল্য সহায়তা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করা যায়। এ ছাড়া আলু সংরক্ষণ খরচের অর্ধেক বহন করতে পারে সরকার। সবচেয়ে বড় কথা আলু প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা ও রপ্তানি না বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই সঠিক চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে হবে। উৎপাদন ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কারণে এবার আলুতে বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা। বেসরকারি হিসাবে তা ১৭ টাকা। আর সেই আলু হিমাগার গেটে (পাইকারি) বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ টাকায়। অথচ হিমাগার ভাড়ার সঙ্গে পরিবহন ও শ্রমিক ব্যয় যুক্ত করে প্রতি কেজিতে আলুতে কৃষকের খরচ প্রায় ২৫ টাকা। এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি কেজি আলুতে কৃষকের ন্যূনতম লোকসান ১০ টাকার বেশি।
হিমাগারমালিকদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে আলুর সর্বোচ্চ বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টন। আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন। এর আগের বছর উৎপাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন। অর্থাৎ গত বছর বাজারে দাম বেশি থাকায় এবার উৎপাদন অনেক বেড়েছে। গত নভেম্বরে খুচরায় আলুর দাম সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় উঠেছিল।
দেশে আলুর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয় মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলায়। নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কাস্টডোম গ্রামের বাসিন্দা রাসেল রানা এবার সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলু পেয়েছেন ৬৩০ মণ। লাভের আশায় ৩২০ মণ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন। তাতে এখন বড় লোকসানে তিনি।
রাসেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বস্তা আলু হিমাগারে রাখার ভাড়া ৩৫০ টাকা। সেই সঙ্গে বস্তার দাম ৮৫ টাকা, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ ১০০ টাকা যোগ হবে। সব মিলিয়ে এক বস্তা আলু হিমাগারে রাখার পর তার দাম পড়েছে দেড় হাজার টাকার কিছু বেশি। কিন্তু এখন এক বস্তা আলু জাতভেদে হিমাগার থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এখন যাঁরা আলু বিক্রি করছেন, তাঁদের প্রতি বস্তায় (৬০ কেজি) লোকসান হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
এবার হিমাগারে আলু সংরক্ষণের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) তথ্যমতে, এ বছর দেশের ৩৫৩টি হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ৩৪ লাখ ৯০ হাজার টনের বেশি। যেখানে গত বছর সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ ছিল সাড়ে ২৪ লাখ টন। এখন পর্যন্ত হিমাগার থেকে মাত্র ১১ শতাংশ আলু বের হয়েছে। অথচ গত বছর একই সময়ে ৪১ শতাংশ আলু বের করেছিলেন কৃষকেরা। দাম না পেয়ে এবার হিমাগার থেকে আলু বের করছেন না কৃষকেরা। তাই কোল্ডস্টোরেজের (হিমাগার) মালিকেরা হিমাগার গেটে আলুর সর্বনিম্ন দাম ২৫ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ওএমএস কার্যক্রমে ৫৫ লাখ পরিবারে ১০ কেজি করে আলু প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। গত মাসে এসব দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় সংগঠনটি। এ সময় সংগঠনটি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কোল্ডস্টোরেজ বা হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কৃষক দাম না পেলে আমরাও ভাড়া পাব না। আট মাস আলু সংরক্ষণ করে আমাদের দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। হিমাগারশিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না। আর মাত্র তিন মাস সময় আছে, সরকার উদ্যোগ না নিলে এ সময়ে ২০ লাখ টন আলু হিমাগার থেকে বের করা সম্ভব হবে না। আর দাম না পেয়ে চাষিরা বিমুখ হলে আমদানি করেও আলু পাওয়া যাবে না।’ কৃষকের পাশাপাশি আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এখন দিশাহারা বলে জানান মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। তাই আলু সমস্যার সমাধানে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার রেশন ব্যবস্থায় আলু যুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে টিসিবির মাধ্যমে আলু বিক্রি করতে হলে আলাদা অর্থ বরাদ্দ লাগবে। টিসিবির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এই অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আলু বিক্রি নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসেনি।
সম্প্রতি কৃষি উপদেষ্টাও গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিতে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) মাধ্যমে আলু বিক্রির কথা ভাবছে সরকার।
ওএমএস কার্যক্রমে আলু বিক্রির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ওএমএস কার্যক্রমে চাল সরবরাহ করে থাকি। এখন আলু বিক্রি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আলু কম দামে বিক্রি করলে দাম আরও কমে যেতে পারে। আর সরকার তো ওএমএস থেকে আলু কিনতে বাধ্য করতে পারবে না। তাতে আবার সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি]