পথ হারিয়ে পাহাড়ে কাটে সারা রাত, এরপর যেভাবে উদ্ধার হলো সাত শিশু
Published: 27th, September 2025 GMT
পাহাড়ে অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছিল তারা। একপর্যায়ে পথ হারিয়ে ফেলে। বিকেলে যখন পাহাড়ে উঠেছিল, তখন খেয়াল হয়নি সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে। অন্ধকার নামার পর ভয় পেয়ে যায় তারা। গহিন পাহাড়ের কোন পথে যাবে, তাও নিশ্চিত হতে পারে না। শেষে তারার আলো দেখে একটা বড় বটগাছের নিচে সারা রাত কাটায় পাশাপাশি বসে। ভোরের আলো ফুটতেই আবার একটা পাহাড়ি পথ ধরে চলতে থাকে। তখনই দেখা একদল পুলিশের সঙ্গে। পুলিশ সদস্যরা তাদের সন্ধানেই এসেছিল পাহাড়ে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া সাত শিশুকে আজ শনিবার ভোরে উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া শিশুদের বিবরণে উঠে আসে পাহাড়ে গিয়ে তাদের পথ হারানো ও উদ্ধার হওয়ার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে গতকাল রাতে শিশুদের অভিভাবকেরা সন্তানদের সন্ধান চেয়ে থানায় ডায়েরি করেন। এরপর সারা রাত উৎকণ্ঠায় থানায় কাটিয়ে দেয় তারা। পুলিশের তিনটি দল রাতেই তাদের খোঁজে পাহাড়ে যায়। পরে ভোর পাঁচটার দিকে নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর জঙ্গল জলদির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া এক শিশু বলে, ‘সন্ধ্যা নেমে এলে আমরা বুঝতে পারি পথ হারিয়েছি। তাই রাতে আর পাহাড়ি পথে হাঁটিনি। একটা বটগাছের নিচে ভোরের আলো ফোটার অপেক্ষা করেছি। ভোর হলে হাঁটা শুরু করেই পুলিশের দেখা পাই। তারা আমাদের উদ্ধার করে।’
পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে পৌরসভার বাহার উল্লাহ পাড়ার সৈয়দ শাহ রহ.
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ে পথ হারিয়ে ফেলা শিশুদের উদ্ধারে আমরা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে রাতভর অভিযান চালাই। পরে ভোর ৫টায় জঙ্গল জলদি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর শিশুদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তারা ট্রমায় ভুগছে। হাসপাতাল থেকে স্বজনেরা তাদের বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র উদ ধ র পথ হ র য়
এছাড়াও পড়ুন:
বল হাতে দুর্দান্ত মারুফা, ব্যাট হাতে রুবাইয়া—পাকিস্তানকে উড়িয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
তিন বছর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকে একটিই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। সেটি এসেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর আজ সেই পাকিস্তানকে হারিয়েই ২০২৫ নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করল বাংলাদেশ।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে নিগার সুলতানার দল। গত এপ্রিলে যে পাকিস্তানের কাছে বাছাইপর্বে হেরে শঙ্কার মুখে পড়েছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন, সেই দলটিকেই ১২৯ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ নারী দল ম্যাচ জিতেছে ৭ উইকেটে। ১৩০ রানের লক্ষ্যটা ১৮.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়েই পেরিয়ে যান নিগাররা।
রান তাড়ার শুরুটা অবশ্য শঙ্কা জাগিয়েছিল। ১০ ওভারের প্রথম পাওয়ার প্লেতে ২৩ রান করতেই ১ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ওপেনার ফারজানা হক ১৭ বলে মাত্র ২ রান করে এলবিডব্লু হয়েছেন ডায়ানা বেগের বলে।
পাওয়ার প্লের পর ১২তম ওভারের শেষ বলে ফিরে যান তিনে নামা শারমিন আক্তার। ১০ রান করতে ৩০ বল খেলতে হয়েছে শারমিনকে। শারমিন ফেরার পর ওপেনার রুবাইয়া হায়দার ও নিগার সুলতানা পরের দুই ওভারে তুলতে পারেন মাত্র ২ রান।
