স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৫৪ গ্রাহকের ২৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল প্রতারক চক্র
Published: 24th, September 2025 GMT
বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশের গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ড থেকে অভিনব উপায়ে অর্থ তুলে নিয়েছে একটি চক্র। গ্রাহকেরা কার্ডে লেনদেন না করলেও ৫০ হাজার টাকা করে তাঁদের ব্যাংক হিসাব থেকে একাধিক এমএফএস বা মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে। পরে সেখান থেকে প্রতারক চক্র ওই অর্থ তুলে নেন।
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে এসসিবির ৫৪ জন গ্রাহকের কার্ড থেকে একটি প্রতারক চক্র অর্থ তুলে নেয়। এসব গ্রাহকের হিসাব থেকে ২৭ লাখ টাকা সরিয়ে নেয় চক্রটি। এ ঘটনার পর ব্যাংকটি কার্ড থেকে বিকাশ ও নগদের এমএফএস হিসাবে অর্থ স্থানান্তরের সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। এক খুদে বার্তায় ব্যাংকটি গ্রাহকদের জানিয়েছে, নিরাপদ লেনদেনের জন্য বর্তমানে এমএফএস অ্যাপগুলোতে ‘অ্যাড মানি’ অপশনটি সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়ার গ্রাহকদের অভিযোগের পর বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছে এসসিবি কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে তদন্তও শুরু করেছে।
বিষয়টি নিয়ে বিকাশ ও নগদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
জানা যায়, এসসিবির এই ঘটনা আলোচনায় আসে চলতি মাসের শুরুতে। ব্যাংকটির একাধিক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, তাঁদের ফোনে একবার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি) আসার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়। অথচ কোনো ব্যবহারকারীই ওটিপি শেয়ার করেননি বা সন্দেহজনক কোনো ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহার করেননি।
আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৫৪ জন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি তদন্ত করছেলুৎফুল হাবিব, এমডি, এসসিবি বাংলাদেশভুক্তভোগী হাসিন হায়দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ভিসা কার্ড থেকে হঠাৎ ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে বিকাশ অ্যাকাউন্টে। ফোনে ওটিপি এলেও আমি তা কারও সঙ্গে শেয়ার করিনি। তারপরও ২০ সেকেন্ডের মধ্যে টাকা স্থানান্তর হয়ে যায়। অথচ ব্যাংক বলছে, যেহেতু ওটিপি দিয়ে লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, তাই এটা গ্রাহকের দায়।’ হাসিন হায়দার আরও লিখেছেন, ‘২৬ আগস্ট রাত ৭টা ৪৩ মিনিটে আমার কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়। আমি ওটিপি কারও সঙ্গে শেয়ার করিনি। আমার বিশ্বাস, এটা ব্যাংকের সিকিউরিটি ইস্যু।’
সাদিয়া শারমিন বৃষ্টি নামের আরেকজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাত বছরের বেশি সময় ধরে কার্ড ব্যবহার করলেও প্রথমবার এ ধরনের জালিয়াতির শিকার হয়েছেন তিনি। তাঁর কার্ড থেকেও ৫০ হাজার টাকা স্থানান্তর হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে এসসিবির কর্মকর্তারা জানান, একাধিক গ্রাহক থেকে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যাংকের স্থানীয় ও বৈশ্বিক প্রযুক্তি দল ব্যাংকের প্রযুক্তি বিভাগের নিরাপত্তা যাচাই করে দেখে। এতে কোনো ধরনের ত্রুটি পাওয়া যায়নি। যেহেতু বিকাশ ও নগদের অ্যাপস থেকে অ্যাড মানির মাধ্যমে কার্ডের অর্থ চুরি হয়েছে, তাই বিষয়টি এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বিকাশ ও নগদের যেসব হিসাবে এই অর্থ স্থানান্তর করা হয়, তা কয়েক মিনিটের মধ্যে নগদে উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। এর পর থেকে এসব নম্বর বন্ধ। এতেই বোঝা যাচ্ছে এর সঙ্গে দক্ষ জালিয়াত চক্র যুক্ত।
জানতে চাইলে এসসিবি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) লুৎফুল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৫৪ জন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি তদন্ত করছে। নিশ্চয়ই তাদের তদন্তে প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে ও দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
লুৎফুল হাবিব আরও বলেন, ‘এই ঘটনায় ব্যাংকের প্রযুক্তি বিভাগের কোনো দুর্বলতা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি ঘটেছে এমএফএসের “অ্যাড মানি” অপশন থেকে। এ জন্য আমরা এমএফএসের অ্যাপে আমাদের ব্যাংকের কার্ড থেকে টাকা স্থানান্তর সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছি। প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসার পর এই সুবিধা পুনরায় চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৫০ হ জ র ট ক ব ক শ ও নগদ স থ ন ন তর গ র হক র ব যবহ র র কর ন তদন ত এসস ব ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ছোট রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানি যেভাবে সহজ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ক্ষুদ্র ও ই-কমার্সকেন্দ্রিক উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশে পণ্য রপ্তানি এবং পণ্য রপ্তানির অর্থ দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ করেছে সরকার। এখন থেকে ইএক্সপি ফরম পূরণ করা ছাড়াই এক হাজার মার্কিন ডলার বা এর সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন ক্ষুদ্র ও ই-কমার্সকেন্দ্রিক উদ্যোক্তারা।
পণ্য রপ্তানির অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস) এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিএসপি) মাধ্যমে দেশে আনা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এই নির্দেশনা দিয়েছে। একটি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এত দিন ইএক্সপি ফরম পূরণ করা ছাড়াই ৫০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার পণ্য রপ্তানি করতে পারতেন ক্ষুদ্র ও ই-কমার্সকেন্দ্রিক উদ্যোক্তারা। এখন সেটি দ্বিগুণ করা হয়েছে। সুবিধাটির কারণে ক্ষুদ্র ও ই-কমার্স রপ্তানিকারকেরা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পণ্য রপ্তানির লেনদেন পরিচালনায় উৎসাহিত হবেন বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি প্রজ্ঞাপন বলেছে, ডিজিটাল ব্যবস্থায় পণ্য রপ্তানির মূল্য প্রত্যাবাসন কাঠামো সম্প্রসারণ করেছে সরকার। নতুন বিধান অনুযায়ী, যেসব রপ্তানির ক্ষেত্রে ইএক্সপি ফরমে ঘোষণা প্রয়োজন হয় না সেগুলো রপ্তানির আয় এখন বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্সপ্রাপ্ত এমএফএস এবং পিএসপির মাধ্যমে দেশে আনা যাবে। এই পদক্ষেপ ক্ষুদ্র ও অনলাইন রপ্তানিকারকদের জন্য রপ্তানি আয় গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে এসব লেনদেন যথাযথ নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর আলোকে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে এমএফএসপি ও পিএসপি প্রতিষ্ঠান শুধু তথ্যপ্রযুক্তি–সম্পর্কিত সেবা রপ্তানির আয় দেশে আনতে পারত। এখন থেকে তাদের কার্যপরিধি স্বল্প মূল্যের পণ্য রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনেও সম্প্রসারিত করা হয়েছে।