বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখের আদলে বানানো হয়েছ অসুর। অন্যদিকে দেবী দুর্গার হাতে কাটা নরমুণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের মুখের আদলে। ভারতের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নেওয়া তিন রাষ্ট্রপ্রধানের মুখের আদলে অসুরের অবয়ব প্রতিস্থাপন করে পূজার আয়োজন করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। 

পূজার থিমের এমন ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা কূটনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী হলেও পূজা উদ্যোক্তারা জানিয়েছে বিষয়টিকে দেশের শত্রুদের বিনাশের প্রতীকী উপস্থাপনা হিসাবেই তারা দেখছেন । 

রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর খাগড়া সাধক নরেন্দ্র স্মৃতি সংঘের মণ্ডপে নজরে এসেছে ড.

ইউনূস ও শেহবাজ শরিফকে অসুর বানানোর দৃশ্য। ব্যতিক্রমী এই পূজা মন্ডপে প্রবেশ করলে দর্শনার্থীদের চোখে পড়ছে দুর্গার পায়ের নিচে অসুরকে। যার চেহারা হুবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আদলে। অন্যদিকে দেবী দুর্গার হাতে রয়েছে একটি কাটা নরমুণ্ড। এর মুখাবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের আদলে। 

তৃতীয়া থেকেই প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় জমাচ্ছেন অভিনব এই থিমের পূজা প্যান্ডেল ও প্রতিমা দেখতে। পুজা কমিটির দাবি তাদের এই বছর পূজার থিমের নাম ‘দহন’। দেশের শত্রুদের বিনাশের প্রতীকী উপস্থাপনাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। 

এবারের বহরমপুরের আরেক পূজা মণ্ডপের বিশেষ আকর্ষণ ডোনাল্ড ট্রাম্পরূপী মহিষাসুর। ব্লন্ড চুল, ফর্সা গায়ের রঙের এই মহিষাসুরের দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছে মুর্শিদাবাদের খাগড়া শ্মশানঘাট দুর্গাপূজা কমিটি। ৫৯ তম বছরের দুর্গাপূজায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদলে এই পূজা কমিটির মহিষাসুরের মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পী অসীম পাল। শয়ে শয়ে দর্শনার্থী এই অসুর দেখতে জড়ো হচ্ছে মুর্শিদাবাদের এই মণ্ডপে।

পূজা কমিটির উদ্যোক্তারা বলছেন, বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাই তাকে মহিষাসুরের রূপ দেওয়া হয়েছে। 

উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বন্ধু এবং বৈদেশিক নীতিতে যোগ্য পার্টনার বলেই মনে করেছেন। অথচ ট্রাম্পের কাজকর্ম ভারতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সেই থেকে তার প্রতি বিরূপ মনোভাবই মহিষাসুরের মধ্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।”

দুর্গাপূজায় এমন মহিষাসুরর রূপে বিখ্যাত ব্যক্তিদের মুখাবয়ব ফুটিয়ে তোলার বিতর্কিত উপস্থাপনা পশ্চিমবঙ্গের প্রথম নয়। কসবায় ২০২২সালে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু মহাসভার দুর্গাপূজায় অসুরের চেহারা ফুটিয়ে তোলা হয় অবিকল ভারতীয় জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর মুখের আদলে। 

সুচরিতা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ম খ র আদল ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর

বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!

কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!

চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।

এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)

সম্পর্কিত নিবন্ধ