আলাউদ্দীন আলীর স্মরণে রফিকুজ্জামানের আক্ষেপ
Published: 9th, August 2025 GMT
‘ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়’, ‘এ জীবন তোমাকে দিলাম ও বন্ধু’, ‘আমার মতো এত সুখী’—বাংলা গানের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকা এসব গানের স্রষ্টা সুরকার আলাউদ্দীন আলী ও গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। একসঙ্গে তারা উপহার দিয়েছেন আরও অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান।
আজ (৯ আগস্ট) প্রখ্যাত সুরস্রষ্টা আলাউদ্দীন আলীর মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে গভীর ভালোবাসা ও আবেগে তাকে স্মরণ করেছেন গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “আলাউদ্দীন আলীকে নিয়ে লিখতে গেলে, দুটি আক্ষেপের কথা মনে আসে।”
প্রথম আক্ষেপের কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “ও শেষের দিকে প্রায়ই বলতো, ‘আপনার সঙ্গে যে কেন আরও ১০টা বছর আগে থেকে কাজ করা হলো না।’ আক্ষেপটা আমারও হতো।”
এরপর আরও গভীর বেদনাভরা প্রশ্ন ছুড়ে দেন এই গীতিকবি। তিনি লিখেন, “ওর কি চলে যাবার এতই তাড়া ছিল? এতই?”
বাংলা গানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করা এই কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা ২০২০ সালের ৯ আগস্ট না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। ৬৮ বছরের জীবনে তিনি চলচ্চিত্র থেকে অডিও অ্যালবাম— সব ক্ষেত্রেই উপহার দিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী গান।
এদিকে, বাবার মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার সুর করা পাঁচটি গান নতুন করে সংগীতায়োজনে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছেন কন্যা সংগীতশিল্পী আলিফ আলাউদ্দীন ও তার স্বামী ব্যান্ড তারকা কাজী ফয়সাল আহমেদ। গানগুলো গেয়েছেন মাইলসের হামিন আহমেদ, ওয়ারফেজের পলাশ, এলিটা করিম, পুষ্পিতা এবং ব্যান্ড পেন্টাগনের সদস্যরা। আজ থেকেই গানগুলো ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শোনা যাবে।
চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য আলাউদ্দীন আলী আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতবার সুরকার এবং একবার গীতিকার হিসেবে।
ঢাকা/রাহাত//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট