রংপুরে শিক্ষার্থী পেটানো সেই বাগছাস নেতার পদ স্থগিত
Published: 24th, September 2025 GMT
রংপুরে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ‘অকৃতকার্য’ অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) নেতা ইমতিয়াজ আহম্মদের (ইমতি) পদ স্থগিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। বুধবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব মাহফুজুর রহমানের (দপ্তর) পাঠানো এক নোটিশে এ তথ্য জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের ও সদস্যসচিব জাহিদ আহসান এ নির্দেশনা দেন। ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সংগঠনের আদর্শ ও স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে মাহফুজুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের অফিশিয়াল পেজে এ–সংক্রান্ত চিঠি প্রচার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইমতিয়াজ আহম্মদের কাছে চিঠি পৌঁছানোর জন্য একজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে আছেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবু তৌহিদ মো.
এ বিষয়ে সংগঠনের অফিশিয়াল পেজে পোস্ট করা চিঠির মন্তব্যের ঘরে ইমতিয়াজ লিখেছেন, ‘আপনাদের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই, তবে শোকজ না দিয়ে সরাসরি স্থগিত এটা হয়তো একটু দৃষ্টিকটু। আপনাদের যেকোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাব, এই সংগঠনে আছে আমার পরিশ্রম, মেধা আর ঘাম। আমার সাথে যা কিছু হোক কোনো অসুবিধা নাই, আমার মতো একজন ইমতি না থাকলেও সংগঠন চলবে। তবে অনুরোধ থাকবে একটা নির্দিষ্ট কোরামবাজির জন্য সারা দেশের সাংগঠনিক অবস্থা একই না করা। ত্যাগীরা মূল্যায়ন পাবে, একটা প্রত্যাশা করি। তবেই শক্তভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এই সংগঠন।’
মঙ্গলবার প্রথম আলো অনলাইনে ‘শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অকৃতকার্য অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রংপুরে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বাগছাস রংপুর মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, ইমতিয়াজ আহম্মদ ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল শুনে ‘অকৃতকার্য হওয়া’ শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর একে একে তিনটি শ্রেণিকক্ষে ঢুকে অর্ধশত শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটান। রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে ৪ সেপ্টেম্বর। শিক্ষার্থীদের পিটুনি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর সংক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা স্কুলে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তবে ঘটনার ১৮ দিন পার হলেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেননি প্রধান শিক্ষক। অবশ্য প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আহম্মেদের দাবি, তাঁরা ঘটনাটি মীমাংসা করেছেন। আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার ভাষ্য, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়নি।
শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টা এ রকম নয়। আমি স্কুলের সভাপতি হিসেবে ছয় মাস ধরে স্কুলে পরিশ্রম করতেছি, বাচ্চাগুলো যেন ভালো রেজাল্ট করে। ওদের ক্লাসের যেগুলো সমস্যা ছিল, সমাধান করেছি। সে জন্য একটু রাগারাগি করছি, শাসন করছি, এই আরকি। কিন্তু এটা নিয়া ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো কমপ্লেইন (অভিযোগ) নেই।’
কিন্তু শাসনের নামে এভাবে শিক্ষার্থীদের শারীরিক নির্যাতন করতে পারেন কি না, তা জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহম্মদের ভাষ্য, ‘আমি নিজেও এই এলাকার বড় ভাই। একটু শাসন করছি। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছিল। এলাকার কিছু ব্যক্তি ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করার চেষ্টা করেছিল। তবে এটা মিউচুয়াল (মীমাংসা) হয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমানের দাবি, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সম্মতিতে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। কী ঘটনা ঘটেছিল, তা জানতে চাইলে আতাউর রহমান বলেন, ‘ওটা কিছু না। উনি আইসে, বাচ্চাদের বলে ভালো পড়াশোনা করো। ভালো রেজাল্ট করো। এই আরকি।’ শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘ওটা তো পারেন না। বাচ্চা, অভিভাবক নিয়ে মীমাংসা করে দিছি। বাচ্চারাও মানি নিছে।’
আরও পড়ুনশ্রেণিকক্ষে ঢুকে ‘অকৃতকার্য’ অর্ধশত শিক্ষার্থীকে পেটালেন বাগছাস নেতা২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইমত য় জ আহম ম র রহম ন স গঠন র সদস য ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবীকে নীল বিন্দু খেতাব দিয়েছিলেন যে বিজ্ঞানী
জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল স্যাগান মহাবিশ্বের সৌন্দর্যকে জনসমক্ষে নিয়ে আসার জন্য আলোচিত। তিনি ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। কিংবদন্তি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, লেখক ও বিজ্ঞান প্রচারক হিসেবে কার্ল স্যাগান আলোচিত। বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও কাব্যিক ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বিশ্বকে মহাবিশ্বের বিস্ময়কর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে শিখিয়েছেন। তাঁর কাজ কেবল বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই সীমাবদ্ধ ছিল না।
কার্ল স্যাগানের সবচেয়ে বড় অবদান বলা যায় বিজ্ঞানবিষয়ক নানা বিষয়কে লেখালেখি ও টেলিভিশনের মাধ্যমে সবার সামনে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৮০ সালে প্রচারিত তাঁর যুগান্তকারী টেলিভিশন সিরিজ ‘কসমস: এ পার্সোনাল ভয়েজ’ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ দর্শককে মহাবিশ্বের রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। এই সিরিজ বৈজ্ঞানিক ধারণাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যা গভীর অথচ সহজে বোধগম্য। স্যাগানের বিখ্যাত উক্তি, ‘আমরা সবাই স্টারডাস্ট বা তারাধূলি দিয়ে তৈরি।
একজন পেশাদার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে স্যাগানের গবেষণা মূলত ছিল গ্রহবিজ্ঞান নিয়ে। তিনি শুক্র, বৃহস্পতি গ্রহসহ অন্যান্য গ্রহের বায়ুমণ্ডলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে ছিল শুক্র গ্রহের তীব্র তাপমাত্রা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা, যা পরে প্রমাণিত হয়। স্যাগান মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অনুসন্ধান এবং এর পরিবেশ নিয়ে ব্যাপক কাজ করেন। তিনি নাসার মেরিনার, ভয়েজারসহ বিভিন্ন গ্রহ অনুসন্ধানকারী মিশনে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলের পৃষ্ঠে থাকা রহস্যময় ক্যানালি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক ছিল। স্যাগান বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করেন, এসব এলিয়েনদের তৈরি খাল নয়, বরং প্রাকৃতিক ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
দূরবর্তী মহাজাগতিক প্রাণীর কাছে পৃথিবীর অস্তিত্ব জানান দিতে স্যাগান দুটি ঐতিহাসিক প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে উৎক্ষেপিত পাইওনিয়ার ১০ মহাকাশযানে একটি বিশেষ ফলক সংযুক্ত করার ধারণা দেন স্যাগান।
এই প্লেটে মানব জাতির চিত্র, আমাদের সৌরজগতের অবস্থান এবং মহাকাশযানের উৎক্ষেপণের সময়কাল চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড পাঠানোর সময় তাঁর ভূমিকা ছিল। এটি ছিল স্যাগানের নেতৃত্বাধীন সবচেয়ে বিখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। ১৯৭৭ সালে উৎক্ষেপিত ভয়েজার ১ এবং ভয়েজার ২ মহাকাশযানে পৃথিবীর ছবি, শব্দ, সংগীত এবং বিভিন্ন ভাষার শুভেচ্ছাবার্তা নিয়ে তৈরি এই সোনালি রেকর্ড পাঠানো হয়। কার্ল স্যাগান ১৯৯৬ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে তোলা একটি ছবিকে জনপ্রিয় করেন তিনি। সেই ছবিতে পৃথিবীকে একটি ফ্যাকাশে নীল বিন্দুর মতো দেখায়। ৬০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে ধারণ করা ছবিটি বিশ্বকে চমকে দেয়। ছবিটি তুলতে স্যাগান নাসাকে উৎসাহিত করেছিলেন। কার্ল স্যাগানের চিন্তায় প্রথমবারের মতো মানব জাতি বুঝতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালতার পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির গুরুত্ব ও ক্ষুদ্রতা কত নগণ্য।
ভয়েজার ১ মহাকাশযান থেকে পৃথিবীকে আলোর রশ্মিতে ঝুলে থাকা এক ফোঁটা নীল ধূলিকণার মতো মনে হয়। স্যাগান সেই ছবির বর্ণনায় বলেন, এই ক্ষুদ্র বিন্দুর ওপরই বাস করছে আপনার পরিচিত প্রতিটি ব্যক্তি। আমাদের সব হাসি-কান্না, আমাদের হাজারো ধর্ম, মতাদর্শ, অর্থনৈতিক বিশ্বাস, সভ্যতার উত্থান-পতন, রাজা-প্রজা, প্রেমিক-প্রেমিকা, উদ্ভাবক আর আমাদের প্রজাতির ইতিহাসে যত পাপি ও সাধু এসেছে সবাই। তারা সবাই ছিল সূর্যের আলোয় ভেসে থাকা ধূলিকণার এক কণামাত্র।
তথ্যসূত্র: আমেরিকান সায়েন্টিস্ট