বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক থেকে নায়ক হয়ে ওঠা কিংবদন্তি অভিনেতা ও প্রযোজক জসীমের আজ (১৪ আগস্ট) ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট জন্ম নেওয়া এই তারকা মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালের ৮ অক্টোবর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। মৃত্যুর দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও ভক্তদের মনে তার জনপ্রিয়তা অমলিন।

জসীমের ছোট ছেলে, সংগীতশিল্পী এ কে রাহুল জানান, জসীমের জন্মদিন পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে। রাহুল বলেন, “বাবার জন্মদিন-মৃত্যুদিন নিয়ে আমরা পাবলিকলি কিছু বলি না, পরিবারেই তাকে স্মরণ করি। এবারও তাই করছি।”

বাবার সঙ্গে খুব বেশি স্মৃতি মনে না পড়লেও শৈশবের কিছু মুহূর্ত রাহুলের কাছে আজও জীবন্ত। তিনি বলেন, “কাজ শেষে বাবার ফেরার সময় হলে জামা নিয়ে বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকতাম। বাবাকে ভীষণ মিস করি।”

বাবাকে শেষবার দেখার কষ্টের স্মৃতিও রাহুলের মনে গেঁথে আছে। তিনি বলেন, “ড্রয়িংরুমে বাবাকে শেষবার শুইয়ে রাখল। চোখ বন্ধ করলে এখনো সে দৃশ্য দেখি।”

জসীমের তিন ছেলে এ কে সামী, এ কে রাতুল এবং এ কে রাহুল। তারা গানের জগতে যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৮ জুলাই মেজ ছেলে এ কে রাতুল (রক ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর ভোকালিস্ট, বেজিস্ট ও শব্দ প্রকৌশলী) মারা যান। তাকে বাবার কবরেই দাফন করা হয়।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন জসীম। এফডিসিতে তার নামে রয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসীম ফ্লোর’।

জসীম অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমার মধ্যে রয়েছে— ‘রংবাজ’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘মহেশখালীর বাঁকে’, ‘বারুদ’, ‘বাহাদুর’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘গাদ্দার’, ‘দুই রংবাজ’ প্রভৃতি। 

ঢাকা/রাহাত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