নদী খননে বাসিন্দাদের কেউ দিয়েছেন ৫০০, কেউ ১০০ টাকা
Published: 10th, August 2025 GMT
কোথাও পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদী। কোথাও অবৈধ বাঁধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ। এমন অবস্থা লক্ষ্মীপুরের ভুলুয়া নদীর। প্রায় ২০ বছর ধরে অনেকটা মৃতপ্রায় এ নদীর খনন চলছে স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থায়নে। বাসিন্দাদের কেউ ১০০, কেউ আবার ৫০০ টাকা করে দিয়েছেন নদীটির খননে।
গত ২৪ জুলাই ভুলুয়া নদীর বাঁধ অপসারণ ও খনন শুরু হয়। রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের আজাদনগর স্টিল ব্রিজ এলাকা থেকে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে নদী খননের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে সেখান থেকে কোডেক বাজার পর্যন্ত চার কিলোমিটার নদী খননের কাজ চলছে। নদীর এ অংশে সবচেয়ে বেশি পলি জমে রয়েছে এবং বাঁধ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার পর্যন্ত নদী খনন হয়েছে দুই কিলোমিটারের মতো। পর্যায়ক্রমে ৭৬ কিলোমিটার ভুলুয়া নদীর পুরোটা খননের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
খনন কাজের যাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন, তাঁদের একজন কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল্লাহ খালেদ। তিনি বলেন, ‘শুধু অভিযোগ করে বসে না থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজেরাই কাজ শুরু করব। এলাকার প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। কেউ ১০০, কেউ ৫০০, কেউ ১০০০ টাকা করে নদী খননের জন্য দিচ্ছেন। কেউ আবার নদী খননের কাজে শ্রম দিচ্ছেন।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুলুয়া নদীর প্রস্থ স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ মিটার। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে।নুরুল্লাহ খালেদ আরও বলেন, ‘ভুলুয়াকে আমরা আবার জীবিত দেখতে চাই। প্রশাসনের সহায়তা পেলে আরও ভালোভাবে কাজটি এগিয়ে নিতে পারব। আমরা চাই, সরকার আমাদের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করুক। অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে দিয়ে নদীর গতি ফিরিয়ে দিক।’
দিনমজুরের কাজ করেন কমলনগরের চর কাদিরা গ্রামের মো.
চর মার্টিন এলাকার বাসিন্দা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীটি খননের উদ্যোগ না নিয়ে বসে থাকলে হয়তো একসময় এটিকে আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। তাই আমরা নিজেরাই খনন শুরু করেছি। এলাকার সবাই মিলে যতটুকু পারি করব।’
শুধু অভিযোগ করে বসে না থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি নিজেরাই কাজ শুরু করব। এলাকার প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। কেউ ১০০, কেউ ৫০০, কেউ ১০০০ টাকা করে নদী খননের জন্য দিচ্ছেন। কেউ আবার নদী খননের কাজে শ্রম দিচ্ছেন।নুরুল্লাহ খালেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, চর কাদিরা ইউনিয়ন পরিষদপানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভুলুয়া নদীর প্রস্থ স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ মিটার। এটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলা এবং নোয়াখালীর সদর ও সুবর্ণচর উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলা অংশে নদী রয়েছে ৪০ কিলোমিটার। নদীটি লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার ২০টি ইউনিয়নকে সংযুক্ত করেছে।
নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়া ও বাঁধ দেওয়ার কারণে এলাকায় পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এতে গত বছরের আগস্ট মাসে লক্ষ্মীপুরে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ-জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেঘনা নদী অনেক বেশি পলি বহন করে, সে পলিতে ভুলুয়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া অসংখ্য স্থানে দখল, স্থাপনা নির্মাণ তো আছেই। যার কারণে আমরা গত বছর লক্ষ্মীপুরে জলাবদ্ধতা দেখেছি। ভুলুয়া নদীর দখল ও জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে কার্যক্রম শুরু করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘নদী খননে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা চেষ্টা করব প্রশাসনিক সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোগটিকে আরও কার্যকর ও টেকসই করতে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র র খনন র ক জ ক উ ১০০ এল ক র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট