উজান থেকে নেমে আসা পানি ও ভারী বর্ষণে করতোয়া নদীর পানি বেড়েছে। নদীর তীর উপচে পানি ঢুকে পড়ছে বসতবাড়িতে। এ চিত্র বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের দুটি মহল্লা ও গাড়িদহ ইউনিয়নের ছোট ফুলবাড়ী গ্রামের।

পানিবন্দী হয়ে অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। অধিকাংশ পরিবারই নিম্ন আয়ের। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই নদীর পানি বাড়তে থাকে। এতে গাড়িদহ ইউনিয়নের একটি গ্রাম ও পৌর শহরের দুটি মহল্লায় পানিবন্দী অন্তত ১০০ পরিবার।

আজ রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের করতোয়া নদীতীরবর্তী ছোট ফুলবাড়ী গ্রাম ও শেরপুর পৌর শহরের উত্তর সাহাপাড়া ও পূর্ব ঘোষপাড়া মহল্লা পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দী লোকজন জানান, অনেকের বাড়িতে গতকাল রাত থেকে ‌পানি ঢুকে পড়েছে। আজ দুপুরে শেরপুর সরকারি ডি জে হাইস্কুলে গেলে দেখা যায়, ১২টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের শেরপুর পানি উন্নয়ন শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী নিবারণ চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ভারী বর্ষণের কারণেই করতোয়া নদীতে পানি বেড়েছে।

শেরপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুপুরের পর থেকে এই নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। উজান থেকে নেমে আসছে পানি। নদী উপচে এই পানি ঢুকে পড়ছে নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন বসতবাড়িতে।

পূর্ব ঘোষপাড়ার সুজন মিয়া ও আবদুল মান্নান বলেন, বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। আজ সকালে তাঁদের গ্রামের অন্তত ১২টি পরিবার বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।

গাড়িদহ ইউনিয়নের ছোট ফুলবাড়ী গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে অনেক উঁচুতে তাঁদের বাড়ি। নদীর পানি উপচে সেই বাড়িতেও ঢুকেছে। তাঁরা পরিবারের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান প্রথম আলোকে বলেন, শেরপুরে পানি ঢুকে অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়েছে। দ্রুত একটি তালিকা প্রস্তুত করে পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ন বন দ নদ র প ন পর ব র করত য

এছাড়াও পড়ুন:

‘চোখের সামনে বসতবাড়ি ভাইঙ্গা নিল, পোলাপান লইয়া কই যামু’

চার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে এক রাতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হন শেরপুর সদর উপজেলার গৃহিণী নাজমা বেগম (৪৬)। চোখের সামনে নিজেদের শেষ আশ্রয়স্থলটি নদীতে বিলীন হতে দেখেন। এই অবস্থায় কোথায় যাবেন, কী করবেন—কিছুই বুঝতে পারছেন না। এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাগলঘর গ্রামের এই বাসিন্দা বলেন, ‘চোখের সামনে বসতবাড়ি ভাইঙ্গা নিল (ব্রহ্মপুত্র নদ), পোলাপান লইয়া কই যামু?’

আপাতত দিনমজুর স্বামী আবদুল্লাহ ও সন্তানদের নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন নাজমা। তবে ভবিষ্যতে কোথায় যাবেন, এই ভেবে চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন। ব্রহ্মপুত্র নদে বসতভিটা হারানোর এই কষ্ট কিংবা অসহায়ত্ব শুধু নাজমা বেগমের একার নয়, চরপক্ষীমারি ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাগলঘর গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের একই দুর্দশা। পরিবারগুলোর অভিযোগ, সরকারি উদ্যোগে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তারা।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা যায়, চরপক্ষীমারি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দক্ষিণ ভাগলঘর গ্রামের একাংশে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। গ্রামটির প্রায় ৫০০ মিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যেই অনেকের বসতভিটা নদে পুরোপুরিভাবে বিলীন হয়ে গেছে। আবার কোথাও নদের পাড় ঘেঁষে থাকা শূন্য ভিটায় উঁকি দিচ্ছে বাঁশের খুঁটি। এগুলো এখন সেই দুঃসহ বাস্তবতার সাক্ষী যেন। অনেকে তড়িঘড়ি নিজেদের ঘর থেকে আসবাব সরিয়ে কোনোরকমে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে রেখেছেন।

ব্রহ্মপুত্রের তীর থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে আছে ভাগলঘর দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ ও সামাজিক কবরস্থান। ভাঙন রোধ করা না গেলে যেকোনো সময় এগুলো নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার জন্য বালু ভরার কাজ চলতে দেখা যায়।

নদের ভাঙনকবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ভাগলঘর গ্রামে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘চোখের সামনে বসতবাড়ি ভাইঙ্গা নিল, পোলাপান লইয়া কই যামু’
  • মানিকগঞ্জে নিজ বসতঘর থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার