দলিতদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে: শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান
Published: 23rd, September 2025 GMT
দলিতদের দেশের নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এটি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ।
মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সংস্কার এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বাংলাদেশের দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন ভাবনা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এ কথাগুলো বলেন সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও নাগরিক উদ্যোগ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ঢাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না, এটি হতে পারে না। তাঁরা যেসব বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার, তার তালিকা তৈরি করতে হবে। আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সেই তালিকা দিয়ে প্রতিশ্রুতি নিতে হবে, যাতে তাঁদের অধিকার আদায় করা যায়।
সমাজে অচ্ছুত ধারণা এখনো বিদ্যমান উল্লেখ করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সভাপতি শিরীন পারভীন হক বলেন, ‘এমনটি আমাদের জন্য লজ্জাজনক। প্রতিদিন এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে।’
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ হয়নি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। ভিন্নমত হলে মব সৃষ্টি করা হচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে কমন ভয়েস (অভিন্ন প্রতিবাদ) তৈরি করতে হবে।’
দলিত জনগোষ্ঠীর মানুষের অনেকে এখনো সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আখতার বলেন, ‘এই বৈষম্য নিরসনে দক্ষতা উন্নয়ন, পেশার আধুনিকায়ন ও সঠিক পরিসংখ্যান জরুরি। সমস্যা আইডেন্টিটির (পরিচয়) নয়, মানসিকতার।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডিইআরএমের সভাপতি উত্তম কুমার ভক্ত। স্বাগত বক্তব্য দেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নাগরিক উদ্যোগের দলিত অধিকার প্রকল্পের ক্যাম্পেইন কো-অর্ডিনেটর আবদুল্লাহ আল ইসতিয়াক মাহমুদ।
দলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন সমস্যার বিষয় তুলে ধরেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণা লাল, বিডিইআরএমের আইনবিষয়ক সম্পাদক বাবুল রবিদাস প্রমুখ।
বিডিইআরএমের সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমারের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য লেখক ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, মাজহারুল ইসলাম, সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের (সিপিজে) উপনির্বাহী পরিচালক শাহরিয়ার সাদাত, কারিতাস-বাংলাদেশের প্রতিনিধি সঞ্জীব কুমার মন্ডল, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) উপপরিচালক (কর্মসূচি) রুহী নাজ, পিপলস্ হেলথ মুভমেন্ট (পিএইচএম) বাংলাদেশের সমন্বয়কারী আমিনুর রসুল বাবুল, নারীপক্ষের প্রতিনিধি হাসিনা বেগম প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনগ ষ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট