গত মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকে দেখা গেছে, মাসওয়ারি হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু যেসব পণ্যের দাম শুল্কনির্ভর, যেমন কফি বিন ও বিশেষ ধরনের চা ও মসলার মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে। ফলে এসব পণ্য বিক্রি করা ছোট ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন।

মার্কিন শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে কফির দাম আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এক পাউন্ড গুঁড়া কফির গড় খুচরা মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪১ ডলার। সামগ্রিকভাবে জুন থেকে জুলাই পর্যন্ত খাদ্যের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ।

নেব্রাস্কার লিংকনের বেথানির কফি শপের মালিক জেসিকা সাইমন্স বলেন, জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত কফির দাম ১৮ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কফির দাম ৩ শতাংশ বাড়তি রেখেছি, কেননা, আমরা নতুন দামসংবলিত মেনু ছাপার জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু দাম এত দ্রুত বদলে যাচ্ছে যে প্রতিবার দাম বাড়লেই মেনু ছাপানো সম্ভব নয়।’ সাইমন্সের দোকানে শুধু কফি নয়, অ্যাভোকাডো ও টমেটোর দামও বেড়েছে।

সাইমন্স বলেন, ‘আমাদের একটি রেস্তোরাঁও আছে, ২৪ জন কর্মী সেখানে কাজও করেন। এই পরিস্থিতিতে দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই। আমাদের লাভের পরিমাণ খুবই কম, শুল্কের বাড়তি খরচে হিমশিম খাচ্ছে ছোট ব্যবসা।’

ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট খাদ্য আমদানির প্রায় ৭৪ শতাংশ (মূল্য ১৬৩ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলার) এখন শুল্কের আওতায়। যাঁরা কফি বা নারকেলের পানির মতো দেশীয়ভাবে উৎপাদনযোগ্য নয়, এমন প্রাকৃতিক সম্পদ আমদানি করেন, তাঁদের পক্ষে শুল্ক এড়ানো সম্ভব নয়, কেননা, এসব পণ্যের উৎপাদন দেশে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।

আবার সরবরাহ অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগও সীমিত। ফলে যে দেশ থেকেই আমদানি করা হোক না কেন, তাদের উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সরকার কিছু ক্ষেত্রে এই বাস্তবতা স্বীকার করে ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু এসব বিষয় এখনো প্রক্রিয়াধীন।

অঞ্জলিস কাপ-এর প্রতিষ্ঠাতা অঞ্জলি ভরগব বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান আয়ুর্বেদের প্রণালিতে উৎপাদিত হলুদ ও চায়ের মসলার প্যাকেজ তৈরি করে। তাদের প্রায় সব ক্যাফেইনভিত্তিক উপকরণ বিদেশ থেকে আসে। তাঁর মসলার উৎস ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। চা ও গোলমরিচ আসে ভারত থেকে, জাফরান আসে আফগানিস্তান থেকে; বিশেষ ধরনের টিনের প্যাকেজিং তৈরি হয় চীনে।

অঞ্জলি আরও বলেন, ভোক্তারা চা–পান বন্ধ করবেন না, তবে তাঁরা হয়তো নিম্নমানের পণ্য কিনবেন; যেসব দোকান এই শুল্কের ধাক্কা সহ্য করতে পারবে, তাদের কাছ থেকেই ভোক্তারা কিনবেন। এই পরিস্থিতিতে সততা ও স্বকীয়তা বজায় রাখা ছোট ব্র্যান্ডগুলো পুরোপুরি বাজার থেকে ছিটকে যেতে পারে।

ভারত থেকে আমদানি করা চায়ের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক অঞ্জলির উদ্বেগের বড় কারণ। হোল ফুডসের মতো খুচরা দোকানে দাম বাড়ানোর তেমন একটা বাড়ানোর সুযোগ নেই।

