পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছিল তারা। একপর্যায়ে পথ হারিয়ে ফেলে। বিকেলে যখন পাহাড়ে উঠেছিল, তখন খেয়াল হয়নি সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে। অন্ধকার নামার পর ভয় পেয়ে যায় তারা। গহিন পাহাড়ের কোন পথে যাবে, তাও নিশ্চিত হতে পারে না। শেষে তারার আলো দেখে একটা বড় বটগাছের নিচে সারা রাত কাটায় পাশাপাশি বসে। ভোরের আলো ফুটতেই আবার একটা পাহাড়ি পথ ধরে চলতে থাকে। তখনই দেখা একদল পুলিশের সঙ্গে। পুলিশ সদস্যরা তাদের সন্ধানেই এসেছিল পাহাড়ে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সাত শিশুকে আজ শনিবার ভোরে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া শিশুদের বিবরণে উঠে আসে পাহাড়ে গিয়ে তাদের পথ হারানো ও উদ্ধার হওয়ার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে গতকাল রাতে শিশুদের অভিভাবকেরা সন্তানদের সন্ধান চেয়ে থানায় ডায়েরি করেন। এরপর সারা রাত উৎকণ্ঠায় থানায় কাটিয়ে দেয় তারা। পুলিশের তিনটি দল রাতেই তাদের খোঁজে পাহাড়ে যায়। পরে ভোর পাঁচটার দিকে নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর জঙ্গল জলদির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া এক শিশু বলে, ‘সন্ধ্যা নেমে এলে আমরা বুঝতে পারি পথ হারিয়েছি। তাই রাতে আর পাহাড়ি পথে হাঁটিনি। একটা বটগাছের নিচে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করেছি। ভোর হলে হাঁটা শুরু করেই পুলিশের দেখা পাই। তারা আমাদের উদ্ধার করে।’

পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে পৌরসভার বাহার উল্লাহ পাড়ার সৈয়দ শাহ রহ.

মাজারের পূর্ব পাশের এলাকা থেকে তারা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলে। সাত শিশুর সবাই একই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বাড়িও একই এলাকায়। খেলতে গিয়ে হঠাৎ খেয়ালের বশে এলাকার পাশের পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চার করতে যায় তারা। সিসিটিভির ফুটেজে অটোরিকশায় তাদের ছবি দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় পাহাড়ের দিকেই গেছে তারা। রাতে অভিভাবকেরা থানায় এলে পুলিশ শিশুদের খোঁজ নিতে শুরু করে। উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজেও তাদের খোঁজ ছেয়ে পোস্ট দেওয়া হয়।

বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ে পথ হারিয়ে ফেলা শিশুদের উদ্ধারে আমরা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে রাতভর অভিযান চালাই। পরে ভোর ৫টায় জঙ্গল জলদি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর শিশুদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তারা ট্রমায় ভুগছে। হাসপাতাল থেকে স্বজনেরা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র উদ ধ র পথ হ র য়

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম