মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনের পুরোটা সময়ই কেটেছে মানুষের কল্যাণে। নারীশিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মেরও সাত বছর আগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী। এমন একজন মহীয়সী নারীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে আরও অনেক আগেই অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু সেটি আজও হয়নি। তবে অতীতে কেন হয়নি, সেটি না ভেবে এখনই ফয়জুন্নেছার জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এটি এখন সময়ের দাবি।

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর ১২২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন বক্তারা। কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলা এলাকায় ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর প্রতিষ্ঠা করা নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় মিলনায়তনে মঙ্গলবার সকালে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে নবাব ফয়জুন্নেছার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে র‍্যালি বের করা হয়। পরে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চবালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো.

আমিরুল কায়ছার। মুখ্য আলোচক ছিলেন সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব রওশন আরা বেগম। বক্তব্য দেন অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, গবেষক গোলাম ফারুক, নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (শিক্ষা ও আইসিটি) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে জন্মগ্রহণ করা মহীয়সী নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী শিক্ষার বিস্তারে যেসব কাজ করে গেছেন, ২০২৫ সালে এসেও সেসব কাজ করা অনেকটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। প্রজাহিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী আজীবন মানুষের কল্যাণ এবং শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে গেছেন। তাঁর আদর্শকে ধারণ করতে হবে শিক্ষার্থীদের।

মুখ্য আলোচক রওশন আরা বেগম বলেন, ‘আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’ তিনি বলেন, ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বিভিন্ন সম্পত্তি অনেক অগেই দখল হয়ে গেছে। বর্তমানে অনেক স্থানে জবরদখলের চেষ্টা চলছে। এগুলো রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে আমি নবাব ফয়জুন্নেছার জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা জন্য বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেছি। কিন্তু সেটি আজও বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও রাষ্ট্রেরই দরকার ছিল নারীশিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অনেক আগেই অন্তর্ভুক্ত করা। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই যেন নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

সভা শেষে নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমাদের অবস্থান থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হবে।’

প্রসঙ্গত, নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ১৮৩৪ সালে বর্তমান লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। প্রজাহিতৈষী ও শিক্ষানুরাগী এই জমিদার আজীবন মানুষের কল্যাণ এবং শিক্ষার বিস্তারে কাজ করে গেছেন। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী মৃত্যুবরণ করেন। পশ্চিমগাঁওয়ের নিজ বাড়ির পাশে চিরনিদ্রায় তিনি শায়িত আছেন। সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে তাঁকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। নবাব ফয়জুন্নেছা অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ধ র ন র জ বন ফয়জ ন ন ছ র প ঠ যবইয় সরক র র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্মের মর্মবাণী মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সকল ধর্মের মর্মবাণী মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম।  

রবিবার ( ২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশন কর্তৃক শুভ মহালয়া ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সকল ধর্মই আমাদের অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা যোগায়।  আমাদের আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। মানবসেবা ও দেশাত্মবোধের চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে।’’ 

শারদীয় দুর্গোৎসবকে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আবহমানকাল ধরে শারদীয় দুর্গাপূজা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়ে আসছে। এটি শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, বাংলাদেশের সকলের উৎসব। এ উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে মানুষে মানুষে নিবিড় বন্ধন রচিত হয়, সমাজের সকল মানবসৃষ্ট ভেদাভেদ, বৈষম্য  দূরীভূত হয় এবং সকলের মধ্যে সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরিত হয়।’’ 

দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন উপদেষ্টা এ সময় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব আনন্দমুখর পরিবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। একইসঙ্গে দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে যেন কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অপচেষ্টা চালাতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে  সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন। 

অনুষ্ঠানে গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজা ফাউন্ডেশনের  সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যান্য সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অকৃতকার্য ইবি উপাচার্য
  • রাকসু নির্বাচন উপলক্ষে দেওয়া ছুটি বাতিল
  • শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ফতুল্লায় প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত
  • দুর্গাপূজা উপলক্ষে কেনাকাটায় নগদের আকর্ষণীয় ক্যাশব্যাক
  • আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে গেল উপহারের ৫০০ কেজি সুগন্ধি চাল
  • দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে পাঠানো হলো ৫০০ কেজি চিনিগুঁড়া চাল
  • ধর্মের মর্মবাণী মানব কল্যাণ, শান্তি ও দেশপ্রেম: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
  • মহালয়া উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ, মন্দিরে ভক্তদের ভিড়