বাংলাদেশ গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে ১৫তম ওভারে। পাকিস্তান নারী দলের সাদিয়া ইকবালকে চার মেরে আড়মোড়া ভাঙেন অধিনায়ক নিগার সুলতানা। পাকিস্তানি অফ স্পিনার রামিন শামীমের করা পরের ওভারে আসে ১৩ রান, দুই চারে যার ৯-ই নিগারের। রান-উৎসবে এরপর যোগ যেন রুবাইয়াও। বাঁহাতি স্পিনার নাশরা সান্ধুর করা ১৯তম ওভারে তিনটি চার মারেন এদিনই প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলতে নামা রুবাইয়া।
শেষ পর্যন্ত অভিষেকটা ফিফটি করে রাঙিয়েছেন তিনি। ৬২ রানের জুটি গড়ে অধিনায়ক নিগার সুলতানা ফিরে গেলেও ২৮ বছর বয়সী রুবাইয়া ফিরেছেন দলকে জিতিয়ে, সঙ্গে একটা রেকর্ড নিয়েও। ৭৭ বলে ৮ চারে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। মেয়েদের ওয়ানডে অভিষেকে যা বাংলাদেশের ব্যাটারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। রুবাইয়া ভেঙেছেন আয়েশা রহমানের রেকর্ড, ২০১১ সালে বিকেএসপিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৩ রান করেছিলেন আয়েশা।
৪৪ বলে ২৩ রান করে নিগারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামা সোবহানা মোস্তারি ১৯ বলে করেন অপরাজিত ২৪ রান। ৬টি চার ছিল সোবহানার ইনিংসে।
এর আগে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন পেসার মারুফা আক্তার। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে ওমাইমা সোহেল ও সিদরা আমিনকে ফেরান মারুফা। দুর্দান্ত এক বলে প্রথম উইকেটটি পেয়েছেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া ফুলার লেংথের বলটা বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকে লেগ স্টাম্পে আঘাত হানে। ‘গোল্ডেন ডাক’ পান পাকিস্তান ওপেনার ওমাইমা। পরের বলে আরেকটি ‘গোল্ডেন ডাক।’ এবারও অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢুকছিল বলটি, সিদরা ড্রাইভ করতে গিয়ে সেটিকে টেনে নিয়ে যান লেগ স্টাম্পে। হ্যাটট্রিক অবশ্য পাননি মারুফা, থেমেছেন এই ২ উইকেট নিয়েই।
তবে ম্যাচ সেরা মারুফার ওই শুরুটাকেই টেনে নিয়ে গেছেন বাংলাদেশের অন্য বোলাররা। তাঁদের মধ্যে আলাদা করেই বলতে হয় লেগ স্পিনার স্বর্ণা আক্তারের কথা। ৩.৩ ওভার বল করে মাত্র ৫ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাঁর পুরো করা তিনটি ওভারই ছিল মেডেন।
২ রানে ২ উইকেট খোয়ানোর মুনিবা আলীকে নিয়ে ৪২ রান যোগ করেন পাকিস্তানের রামিন শামীম। পরপর দুই ওভারে এ দুজনকে ফিরিয়ে আবারও পাকিস্তানকে চাপে ফেলেন বাঁহাতি স্পিনার নাহিদ আক্তার। এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট তুলে নিতে থাকেন বাংলাদেশের বোলাররা। ফল, ৩৮.৮ ওভারে ১২৯ রানে অলআউট পাকিস্তানের মেয়েরা।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেয়েদের বিপক্ষে এটিই কোনো দলের সর্বনিম্ন রান। আগের সর্বনিম্ন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের করা ৯ উইকেটে ১৪০ রান। ২০২২ সালে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। রান তাড়ায় বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল ১৩৬ রানে। আজ এমন কিছুর শঙ্কা দূর হয়েছে অভিষিক্ত রুবাইয়াতের ব্যাটে।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ অক্টোবর, গুয়াহাটিতে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ৩৮.৩ ওভারে ১২৯ (রামিন ২৩, সানা ২২, মুনিবা ১৭, ডায়না ১৬*, সিদরা ১৫, আলিয়া ১৩; স্বর্ণা ৩/৫, নাহিদা ২/১৯, মারুফা ২/৩১)।বাংলাদেশ: ৩১.১ ওভারে ১৩১/৩ (রুবাইয়া ৫৪*, সোবহানা ২৪*, নিগার ২৩; ডায়না ১/১৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মারুফা আক্তার।