আপনার কিশোর সন্তান কি পিয়ার প্রেশারে আছে? সমাধান জেনে রাখুন
Published: 24th, September 2025 GMT
পিয়ার প্রেশার কী
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জোবায়ের মিয়া বলেন, ‘পিয়ার প্রেশার মূলত কিশোর বয়সের ছেলে–মেয়েদেরই বেশি প্রভাবিত করে। এটি এমন একটি অবস্থা, যেখানে তারা কখনো বন্ধুদের জোরাজুরিতে, কখনো প্রভাবিত হয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে ফেলে। এই “কিছু করা”র মধ্যে ভালো–মন্দ দুটোই ঘটে। তবে ভুল কিছু করে ফেলার প্রবণতাই পিয়ার প্রেশারের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিক।’
ঢাকার একটি নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ফারহান (ছদ্মনাম) মনে করে, পিয়ার প্রেশারে যে সব সময় জোর করা হয়, তেমনটা না, কিন্তু প্রভাবিত করা হয়। যেটা মন থেকে করতে চাই না, একবার এমন একটি কাজ বন্ধুদের প্রভাবে করে ফেলেছিলাম। স্কুলে না গিয়ে সেদিন বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছি, প্রথম ধূমপান করেছি। পরে বাবা–মা জানতে পেরে খুব মন খারাপ করেছিল। এরপর নিজেরও মনে হয়েছে, আমি কেন এটা করেছি!’
সাধারণত মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার বয়সে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ে সন্তানেরা। তাই সেখানে ভুল করার প্রবণতা বেশি থাকে। এই বয়সে বন্ধুদের অনেক বেশি কাছের মনে হয়। কিন্তু যখন ভুল পথে পা বাড়ায়, দিন শেষে পরিবারই আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানদের মধ্যে সেই ভরসার জায়গাটা তৈরি করা অভিভাবকদের জন্য জরুরি বলে মনে করেন মনোবিদেরা।
একজন ব্যক্তির চলার পথে নানা রকম বন্ধু হতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ভুল–ঠিক বুঝতে শেখে। প্রথম জীবনে (কৈশোরে) যেহেতু ভুল করার প্রবণতা থাকে, তাই পরিবারের মধ্যে বন্ধুত্ব খুব জরুরি। সন্তান যেন মা–বাবাকে সব বিষয়ে খুলে বলতে পারে, এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নতুন বন্ধু তৈরি হওয়ার সময় কোন বিষয়গুলো গুরুত্ব দেবে, সেসব বোধ শিশুর মধ্যে গড়ে দেওয়া ভালো।ডা.মো. জোবায়ের মিয়া, সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পিয়ার প্রেশারকে ‘না’ বলার উপায়
অনেক সময় পিয়ার প্রেশারের বিপরীতে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে। কিন্তু তারপরও মনোবল রেখে বন্ধুদের সুন্দর করে না বলা শিখতে হবে।
এই পর্যায়ে পরিবারের দারুণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন মনের বন্ধুর মানসিক স্বাস্থ্য প্রোগ্রামের প্রধান ও লিড মনোবিজ্ঞানী কাজী রুমানা হক। এই মনোবিজ্ঞানী বলেন, ‘পিয়ার প্রেশার মোকাবিলায় পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। পরিবার থেকেই শিশুকে কোনো বিষয়ে না বলতে পারায় অভ্যস্ত করতে হয়। নানা কারণে বাড়িতে সন্তান যখন না বলে, এটা বাবা–মাকে শুনতে হবে। না বলাও যে স্বাভাবিক আচরণ হতে পারে অনেক অভিভাবক সেটা মানতে পারেন না। অথচ শিশুর না বলার কারণটা যৌক্তিক হলে সেটা মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে বাইরেও শিশু নিজের মতামত প্রকাশে উৎসাহ পায়।’
না বলতে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা যাবে নাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ধ দ র সন ত ন পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসু–জাকুসতে জিতে কি জামায়াত–শিবির রাজনীতিতে হারল
ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের অভূতপূর্ব ফলের কারণ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনার মধ্যেই কিছু প্রশ্ন উঠে আসা জরুরি—স্বল্পমেয়াদি অর্জনের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির কি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি নিল? ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির জিতল, কিন্তু তারা কি রাজনীতিতে হারল?
ছাত্রশিবির তো নিজ নামে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, তাই তারা যা যা করেছে, সেগুলোর দায় পুরোপুরি ছাত্রশিবিরকে দেওয়া যাবে না—এই নিবন্ধের আলোচনায় এ-জাতীয় অহেতুক আলাপকে বিবেচনায় রাখা হয়নি।
ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রশিবিরের ৩৬ দফা ইশতেহার মূলত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মান বাড়ানোসহ ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য নানা রকম কল্যাণমুখী পদক্ষেপকে ভিত্তি করে। অথচ ছাত্রশিবিরের গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনার পুরোটাই ইসলামে বিশ্বাস এবং সেটা প্রতিষ্ঠিত করা-সংক্রান্ত। এ ছাড়া দেখে নেওয়া যাক গঠনতন্ত্রের কিছু অংশ—
আরও পড়ুনডাকসুতে ছাত্রদলের হার—বিএনপিকে যা ভাবতে হবে১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: এই সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (সা.) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
কর্মসূচি: ১. তরুণ ছাত্রসমাজের কাছে ইসলামের আহ্বান পৌঁছে তাদের মধ্যে ইসলামিক জ্ঞান অর্জন এবং বাস্তব জীবনে ইসলামের পূর্ণ অনুশীলনের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা; ২. যেসব ছাত্র ইসলামি জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ নিতে প্রস্তুত, তাদের সংগঠনের অধীন সংঘবদ্ধ করা; ৩. এই সংগঠনের অধীন সংঘবদ্ধ ছাত্রদের ইসলামি জ্ঞান প্রদান এবং আদর্শ চরিত্রবান রূপে গড়ে তুলে জাহেলিয়াতের সমস্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী হিসেবে গড়ার কার্যকর ব্যবস্থা করা; ৪. আদর্শ নাগরিক তৈরির উদ্দেশ্যে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে সংগ্রাম এবং ছাত্রসমাজের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান; ৫. অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামি থেকে মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামি সমাজ বিনির্মাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো।
বলা বাহুল্য, এসব লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি ইশতেহারে। এটা একেবারেই স্পষ্ট—ছাত্রশিবির তাদের সংগঠনের নামের পাশে থাকা ‘ইসলাম’ নিয়ে অন্তত খুব বেশি ভাবছে না।
আরও পড়ুনডাকসুর কী প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়তে যাচ্ছে১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের প্রার্থী বাছাই বেশ আলোচিত ছিল। একজন অমুসলিম (চাকমা) প্রার্থী এবং হিজাব করেন না—এমন একজন নারী প্রার্থী অনেকের কাছেই চমক হিসেবে এসেছে। এমনকি একটি সংবাদ সম্মেলনে ভিপি ও জিএস প্রার্থীর মধ্যে সেই নারী প্রার্থীকে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীকে দেখা গেছে হিজাব পরিধান করছেন না—এমন নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এমনভাবে চলাফেরা করছেন, যেটা আগে ছাত্রশিবিরের নেতাদের ক্ষেত্রে দেখা যেত না। শুধু সেটাই নয়, পোশাক এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ছাত্রশিবিরের কর্মী-সদস্যরা যেভাবে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলেন, সেটাও অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
ছাত্রশিবিরের যে গঠনতন্ত্র আছে, তাতে একজন সদস্য এটা করতে পারেন কি না—এ প্রশ্ন আসবেই। গঠনতন্ত্রে সদস্যদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘...তাঁর জীবনে ইসলাম নির্ধারিত ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ যথাযথভাবে পালন করেন, কবিরা গুনাহসমূহ থেকে দূরে থাকেন এবং সংগঠনের লক্ষ্য ও কর্মসূচির বিপরীত কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না রাখেন, তাহলে তিনি এ সংগঠনের সদস্যপদ লাভ করতে পারেন।’
অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলো এমন সব কৌশল অবলম্বন করে, যেটা তাদের দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। সেটা গ্রহণ করার একধরনের মানসিকতা আমাদের মতো দেশের নাগরিকদের মধ্যে থাকে। তবে এ কথা অন্য সব রাজনৈতিক দলের জন্য প্রযোজ্য হলেও আদর্শভিত্তিক (বিশেষ করে ইসলামিক) রাজনৈতিক দলের জন্য বিষয়টা এত সরল নয়।নানা দিকে ছাত্রশিবিরের এই নির্বাচনী কৌশল খুবই প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এর মাধ্যমে ছাত্রশিবির অনেকটা লিবারেল রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রদর্শন করেছে, যা স্বাগত জানানো উচিত। নির্বাচন কৌশলের খেলা, সন্দেহ নেই।
অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলো এমন সব কৌশল অবলম্বন করে, যেটা তাদের দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। সেটা গ্রহণ করার একধরনের মানসিকতা আমাদের মতো দেশের নাগরিকদের মধ্যে থাকে। তবে এ কথা অন্য সব রাজনৈতিক দলের জন্য প্রযোজ্য হলেও আদর্শভিত্তিক (বিশেষ করে ইসলামিক) রাজনৈতিক দলের জন্য বিষয়টা এত সরল নয়।
আর সব ধর্মের মতো ইসলামেরও নানা রকম ‘স্কুল অব থট’ আছে। সাংবিধানিক ধারায় রাজনীতি করা ইসলামি দলগুলোর মধ্যেও চিন্তাগত দুস্তর ব্যবধান আছে। এ ছাড়া এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইসলাম থেকে পুরোপুরি খারিজ করে দেওয়ার প্রবণতাও রয়েছে।
আরও পড়ুনডাকসু-জাকসুতে শিবির জিতেছে, বাকিরা কি জিততে চেয়েছে১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫কিন্তু কোনো একটি ইসলামি দল যখন ধর্মের ব্যাপারে তার অবস্থান নির্দিষ্ট করে ফেলে, তখন সেটা থেকে খুব বেশি বিচ্যুতি বড় প্রশ্ন তৈরি করবে। যেমন জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য অনুযায়ী তাদের মতবাদ মানবরচিত নয়। সুতরাং একটা মানবরচিত মতবাদের দলের গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য আচরণ ভাঙা যতটা প্রশ্ন তৈরি করার কথা, ইসলামের অনুশাসনকেই একমাত্র ভিত্তি করে তোলা জামায়াতে ইসলামী কিংবা ছাত্রশিবিরের একই কাজ করা অনেক বেশি কঠোর প্রশ্ন তৈরি করবে।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনে ধর্ম একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। অনেক মানুষের মধ্যেই ব্যক্তিজীবনে ইসলামি জীবনবিধান মেনে সচ্চরিত্রবান হবার প্রবণতা খুব বেশি না থাকলেও ধর্মের আচার ও ধর্মের অনুভূতি নিয়ে বেশ সংবেদনশীলতা আছে। সেই বিবেচনায় ইসলামি দলগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনে ভালো ফল করার কথা ছিল। কিন্তু যে কারও এ ধরনের যৌক্তিক অনুমানের বিরুদ্ধে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মানুষ এই ধারার রাজনীতিকে বরং প্রত্যাখ্যান করেছে।
শেখ হাসিনার সময়ে দেশে অন্তত তিনটি নির্বাচন হয়নি। ফলে জনগণের ভোট দেওয়ার প্রবণতা আমরা বুঝতে পারিনি। কিন্তু রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই আলোচনা আছে, এই সময়টাতে দেশের মানুষের ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে ইসলামি রাজনৈতিক দলের ভোট অনেক বাড়বে।
আরও পড়ুনডাকসুতে ছাত্রদলের হার—বিএনপিকে যা ভাবতে হবে১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫যেকোনো বিবেচনায় ডাকসু বা জাকসু নির্বাচন দেশের জাতীয় নির্বাচনের ভোট দেওয়ার প্রবণতার প্রতিনিধিত্ব করে না। তারপরও এই নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় নির্বাচনকে কতটা প্রভাবিত করবে, সেই আলোচনা-বিশ্লেষণ চলমান।