অঞ্জলি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, এই পদক্ষেপ ভারতের বিরুদ্ধে শাস্তি। কিন্তু তাঁর এই পদক্ষেপের মূল ভুক্তভোগী হবে মার্কিন ছোট ব্যবসা, কোম্পানি, তাদের কর্মী ও ভোক্তারা। চায়ের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক, তার ওপর আবার মসলা ও অন্যান্য উপকরণের শুল্ক, এমনিতে যে সামান্য মুনাফা হয়, এই পরিস্থিতিতে তা–ও বিনষ্ট হবে। বড় প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে এমনিতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

ভরগব জানান, তিনি চীনে তৈরি প্যাকেজিংয়ে কিছুটা ছাড় দিতে রাজি হয়েছেন, কিন্তু উপকরণের গুণমানে আপস করতে চান না। আরও বলেন, এই শুল্কের কারণে এখন সামনে দুটি বিকল্প—ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অথবা মান বজায় রাখা। অনেক ছোট ব্যবসার পক্ষেই তা অসম্ভব। তাঁর দোকানের চায়ের যে বৈশিষ্ট্য, সেই ধরনের চা–পাতা কেবল ভারত থেকেই আনা সম্ভব। বড় প্রতিযোগীদের মতো তাঁর পক্ষে মজুত করে রাখা সম্ভব নয়, বিশেষ করে যখন প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র এতটা অসম।

শুল্কের প্রভাব গৃহস্থালি পণ্যেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা আছে। কেপিএমজির ব্যবসা বিভাগের প্রধান হিদার রাইস জানান, ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল বিলের আওতায় এসএনএপি বা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রণীত খাদ্যসহায়তা কর্মসূচিতেও কাটছাঁট হচ্ছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে, সেই সঙ্গে উচ্চ শুল্কের প্রভাব তো আছেই। ফলে বিক্রেতারা ভালো কিছু দেখছেন না।

হিদার আরও বলেন, ‘প্রায় ৯ শতাংশ ব্যয়ের উৎস এসএনএপি সুবিধাভোগীরা। তাঁর বিশ্বাস, কোন উৎস থেকে পণ্য আনা হয়, তার ওপর ভিত্তি করে দোকানের তাকের পণ্যসম্ভারে পরিবর্তন আসবে। আমাদের ফসল ও রপ্তানির কারণে আমরা সারা বছর ব্লুবেরি পেতে পারি। কিন্তু শুল্কের কারণে হয়তো আমরা সারা বছর ব্লুবেরি পাব না। কিছু পণ্যের সরবরাহ বদলে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত নয়, এমন অন্যান্য শুল্কযুক্ত ফল ও ডালের মধ্যে রয়েছে কলা ও কিউই।’

ভরগব বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ সবার জন্য ক্ষতিকর হবে। কফি শপগুলো ইতিমধ্যেই টিকে থাকার লড়াই করছে। দোকানের বাতি জ্বালিয়ে রাখতে মুনাফার হার ধরে রাখতে হচ্ছে। যখন মানসম্পন্ন পণ্য ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যায়, তখন পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারের বিচিত্র ও স্বকীয় ব্যবসাগুলো ধ্বংস হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ছ ট ব যবস আরও বল ন র ওপর উৎপ দ আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

পর্দায় শেখ হাসিনা হলেন সীমা, টিজারে উঠে এল ভারত-বাংলাদেশের টানাপোড়েন

‘যতবার ভারত ও বাংলাদেশ কাছাকাছি এসেছে, ততবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে উগ্র সন্ত্রাস।’ এভাবেই শুরু হয় টিজার। ১ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের টিজারে উঠে এসেছে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের নানা দিক। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ‘রক্তবীজ ২’ সিনেমাটি। গতকাল রাতে মুক্তির পর থেকেই আলোচনায় নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখার্জির সিনেমাটির টিজার।

ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা জানিয়েছে, এই ছবিতে মূলত বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে চলা দ্বন্দ্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সীমা বিশ্বাসকে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে, ভিক্টর ব্যানার্জিকে দেখা যাবে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির চরিত্রে।

‘রক্তবীজ ২’ সিনেমার দৃশ্য। ভিডিও থেকে

সম্পর্কিত নিবন্ধ