বাংলাদেশের নির্বিঘ্নে এলডিসি উত্তরণে ডব্লিউটিওর পূর্ণ সমর্থন কামনা প্রধান উপদেষ্টার
Published: 24th, September 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশ যাতে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে না পড়ে, সে জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পূর্ণ সমর্থন প্রয়োজন।
গতকাল মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক এনগোজি অকোনজো-ইওয়েলার সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অনেক দেশ বাণিজ্য সুবিধা হারানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশ যেন একই সমস্যার মুখে না পড়ে, সে জন্য ডব্লিউটিওর কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। তিনি আসন্ন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে অর্থবহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানান।
অকোনজো-ইওয়েলা বাংলাদেশের প্রতি পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। এ কাজে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের সক্রিয় অংশগ্রহণ চান। এখানে তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব প্রত্যাশা করছেন।
২০২৬ সালের শেষ দিকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকে বহু প্রতীক্ষিত ডব্লিউটিও সংস্কার ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েও আলোচনা হয়।
সংরক্ষণবাদ ও বিশ্বায়ন থেকে পশ্চাদপসরণের শঙ্কা বাড়লেও বৈশ্বিক বাণিজ্য এখনো স্থিতিশীল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন অকোনজো-ইওয়েলা। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় ৭৫ শতাংশ বাণিজ্য এখনো ডব্লিউটিওর নিয়মে পরিচালিত হচ্ছে।
মুহাম্মদ ইউনূসও সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববাণিজ্যের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশে কার্যকর নেতৃত্ব দিতে হলে ডব্লিউটিওকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এখন সময় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার। বাংলাদেশ অর্থবহ পরিবর্তনের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এলড স
এছাড়াও পড়ুন:
সবুজে মোড়া পান বরজ, হাসি নেই চাষিদের মুখে
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলায় এ বছর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার খট্টামাধবপাড়া ইউনিয়নের মাধবপাড়া গ্রামজুড়ে এখন সবুজে মোড়া পানের বরজ। তবে, এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে চাষিদের দীর্ঘশ্বাস। ভালো ফলন সত্ত্বেও বাজারে দাম কমে যাওয়ায় পান চাষিদের আনন্দ পরিণত হয়েছে হতাশায়।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে হাকিমপুরে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছ। উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫৪০ মেট্রিক টন পান। এ অঞ্চলের বহু পরিবার প্রজন্ম ধরে পানচাষের ওপর জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছেন।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে মরছে টমেটো গাছ, কৃষক দিশেহারা
কৃষি বিবর্তনের গল্প বলে যে জাদুঘর
বাংলার সংস্কৃতি, আতিথেয়তা ও সামাজিক আড্ডায় পান এক অপরিহার্য উপাদান। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা ভেবেছিলেন, এবার হয়তো দীর্ঘদিনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। বাজারে পানের দাম না থাকায় তাদের সব হিসাব-নিকাশ পানিতে ভেসে গেছে।
মাধবপাড়া গ্রামের পানচাষি মাইদুল শেখ বলেন, “এখন পান বিক্রি করে লাভ তো নেই, উল্টো খরচই উঠছে না। সার, কীটনাশক, সেচ সবকিছুর দামই বেশি। আগে ৫০ টাকায় যে পান বিক্রি হতো, এখন সেই পান ২৫ টাকায় দিতে হচ্ছে।”
পান চাষি তারিকুল ইসলাম বলেন, “১০০ পিস পান ২৫-৩০ টাকায় বেচতে হচ্ছে। গত বছর এই দামে অর্ধেক পানও পাওয়া যায়নি। খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছি।”
ইমরান হোসেন নামে অপর চাষি বলেন, “পানচাষ আমাদের বাপ-দাদার পেশা। ফলন খুব ভালো, কিন্তু পাইকাররা ইচ্ছামতো দাম বলেন। বিক্রি না করলে তো পচে যাবে, তাই কম দামেই দিয়ে দিতে হচ্ছে।”
সোহরাব আলী বলেন, “পানের এমন ফলন বহুদিন দেখিনি। এমন খারাপ দামও কখনো দেখিনি। পান রাখার জায়গা নেই, বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।”
দামের কারণে বরজে কাজ কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর শ্রমিকরাও। আগে প্রতিদিন কাজ মিললেও এখন অনেক বরজেই কাজ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, “চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ মৌসুমে পানের ফলন ভালো হলেও দামের বিষয়টি বাজারের চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর করে। কৃষকের ক্ষতি যাতে কম হয়, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।”
ঢাকা/মাসুদ