মোহামেডানের নতুন যাত্রায় নতুন জুটি
Published: 22nd, September 2025 GMT
ঘড়ির কাঁটা ১টা ছুঁই ছুঁই, ধানমন্ডি মাঠে মাথার ওপরে তেজ ছড়াচ্ছে দুপুরের সূর্য। টানা দুই ঘণ্টা অনুশীলনের ইতি টানলেন কোচ আলফাজ আহমেদ। মাঝমাঠ থেকে একের পর এক বল ফেলছিলেন উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফর মোজাফফরভ, লক্ষ্য ঘানার স্ট্রাইকার স্যামুয়েল বোয়াটেংকে দিয়ে গোল করানো। কোচ বারবার নির্দেশ দিচ্ছিলেন, কীভাবে গোল করতে হবে। দেখলেই বোঝা যায়, মোজাফফরভ আর বোয়াটেংয়ের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করতে চান তিনি।
কতটা সফল হবেন, তা দেখা যাবে এবারের প্রিমিয়ার লিগে। ২৭ সেপ্টেম্বর ফর্টিস এফসির বিপক্ষে মাঠে নামবে সাদা–কালোরা। ফর্টিস গত লিগের ষষ্ঠ দল, শুরুতেই তাদের বিপক্ষে কীভাবে ম্যাচ, তা নিয়ে গোলকধাঁধায় মোহামেডান শিবির।
বাফুফে বলছে, সফটওয়্যারের মাধ্যমে সূচি করা হয়েছে। সে যা–ই হোক, ২৩ বছরের খরা ভেঙে গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছিল মোহামেডান। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ চালুর পর এটাই তাদের প্রথম শিরোপা। মোহামেডানের এখন শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুনকিংস অ্যারেনায় খেলতে ‘অনিরাপদ’ বোধ করছে আবাহনী–মোহামেডান০৩ মে ২০২৫নতুন চ্যালেঞ্জে ৮৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী দলটির সারথি মোজাফফরভ ও বোয়াটেং। সবচেয়ে বড় ভরসার নাম মোজাফফরভ। দূরপাল্লার শট এবং নিখুঁত ফ্রি–কিকে গোল করে নিজেকে মেলে ধরেছেন ৩০ বছর বয়সী মিডফিল্ডার। উইং থেকে লম্বা পাসে দলকে খেলাতে পারদর্শী। ২০২২ থেকে ঘরের ছেলে হয়ে গেছেন মোহামেডানের। ২০২৩ সালে ৯ বছর পর মোহামেডানের ফেডারেশন কাপ জয় আর গত মে মাসে লিগ শিরোপা জয়ের পেছনে বড় অবদান তাঁর। অনুশীলন শেষে কাল দুপুরে বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও আমরা লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’
চাওয়া পূরণে মোজাফফরভ পাশে চান সাদা–কালোর সমর্থকদের, ‘মোহামেডানের সমর্থকেরা পাশে থাকলে আমরা অনেক কিছুই করতে পারব, এই বিশ্বাসটা রাখছি। দু–তিনটি ম্যাচ খেললে আমাদের দলের সমন্বয় আরও দৃঢ় হবে।’
অনুশীলনে কোচ আলফাজ আহমেদের সঙ্গে খেলোয়াড়রা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট