রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া সব জায়গা পুনরুদ্ধার করতে পারে ইউক্রেন, বললেন ট্রাম্প
Published: 24th, September 2025 GMT
রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া সব জায়গা ইউক্রেনের পক্ষে মূল রূপে ফিরে পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প এমন কথা বলেছেন। এটিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাঁর অবস্থানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, যেখান থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই মূল সীমানাগুলো ইউরোপ ও ন্যাটোর সহায়তা নিয়ে পুনরুদ্ধার করতে পারে ইউক্রেন। রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর বাড়তে থাকা চাপ এ ক্ষেত্রে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপরই তিনি এ মন্তব্য করেন।
ট্রাম্প অনেকবারই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে ট্রাম্প তখন সতর্ক করেছিলেন, শান্তিপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। আর এমন প্রস্তাব জেলেনস্কি বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ট্রাম্প অনেকবারই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে উদ্যোগ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে ট্রাম্প তখন সতর্ক করেছিলেন, শান্তিপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। আর এমন প্রস্তাব জেলেনস্কি বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছেন।ট্রুথ সোশ্যাল পোস্টে ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন হয়তো এর চেয়েও বেশি কিছু অর্জন করতে পারে। তবে তিনি এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি।
রাশিয়ার দখলে চলে যাওয়া ক্রিমিয়া প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। ইউক্রেনের এ অংশটি ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে এবং রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে। আর ২০২২ সালে রাশিয়া পুরোদমে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে।
ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘ভালোভাবে জানা–বোঝার’ পর তাঁর অবস্থান বদলেছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘পুতিন এবং রাশিয়া বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে আছে। আর এখনই ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।’ এ সময় ট্রাম্প রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ বলে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের অবস্থানের এই ‘বড় পরিবর্তন’কে স্বাগত জানিয়েছেন জেলেনস্কি। জাতিসংঘ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলতে চাই না। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।’ তবে অস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও ড্রোন সরবরাহ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুনএবার ইউরোপকে তাড়িয়ে বেড়ানোর হুমকি রাশিয়ার১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫পরে ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ট্রুথ সোশ্যালে ইউক্রেন–সংক্রান্ত ট্রাম্পের পোস্টটি তাঁকে বিস্মিত করেছে। তবে তিনি এটিকে ‘ইতিবাচক সংকেত’ হিসেবে দেখছেন। তিনি মনে করেন, যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্র যে ইউক্রেনের পাশে থাকবে—এটা তারই ইঙ্গিত।
গত সপ্তাহে এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ড কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, রাশিয়া তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ঘটনার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। ন্যাটোর আরেক সদস্য দেশ রোমানিয়াও বলেছে, রাশিয়ার ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।ফক্সের উপস্থাপক ব্রেট বায়ারের সঙ্গে আলাপকালে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, পুতিন যে অনেকবার ট্রাম্পের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলেছেন, এটিও আমাদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’
গতকাল জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্প আরও বলেন, ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর উচিত রাশিয়ার কোনো উড়োজাহাজ তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করলে তা গুলি করে ধ্বংস করা। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি দেশের আকাশসীমায় রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ও ড্রোন শনাক্ত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি এ কথাগুলো বলেন।
