সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারার নাম ‘সন্ত্রাসী’ তালিকা থেকে বাদ দিল যুক্তরাষ্ট্র
Published: 8th, November 2025 GMT
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নাম ‘সন্ত্রাসী’ নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় জাতিসংঘ।
আগামী সোমবার ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন আহমেদ আল-শারা। এর আগেই তাঁর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র।
আহমেদ আল-শারা হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) নেতা ছিলেন। এইচটিএস একসময় নুসরা ফ্রন্ট নামেও পরিচিত। এ সংগঠন সিরিয়ায় আল-কায়েদার সহযোগী শাখা ছিল। ২০১৬ সালে তারা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
২০১৪ সালের মে মাস থেকে এইচটিএস জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল। তবে গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে এটিকে বাদ দেয়।
আরও পড়ুনসিরিয়ার প্রেসিডেন্ট শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল জাতিসংঘ০৬ নভেম্বর ২০২৫আল–কায়েদার সহযোগী সংগঠনের নেতা হিসেবে আহমেদ আল-শারার নাম বৈশ্বিক সন্ত্রাসীর তালিকায় তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। গতকাল শুক্রবার এ তালিকা থেকে সিরিয়ার নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের নাম বাদ দেওয়া হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আহমেদ আল-শারার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্য এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। চীন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
আরও পড়ুনপ্রথম কোনো সিরীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওয়াশিংটন সফর করবেন শারা০২ নভেম্বর ২০২৫এদিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাবের ওপর থেকেও জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
আহমেদ আল-শারার সংগঠন এইচটিএসের নেতৃত্বে বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাহিনী গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরপর আহমেদ আল-শারা দেশটির প্রেসিডেন্ট হন।
এখন আহমেদ আল-শারা ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। এটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে কোনো সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম সফর।
আরও পড়ুনযে মার্কিন জেনারেল একদিন গ্রেপ্তার করেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে বসে সাক্ষাৎকার দিলেন আল-শারা২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহম দ আল শ র র য ক তর ষ ট র র র ওপর থ ক সন ত র স স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে ১০ মাসে ২৮ এইডস রোগী শনাক্ত, ওষুধের জন্য যেতে হয় বগুড়া
রাজশাহীতে চলতি বছরের ১০ মাসে নতুন করে আরো ২৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস (এইডস) শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের। এ সময়ের মধ্যে একজন মারাও গেছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
আক্রান্তদের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে একটি এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার রয়েছে। তবে, এখানে কাউন্সেলিং ছাড়া ওষুধ মেলে না। রোগীদের ওষুধ আনতে যেতে হয় বগুড়া। এ অবস্থায় রামেক হাসপাতালে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি চালু হতে পারে।
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের তথ্য বলছে, ২০১৯ সাল থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত রাজশাহীতে এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন আটজন। চলতি বছর অক্টোবর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, দুইজন নারী ও একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষে শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
এইচটিসি সেন্টারে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন আসেন পরীক্ষা করাতে। সেখানে পজিটিভ ফল এলে রোগীদের কাউন্সেলিং দেওয়া হয়। বলা হয়, এইচআইভি পুরোপুরি নিরাময় না হলেও এটি এখন নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।
এদিকে, রাজশাহীতে এইচআইভির ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) যেতে হয়। সেখানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়। রাজশাহীতে একটি এআরটি সেন্টার (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি সেন্টার) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এইচটিসি সেন্টারে গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে গিয়ে দেখা যায়, এক কিশোরসহ চারজন পরীক্ষা করাতে এসেছেন। তাদের মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গর। সবার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
২০১৯ সাল থেকে রামেক হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম বছর ৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারো দেহে ভাইরাস পাওয়া যায়নি। পরের বছর দুইজন আক্রান্ত হন। ২০২১ সালে ৮ জন, ২০২২ সালে ৮ জন, ২০২৩ সালে ২৪ জন, ২০২৪ সালে ২৭ জন এবং ২০২৫ সালে অক্টোবর পর্যন্ত ২৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত হয়।
হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে আক্রান্ত ২৭ জনের মধ্যে সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৬ জন, যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন এবং রক্ত থেকে একজন। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমে সংক্রমিত হন ১৭ জন। এছাড়া যৌনকর্মীর মাধ্যমে ১০ জন ও রক্ত থেকে একজন আক্রান্ত হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এইচআইভি আক্রান্ত এক ব্যক্তি বলেন, “রোগটি জানার পর প্রথমে মনে হয়েছিল সব শেষ। পরে রামেকে কাউন্সেলিংয়ে এসে বুঝলাম, এটা এখন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়মিত ওষুধ নিলে ভালো থাকা যায়। তবে, রাজশাহীতে ওষুধের ব্যবস্থা না থাকায় বগুড়ায় যাওয়া কষ্টকর। এখানেই যদি ওষুধ পাওয়া যেত, আমরা অনেকটা স্বস্তি পেতাম।”
রামেক হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারের কাউন্সিলর রেজাউল করিম বলেন, “২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৪৬৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩ জন এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। তাদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।”
এইচটিসি সেন্টারের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, “অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, হোক নারী-পুরুষের মধ্যে বা পুরুষ-পুরুষের মধ্যে, এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ এটি। এছাড়া গর্ভকালীন সময়, সন্তান জন্ম ও দুধ পান করানোর মাধ্যমেও মা থেকে শিশুর দেহে সংক্রমণ যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিবার যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা, একাধিক যৌনসঙ্গী এড়িয়ে চলা, রক্ত বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আগে পরীক্ষা করা এবং ব্যবহৃত সুচ পুনরায় ব্যবহার না করাই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।”
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, “আমাদের এখানে এইচআইভি টেস্ট হয়। রোগীদের কাউন্সিলিং করা হয়। এখানেই যেন চিকিৎসা হয়, তার জন্য আমরা একটি ট্রিটমেন্ট সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছি। রুম রেনোভেশন হচ্ছে। খুব শিগগির হবে। আগামী একমাসের মধ্যেই হতে পারে। তখন আক্রান্তদের বগুড়া যেতে হবে না।”
ঢাকা/কেয়া/মাসুদ