ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের বিষ্ণুপুর জেলার নাম্বোল এলাকায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘দুষ্কৃতকারীদের’ হামলায় আসাম রাইফেলসের (এআর) দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন।

২০২৩ সালের মে মাসে কুকি-জো এবং মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যে জাতিগত সংঘাত শুরুর পর মণিপুরে মোতায়েন কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এটি প্রথম হামলা। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর সফর করার ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যে বড় ধরনের এ হামলার ঘটনা ঘটল।

স্থানীয় নিরাপত্তাকর্মীরা জানান, দুষ্কৃতকারীরা আসাম রাইফেলসের নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়িতে হামলা চালায়। গাড়িতে এআরের ১২ সদস্য থাকলে দুষ্কৃতকারীদের অতর্কিত হামলার কারণে তাঁরা পাল্টা হামলা চালাতে পারেননি। ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তিন বা চারজন দুষ্কৃতকারী এই হামলা চালায় এবং তারপর একটি পিকআপ ভ্যানে দ্রুত তারা পালিয়ে যায়।

আসাম রাইফেলস আধা সামরিক বাহিনী হলেও এর সামরিক দিকটা পুরোপুরি দেখে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর ব্যবস্থাপনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের হাতে। প্রধানত ভারতের বিদ্রোহী ও জঙ্গি অধ্যুষিত সহিংসতাপূর্ণ এলাকায় আসাম রাইফেলসকে মোতায়েন করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই আক্রমণ তাই কোনো সাধারণ আক্রমণের পর্যায়ে পড়ে না।

নিহত এআর কর্মীদের নাম নায়েব সুবেদার শ্যাম গুরুং এবং রাইফেলম্যান রঞ্জিত সিং কাশ্যপ। শুক্রবারের হামলা হয়েছে নামবোল লেইকাই নামে একটি অঞ্চলে। সেখানে থেকে ২০২৩ সালে বিশেষ সন্ত্রাস দমন আইন প্রত্যাহার করা হয়। ওই অঞ্চলের চারটি থানা সংঘাতমুক্ত বলে সে সময় ঘোষণা করা হয়েছিল।

এখন পর্যন্ত কোনো সন্ত্রাসী বা বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে স্থানীয় প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মি নামে একটি পুরোনো বিচ্ছিন্নতাকামী জঙ্গি সংগঠনকে সন্দেহ করা হচ্ছে। পিপলস লিবারেশন আর্মি ১৯৭৮ সালে গঠিত একটি সংগঠন, যারা ভারত থেকে বেরিয়ে ভিন্ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চায়।

এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী এখন প্রধানত মিয়ানমার থেকে তাদের কার্যক্রম চালায়। তবে ১৯৭৯ সালে নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া সংগঠনটি এখন আর তেমন সক্রিয় নয় বলেই গোয়েন্দাদের ধারণা। ভারতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে বিশেষভাবে উদ্বেগের বিষয় হলো, শুক্রবার রাতে জাতীয় মহাসড়ক ২-এ এই অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এই রাস্তা দিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদি ১৩ সেপ্টেম্বর ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে চুড়াচাঁদপুর জেলার পার্বত্য অঞ্চলে গিয়েছিলেন।

দুষ্কৃতকারীদের ধরতে অঞ্চলজুড়ে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আসাম রাইফেলস। আহত নিরাপত্তা সদস্যদের ইম্ফলের সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হামলার শিকার ১২ সদস্য মণিপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কাজে যুক্ত ছিলেন বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মণিপুরের রাজ্যপাল অজয়কুমার ভাল্লা।

২০২৩ সালের মে মাসে সহিংসতা শুরুর পর জাতীয় মহাসড়ক–২ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন কয়েক আগে উপজাতি সমাজের প্রধান সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন কুকি-জো কাউন্সিল (কেজেডসি) মহাসড়ক আবার চালু করে দিতে ৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল।

তবে মোদির সফরের দুই দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর কেজেডসি চুক্তিটি প্রত্যাহার করে। তারা বলে, মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়কটি বন্ধ থাকবে।

কেজেডসির বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট, প্রধানমন্ত্রী মোদির সফরের কোনো প্রভাব মেইতেইদের সঙ্গে কুকি-জো গোষ্ঠীর মধ্যে চলা সংঘাতের ওপর পড়েনি। এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ২৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সফর র মণ প র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বেড়েছে

ভারতের সবচেয়ে ধনী মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির সম্পত্তি গত প্রায় আড়াই দশকে দেড় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ‘জি২০’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা গিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ব্যক্তির সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইন।

স্বতন্ত্র অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি জি২০ গোষ্ঠীর ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিটি অব ইনডিপেনডেন্ট এক্সপার্টস অন গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি’ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগ্লিট্‌জ়। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন জয়তী ঘোষ, উইনি ব্যানয়িমা, ইমরান ভালোদিয়াসহ অন্যেরা। তাদের প্রতিবেদনে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই দশকে (২০০০-২০২৪) বিশ্বে যত নতুন সম্পত্তি তৈরি হয়েছে, তার ৪১ শতাংশই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের কব্জায়।

কমিটির নেতৃত্বে থাকা স্টিগ্লিট্‌জ় এই বিশ্বব্যাপী বৈষম্য নিয়ে সতর্ক করে করে দিয়েছেন। তার মতে, এই বৈষম্য ‘জরুরি’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জলবায়ুগত দিক থেকে উদ্বেগজনক।

জি২০ গোষ্ঠীর ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই একই সময়ে চীনেও সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সম্পত্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য কখনো কাম্য নয়। এটি ঠেকানো যায় এবং রাজনৈতিক ভাবে এটিকে বদলানো যেতে পারে।”

এতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণ মন্থর হয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় প্রায় থেমে গিয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ। কোথাও কোথাও দারিদ্র বৃদ্ধি পেতেও শুরু করেছে। যে দেশগুলোতে আর্থিক বৈষম্য বেশি, সেখানে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে বেশি।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আর্চারিতে একুশের স্মৃতি ফেরানোর আশা
  • ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বেড়েছে