আরও পড়ুনন্যাটোর সদস্য এস্তোনিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫গত সপ্তাহে এস্তোনিয়া ও পোল্যান্ড কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, রাশিয়া তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এ ঘটনার পর ন্যাটোর অন্য সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। ন্যাটোর আরেক সদস্যদেশ রোমানিয়াও বলেছে, রাশিয়ার ড্রোন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
মঙ্গলবারের বৈঠকের পর ন্যাটো একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে রাশিয়ার কার্যকলাপের নিন্দা জানানো হয়েছে। আত্মরক্ষার্থে সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প কর ছ ন কর ছ ল ন কর ছ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
১৬ বছর পর মন্দির থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার, হবে পূজাও
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুরে শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরে ২০০৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ইসকনপন্থি একটি পক্ষ ও অপর একটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। নিহত হন মন্দিরের সেবায়েত ফুলবাবু। এরপর থেকেই দুর্গাপূজার সময় মন্দির এলাকায় জারি ছিল প্রশাসনের ১৪৪ ধারা।
দীর্ঘ ১৬ বছর পরে সেই অচলাবস্থা ভেঙে এ বছর প্রশাসনের উদ্যোগে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে অনুমতি দিয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে দুর্গাপূজা আয়োজনের। বর্তমানে এই মন্দির এলাকায় মূর্তি তৈরি ও মণ্ডপ সাজসজ্জার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
আরো পড়ুন:
শিশুটির পরিবারের সন্ধান চায় পুলিশ
কুষ্টিয়ায় শিশুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩
ঠাকুরগাঁও পূজা উদযাপন কমিটির তথ্য মতে, এবার জেলায় মোট ৪৭৬টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসব পালন করা হবে। এর মধ্যে ৩৬৬টিতে ইতোমধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বাকি মণ্ডপগুলোতেও দ্রুত সিসিটিভি স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ ও প্রশাসন সর্বাত্মক প্রস্তুত রয়েছে। ১৬ বছর পর পূজা শুরু হওয়া রসিক রায় জিউ মন্দিরে বিশেষ নজর থাকবে পুলিশ প্রশাসনের।
মৃৎশিল্পীরা দুর্গা দেবীর প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন
স্থানীয় বাসিন্দা খগেন চন্দ্র বলেন, “১৬টা বছর আমরা বাইরে গিয়ে অন্যের মন্দিরে পূজা করতাম। নিজেদের মন্দিরে পূজা করতে না পারাটা আমাদের জন্য অনেক বড় কষ্টের ছিল। অবশেষে আমরা আমাদের মন্দিরে পূজা আয়োজনের সুযোগ পেয়েছি।”
মনোযোগ দিয়ে মণ্ডপের কাজে সহযোগিতা করা অনিক রায় বলেন, “আমার বয়স এখন ২০ বছর। শ্রী শ্রী রসিক রায় জিউ মন্দিরে সর্বশেষ যখন পূজা হয়, তখন আমি খুবই ছোটো। সেই পূজার কথা মনে নেই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তখন থেকে শুধু বাবা-দাদার কাছে গল্প শুনেছি, এখানে অনেক বড় পূজার আয়োজন হতো। কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। খুব ইচ্ছে ছিল, আমাদের নিজেদের এই মন্দিরে একদিন পূজা হবে, আমরা পূজা করব। এবার সেই ইচ্ছে পূরণ হচ্ছে।”
সুজলা রাণী বলেন, “বিয়ের পর থেকে আমি এখানে কখনো পূজা হতে দেখেনি। শুধু শুনেছি, এখানে অনেক বড় করে দুর্গাপূজা হতো। খুব ভালো লাগছে এবার। এখন থেকে নিজেদের মণ্ডপে পূজা করতে পারব।”
সান্তনা রাণী বলেন, “এবার পূজা আমাদের জীবনে কিছুটা আলাদাভাবে এসেছে। এবার যেনো পূজার আনন্দ কিছুটা বেশি। খুবই আমেজ নিয়ে নতুন কাপড় কেনাকাটা করেছি। পূজার দিনে কী কী করবো তার পরিকল্পনা করেছি। এবার অনেক আনন্দ হবে।”
ঠাকুরগাঁও রসিক রায় জিউ মন্দিরের সেবায়েত অপু সরকার বলেন, “প্রায় ১৬ বছর পরে এখানে পূজা হচ্ছে। তাই সবার মাঝে উচ্ছ্বাস কিছুটা বেশি। আমরা আয়োজনে কোনো কমতি রাখছি না। অনেক বড় ও জমকালো আয়োজন হবে আশা করছি।”
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, “দীর্ঘ ১৬ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে রসিক রায় জিউ মন্দিরে এবারের দুর্গোৎসব হয়ে উঠেছে আনন্দ–উচ্ছ্বাসে ভরা এক মহোৎসব। প্রশাসনের সহযোগিতা ও দুই পক্ষের সমঝোতায় যে উৎসবের দ্বার খুলেছে, তা শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে তুলবে।”
তিনি আরো বলেন, “জেলা প্রশাসনের একান্ত প্রচেষ্টায় দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে।”
ঢাকা/মাসুদ