অনেকে অনুমান করছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ভালো ফল অনেককে চমকে দিতে পারে। ওপরে উল্লেখিত দুই ছাত্র সংসদের নির্বাচনের পরপরই ব্যবসায়ী নেতাদের জামায়াতের আমিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করাকে অনেকে এ প্রবণতার পূর্বাভাস হিসেবেই দেখতে চান।
জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী কতটা ভালো বা কতটা খারাপ ফল করবে, সেটা এই নিবন্ধে বিশ্লেষণের বিষয় নয়।
তবে এটা যৌক্তিকভাবেই অনুমান করা যায়, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের পর জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী জনগণের সামনে ছাত্র সংসদগুলোর মতো একই ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপকে সামনে নিয়ে আসবে। তাদের ইশতেহার ও প্রচারণায় ধর্ম নিয়ে ‘পবিত্র কোরআন-সুন্নাহর বাইরে কোনো আইন প্রণয়ন হবে না’—এমন দায়সারা গোছের বক্তব্যের (বিএনপি বা আওয়ামী লীগও এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছে) চেয়ে খুব বেশি কিছু থাকবে না।
আরও পড়ুনডাকসু ও জাকসু: জাতীয় নির্বাচনে কী করবে এনসিপি১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫অথচ দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও বুদ্ধিজীবীরা মাঝেমধ্যেই বলছেন, ক্ষমতায় গেলে তাঁরা শরিয়াহ আইন কায়েম করবেন। মুখে যা-ই বলুন না কেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতারা এটা সম্ভবত বিশ্বাস করেন না, এ নির্বাচনেই তাঁরা জিতে ক্ষমতায় যাবেন। কিন্তু তাঁদের মুখে এমন বক্তব্য এবং এমন শরীরী ভাষা দেখা, যা তাঁদের নির্বাচনে খুবই ভালো করার আত্মবিশ্বাস প্রদর্শন করে।
আপাতদৃষ্টে মনে হতে পারে, এটাই ছিল মোক্ষম সময়, যখন জামায়াতে ইসলামী তাদের শরিয়াহর রূপরেখা জনগণের সামনে আনবে এবং সেটাকেই তাদের প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি করে তুলবে। এখন পর্যন্ত অন্তত সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
দুটি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির অভাবনীয় সাফল্য পেলেও সেটা তাদের রাজনীতির মাধ্যমে হয়নি। তারা তাদের এমনভাবে পরিবর্তন করছে, যেটা আসলে ভোটের মাঠের বাস্তবতা এবং চাহিদা। তারা নির্বাচনে জিতলেও পরাজিত হয়েছে তাদের রাজনীতি। ছাত্র সংসদ নির্বাচনগুলো প্রমাণ করল, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এখনো মধ্যপন্থী কল্যাণমুখী রাজনীতি চায়; ধর্মভিত্তিক পরিচয়বাদী রাজনীতি তারা আগের মতোই প্রত্যাখ্যান করে।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচন, ফলাফল ও তরুণ মনের চাওয়া১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫এই নিবন্ধের আলাপ এখানেই শেষ। কিন্তু একটা নতুন প্রশ্ন করে রাখতে চাই পরবর্তী আলোচনার জন্য। জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি দেখলে মনে হয়, তাদের গঠনতন্ত্রে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, তারা বেশ খানিকটা বিএনপি হয়ে উঠছে। তাহলে নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কেমন হওয়া উচিত বিএনপির রাজনীতি?
● জাহেদ উর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
* মতামত লেখকের নিজস্ব
[২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে এ লেখা ‘ডাকসুতে জিতে কি জামায়াত–শিবির আদতে হারল’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।]