‘তারা না থাকলে দীপা হয়ে উঠতে পারতাম না।’
Published: 28th, September 2025 GMT
বাংলাদেশ থেকে অস্কারে যাচ্ছে লিসা গাজীর ছবি ‘বাড়ির নাম শাহানা’। অস্কারের বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে বাংলাদেশ থেকে ছবিটি জমা দেওয়া হবে। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ (বিএফএফএস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম বিভাগে প্রতিযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ থেকে জমা পড়ে পাঁচটি সিনেমা। এর মধ্য থেকে লিসা গাজীর ছবিটিকে চূড়ান্ত করে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজের তত্ত্বাবধানে গঠিত অস্কার বাংলাদেশ কমিটি।
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চান তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘বাড়ির নাম শাহানা’। আগে তথ্যচিত্র নির্মাণ করলেও এটিই লিসার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। নিজের গল্প থেকে আনান সিদ্দিকার সঙ্গে যৌথভাবে চিত্রনাট্য লিখেছেন লিসা গাজী।
বাংলাদেশ থেকে সিনেমাটি অস্কারে পাঠানোর জন্য নির্বাচিত হওয়ায় আনন্দিত ছবির নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। নির্মাতা লিসা গাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নানা বাধা সত্ত্বেও যাঁরা নিজেদের পথ নিজেরাই গড়ে তোলেন, সেই নারীদের সাহস আর আবেগময় গল্পগুলো আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে। আমি সেই গল্পগুলোই বলতে চেয়েছি। এ গল্প অস্কারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, তা চিন্তা করে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এটা কি সত্যি? বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার পরও অনেক দর্শকের প্রশংসা পেয়েছি, অনেকেই এই গল্পে নিজের প্রতিচ্ছবি পেয়েছেন, নির্মাতা হিসেবে এটাই সার্থকতা।’
‘বাড়ির নাম শাহানা’র পোস্টার। ছবি : অভিনেত্রীর সৌজন্যে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)