উন্মুক্ত কেওক্রাডং, স্বস্তিতে পর্যটন ব্যবসায়ীরা
Published: 1st, October 2025 GMT
বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কেওক্রাডং পর্যটকদের জন্য আজকে (১ অক্টোবর) থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হলো।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,১৭২ ফুট (৯৬৬ মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত এ স্পট দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর পুনরায় খুলে দেওয়ায় পর্যটকদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
ছুটির প্রথম দিনেই দুই শতাধিক পর্যটক কেওক্রাডং ভ্রমণে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন রুমা টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সাফুল বড়ুয়া।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এলাকায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে কেওক্রাডং ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রশাসন। প্রায় দুই বছর পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও উন্মুক্ত করা হয়েছে এ পাহাড় চূড়া। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
রুমা পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এতদিন পুরো ব্যবসা একেবারে মরা অবস্থা ছিল। অনেক আবাসিক হোটেল, দোকানপাট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তবে চলতি বছরের ৬ জুন রুমার বগালেক উন্মুক্ত হওয়ার পর কিছুটা আশার আলো জাগে। এবার কেওক্রাডং খোলায় আবারো জমজমাট হয়ে উঠছে। তাদের আশা, এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
চাঁদের গাড়ি চালক মনির হোসেন বলেন, “টুরিস্ট না থাকায় অনেকে গাড়ি চালানো ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গিয়েছিলেন। এখন আবার পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
টুরিস্ট গাইড মংক্য সিং মারমা বলেন, “রুমা উপজেলা কেওক্রাডং সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। কেওক্রাডং বন্ধ থাকায় অনেক গাইড বেকার হয়ে পড়েছিলেন। তবে বগালেক খোলার পর আবার কিছুটা কাজ শুরু হয়। এখন কেওক্রাডং খোলায় আমরা অনেক খুশি।”
রুমা টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক সাফুল বড়ুয়া জানান, রুমায় বর্তমানে ৬১ জন অনুমোদিত টুর গাইড আছেন। প্রতি ১৪ জন পর্যটকের জন্য একজন গাইড দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে প্রতি ৬টি মোটরবাইকের জন্য একজন গাইড ইন করা হয়। গাইড ভাড়া একদিনের জন্য এক হাজার টাকা এবং রাতযাপন করলে ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানান, গত ৬ জুন বগালেক, থানচির তিন্দু ও তুমাতুঙ্গি খোলার পর থেকেই পর্যটক বাড়ছে। এবার কেওক্রাডং খুলে দেওয়ায় পর্যটন আরো বেড়েছে। এরইমধ্যেই ৪ অক্টোবর পর্যন্ত আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট ভেদে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ বুকিং রয়েছে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.
জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “সব দিক বিবেচনা করেই কেওক্রাডং পাহাড় ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান নিয়মকানুন মেনে পর্যটকেরা সেখানে ভ্রমণ করতে পারবেন। অন্যন্য বন্ধ পর্যটন কেন্দ্রগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে।”
ঢাকা/চাইমং/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উন ম ক ত পর যটক র জন য ব যবস ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
সৌন্দর্যের মায়াবি হাতছানিতে পর্যটকদের কাছে ডাকছে শ্রীমঙ্গল
রোদ ঝলমলে শরতের আকাশ। মাঝে নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ। তার নিচে বিছিয়ে দেওয়া কার্পেটের মতো সবুজ চা বাগান। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রকৃতির এমন মায়াবী রূপ মন কেড়েছে পর্যটকদের।
“মৌলভীবাজারের প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের গল্প অনেক শুনেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখিনি। এখানে এসে মন ভরে গেছে। যে দিকে তাকাই সে দিকেই সবুজ আর সবুজ। এই সৌন্দর্য স্বচক্ষে দেখে মাতোয়ারা হয়ে যাই।” এমনটা বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আব্দুল মজিদ মোল্লা।
ঢাঙ্গাইল থেকে আসা পর্যটক ফারজানা বলেন, “প্রকৃতির অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে এই মৌলভীবাজারে।”
শরতের রোদেলা দুপুরে জেলার ঐতিহ্যবাহী চা কন্যা ভাস্কর্যের কাছে তার সাথে কথা হয়। মৌলভীবাজারের প্রবেশ পথেই পর্যটকদের বিমহিত করে এই দৃশ্য।
দুর্গাপূজার টানা ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে চায়ের রাজ্যখ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় ভিড় জমেছে এখানকার হোটেল-রির্সোট গুলোতে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বেশকিছু দর্শণীয় স্থান ঘুরে দেখা যায় দল বেঁধে পর্যটকরা সবুজ প্রকৃতির সাথে মিশে ঘুরাঘুরি করছেন, ছবি তুলছেন। এসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে কয়েকজন বিদেশি পর্যটককেরও দেখা পাওয়া গেল।
প্রতি বছর শেষ শরতে এখানে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। একদিকে পর্যটন মৌসুমের শুরু, অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে সরকারি বাড়তি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সারা দেশ থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা ছুটে এসেছেন এই চায়ের রাজ্যে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট অঞ্চলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের প্রথম পছন্দই হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। ৯০ শতাংশ পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রীযাপন করে থাকেন। বাকি ১০ শতাংশ পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করেন।
তারা এখানে অবস্থান করে পুরো জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। এবং এ জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগকরেন।
শ্রীমঙ্গল রামনগর রিসোর্টে কর্মরত হিরনময় সিং বলেন, “দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে এরইমধ্যে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ ৯০% থেকে ৯৫% রিজার্ভ হয়ে গেছে। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই হোটেল রিসোর্ট-গুলোতে পর্যটকরা অবস্থান করছেন। যে কোন ছুটিতেই পর্যটকদের ভিড় থাকে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে। আকর্ষণীয় সবুজ চা বাগান আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান শ্রীমঙ্গল।”
পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য বলেন, “ভালো গাইডের অভাবে এখানে পর্যটকরা এসে এলোমেলো হয়ে যান। গাইড লাইন দিয়ে সেবা দিলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারেন। কম সময়ে অনেক স্পট দেখতে পারেন।”
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিকেট কাউন্টার ম্যানেজার শাহিন মাহমুদ জানান, দুদিন ধরে সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত শতাধিক পর্যটক টিকিট নিয়ে লাউয়াছড়া বনের ভেতরে প্রবেশ করেছেন। দেশিয় পর্যটকের পাশাপাশি কয়েকজন বিদেশি পর্যটকও রয়েছেন।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবাসংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, “মৌলভীবাজার জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যে কোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাত যাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গল হোটেল-রিসোর্টে বুকিং রয়েছে ৯০% পার্সেন্ট।”
শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে ভাড়া বেশি হওয়ায় পর্যটকরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “হোটেলের মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করেন হোটেল রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। আবার কিছু ব্যবসায়ী আছেন মান অনুযায়ী সেবা দেন না বরং বেশি টাকা নিয়ে থাকেন। আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি যেন পর্যটকরা প্রতারিত না হয়।”
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২০০৮ সাল মৌলভীবাজার পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা হওয়ার পর থেকে চাহিদা অনুযায়ী আবাসন গড়ে ওঠেনি। রাস্তা ঘাটের তেমন কোন উন্নয়ন হয়নি। এ পর্যন্ত যে অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তার বেশিরভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হচ্ছে না।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিয়োজিত সিনিয়রট্যুর গাইড সৈয়দ শিপন আলী বলেন, “আমরা যথাযথভাবে পর্যটকদের সেবা দিতে চেষ্টা করি। গতকয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছে। তবে বিদেশি পর্যটক কম আসছেন। দুই-তিন জন বিদেশি পর্যটকের দেখা মিলেছে গত শুক্রবারে।’’
পর্যটন সেবা সংস্থার সাবেক সভাপতি সেলিম আহমেদ বলেন, “টানা ছুটিতে যথেষ্ট পরিমাণ পর্যটক আসছেন। এছাড়া শীতের সময় এমনিতেই পর্যটক আসবেন। বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ পর্যটক আসেন, সে পরিমাণ থাকার হোটেল রিসোর্ট এখানে নেই। বেসরকারিভাবে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে সে তুলনায় সরকারিভাবে তেমন কিছুই গড়ে ওঠেনি।”
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে বলেন, “সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা সহজে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমাদের আরো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে এবং আমরা আরো সুন্দরভাবে সাজাতে পারব।”
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, “মৌলভীবাজার অপূর্ব সৌন্দর্যের ক্ষেত্র আমরা পর্যটকদের সুবিদা দিতে প্রস্তুত। টুরিস্টদের জন্য চমৎকার একটা পর্যটন স্পট আমরা সবগুলো ক্ষেত্রে উপহার দিতে পারি।”
ঢাকা/আজিজ/এস