মৌলভীবাজারের রাজনগরে ইউপি চেয়ারম্যান হত্যার এক বছর পার হলেও আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর। পুনরায় হামলা আর লুটপাটের ভয়ে উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের হাওর পারের মধুরবাজার এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

এই বাজারের অনেক ব্যবসায়ী এরইমধ্যে ব্যবসা ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে পেশা বদলেছেন। বিপাকে পড়ে দিন মজুরীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন এই বাজারের বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

স্থানীয়রা জানান, কাওয়াদীঘি হাওর জনপদের মধুরবাজার ৭০ দশকে শুরু হয়। শতাধিক দোকান রয়েছে বাজারটিতে। এক বছর ধরে দোকান না খোলায় ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের পট পরিবর্তনের পর একটি দোকানের দখল নিয়ে ৭ আগস্ট দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সানা নিহত হন। সেই ঘটনার পরপরই বহু দোকান লুটপাট ও দখল হয়ে যায়। এরপর থেকে ভয়ে-আতঙ্কে কোন পক্ষই বাজারের দোকানপাট খুলছেন না। কোন মহলও বাজার খোলার বিষয়ে সমাধানে এগিয়ে আসছে না।

সারমপুর গ্রামের বাসিন্দা মারুত আহমদ বলেন, “বাজার না খোলায় সারমপুর, পৈতুরা, ধুলিজুড়া, রক্তা, নয়াগাঁও, ইসলামপুর ও ঢেউরবন এই সাত গ্রামের মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। আমরা এখন অনেক দূরের বাজার থেকে সদাইপাতি সংগ্রহ করি।”

নয়াগাঁও গ্রামের হীরা লাল বলেন, “আমার মুদির দোকান ছিল বাজারে। দোকানের আয় দিয়েই সংসার চলত। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি হত। প্রতিদিনই বাজার খোলা থাকতো। জমজমাট ছিল এই বাজার। কিন্তু এখন বেকার হয়ে পড়েছি। অনেক কষ্টে আছি। টানা টানির মাঝে চলছে সংসার।”

রক্তা গ্রামের মোশাহিদ মিয়া বলেন, “আমি এই বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। গলিতে বসে ব্যবসা করেছি। বেকার হওয়ায় ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে এখন দিনমজুরের কাজ করি।”

রক্তা গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি আব্দুল হাকিম বলেন, “আমার চাচা আবুল কাসেম বাজারে ভূমি দান করে ১৯৭০ সালে বাজার প্রতিষ্ঠিত করেন। মধু দাসের একটি দোকান ছিল বাজারে। মধুর দোকান ডেকে ডেকে মধুরবাজার প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারণে মধুরবাজার নামেই সবার কাছে পরিচিত এই বাজার। চেয়ারম্যান নিহত হওয়ার পর বাজারে লুটতরাজ শুরু হয়। এতে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন তারা বাজারে যেতে সাহস পাচ্ছেন না।”

পাঁচগাও ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো.

জুবেল আহমদ রাসেল বলেন, “আমরা দুই পক্ষের সাথে আলাপ করেছি। তারা বসতে রাজি নন। বাজার বন্ধ থাকায় কয়েকটি গ্রামের মানুষ কষ্টে আছেন। উভয় পক্ষের লোকজন হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে আমাদের কাছে এলে আমরা শর্তসাপেক্ষে বাজার চালুর ব্যবস্থা করব।”

রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, “মধুরবাজার আমাদের ইজারা তালিকাভুক্ত নয়। তবুও যদি কোন মহল সমাধানের জন্য এগিয়ে আসে, প্রয়োজনে আমরা প্রশাসনিক সহযোগিতা দেব।”

ঢাকা/আজিজ/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এই ব জ র ব যবস য় এক বছর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল, আওয়ামী লীগের ২৪৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করার সময় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৪টি ককটেল ও ৭টি ব্যানার উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

আরো পড়ুন:

হিলিতে ছেলের লাঠির আঘাতে মায়ের মৃত্যু

নাসা গ্রুপের পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, জলকামান দিয়ে সরাল পুলিশ

তিনি বলেন, ‘‘তারা ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে ২৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ৫০ জনকে, সিটিটিসি ২৭ জনকে, তেজগাঁও বিভাগ ১০০ জনকে, রমনা বিভাগ ৫৫ জনকে, গুলশান বিভাগ ৫ জনকে, মিরপুর বিভাগ ৪ জনকে এবং উত্তরা বিভাগ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।”

নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ যোগানদাতা, আশ্রয়দাতা ও লোক সরবরাহকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।”

এদিন দুপুরে গুলিস্তান, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, আগারগাঁও ও পান্থপথ এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/মাকসুদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