জাবিতে ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ ৬ দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 10th, August 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) রাজনৈতিক দলের হল কমিটি বাতিল এবং আবাসিক হলের অভ্যন্তরে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ হল এবং ২১ নম্বর হল থেকে শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করে অন্যান্য হলগুলো প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, “অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন; হল পলিটিক্সের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন; গেস্টরুমের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও; আমার হলে রাজনীতি, চলবে না চলবে না; ওয়ান টু থ্রি ফোর, হল পলিটিক্স নো মোর; গেস্টরুমের আগমন, রুখে দাও দিতে হবে; হলে হলে খবর দে, হল পলিটিক্স এর কবর দে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, “আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখেছি হল পলিটিক্সের মাধ্যমে ছাত্রলীগ কীভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছিল। আমরা চাই না, নতুন করে আবার সেই পুরোনো কালচার ফিরে আসুক। হলগুলোতে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং অনতিবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলের ঘোষিত হল কমিটিগুলো বাতিল করতে হবে।”
শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো—
১.
২. হলে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষার্থী, গণরুম, গেস্ট রুম এবং র্যাগিং কালচারের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. অতি দ্রুত জাকসু তথা হল সংসদ কার্যকর করতে হবে এবং ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৪. রাজনৈতিক সংগঠন থেকে প্রাপ্ত যেকোনো উপহার সামগ্রী গ্রহণ করে সেটা হল প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় স্থাপন করতে হবে।
৫. হলের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে অছাত্র বা বহিরাগতদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করা হবে না এবং সে অনুযায়ী হল প্রশাসন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
৬. হলের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছাত্রদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “উপাচার্য হিসাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। আমি শতভাগ একমত যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গণরুম, গেস্টরুম কালচার ফিরে আসুক সেটা কখনই চাই না।”
তিনি আরো বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো লিখিত আকারে পেশ করার কথা বলেছি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং হল প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত দিতে পারবো বলে আশা করি।”
ঢাকা/আহসান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র র জন ত উপ চ র য অ য কশন
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট