এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া হতাশাজনক
Published: 4th, October 2025 GMT
গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতা-কর্মীরাও হত্যাযজ্ঞে অংশ নেন। তাঁদের গুলিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের নানা জেলায় নিহত হন অনেক মানুষ। আহতের সংখ্যাও বিপুল। দুঃখজনক হচ্ছে, গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও অস্ত্রধারী দলীয় এসব সন্ত্রাসী এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। এর মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সেই অধরা অস্ত্রধারীদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পাল্টাল, তখন ফেনী ও চট্টগ্রামের রাজপথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচার ছিল জেলা দুটির মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা। এক বছর পেরোলেও সেই প্রত্যাশা পূরণের চিত্র হতাশাজনক। ফেনীর মহিপালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাবের মতো স্বপ্নবান তরুণদের পরিবারগুলো এখনো ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। শিহাবের মা মাহফুজা আক্তারের প্রশ্ন সরল, ‘গুলি চালানো চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোথায়?’
ফেনীতে আন্দোলনের সময় গুলি ছুড়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর অনুগত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মহিপালে শিহাবসহ মোট সাতজন ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে হামলায় অংশ নেওয়া অন্তত ৩০ জনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলেও, নিজাম হাজারীসহ শীর্ষ নেতাদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। একই চিত্র চট্টগ্রামেও। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেট এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি চালানো ২৭ জন চিহ্নিত অস্ত্রধারীর অধিকাংশই এখনো অধরা। তাঁরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
এ ঘটনার সবচেয়ে বড় রহস্য হলো ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো। নিজাম হাজারীর ক্যাডারদের হাতে এম-১৬ রাইফেলের মতো যুদ্ধাস্ত্র থাকার প্রচার থাকলেও, ফেনী বা চট্টগ্রাম কোথাও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধার হয়নি। ফেনীর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ‘অস্ত্র ফেনীতে আছে বলে মনে হয় না।’ এই ব্যর্থতা কেবল পুলিশি তদন্তের দুর্বলতাই নয়, বরং একটি শক্তিশালী অপরাধী নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়, যা প্রমাণ লোপাট করতে সক্ষম।
ফেনীর প্রধান অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন হাজারী বর্তমানে সাইপ্রাসে পালিয়ে গেছেন। তাঁর সহযোগী স্বপন মিয়াজিসহ অন্য শীর্ষ নেতারাও ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যে আত্মগোপন করে আছেন। পলাতক থাকা সত্ত্বেও এই নেতারা নিষ্ক্রিয় নন; বরং তঁারা বিদেশ থেকে ভিডিও কল ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ফেনীর রাজনীতিতে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। দলীয় কর্মীদের প্রতি মাসে অর্থ অনুদান দেওয়ার খবর প্রমাণ করে যে তাঁদের অর্থ ও প্রভাবের ভিত্তি এখনো মজবুত। অন্যদিকে মামলায় নাম থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যঁাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, এমন তৃণমূলের কর্মীরাও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলা ছাড়া এভাবে গ্রেপ্তার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আমরা আশা করব ব্যর্থতার দাগ মুছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। এটি শুধু ন্যায়বিচারের প্রশ্নই নয়, আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পলাতক অস্ত্রধারীদের যেভাবেই হোক গ্রেপ্তার করতে হবে। শীর্ষ পলাতক আসামিদের আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস ও অবস্থান খুঁজে বের করে অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মামলাগুলোর তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ ত র জন ত কর ম র প রক শ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি উপলক্ষে প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। শান্তিপূর্ণভাবে এই উৎসব শেষ করার জন্য পুলিশ, র্যাব, এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
আরো পড়ুন:
ছুটোছুটির মধ্যে কাটছে মিমের পূজা
বুড়িগঙ্গায় চলছে প্রতিমা বিসর্জন
পুলিশ জানায়, প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা এবং বিসর্জন স্থানসমূহে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে কয়েক হাজার পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। শুধু ঢাকাতেই প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ সদস্য এবং অতিরিক্ত আরো প্রায় ২ হাজার ৪০০ ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া র্যাবের ৯৪টি টহল টিম সাদা পোশাকে নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছে।
বিশেষ নজরদারি
প্রতিমা বিসর্জনের মূল ঘাটগুলো, যেমন—পলাশীর মোড়, রায়সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাট এলাকায় অস্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ঘাটকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
বিশেষ ইউনিট প্রস্তুত
যেকোনো জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত, বোম ডিসপোজালও কে-নাইন ইউনিটকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নৌ-নিরাপত্তা:
নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে কোস্টগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সাঁতার না জানা ব্যক্তিদের নৌকায় উঠতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে এবং যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরার অনুরোধ করা হয়েছে। বিসর্জনস্থলে প্রশিক্ষিত ডাইভার (ডুবুরি দল) প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো বন্ধে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। অধিকাংশ মণ্ডপের প্রতিমা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে একত্রিত হয়ে সেখান থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ:
শোভাযাত্রার পথ নির্বিঘ্ন রাখতে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। শোভাযাত্রার সময় যান চলাচলের জন্য বিকল্প পথের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পূজা কমিটির প্রতি নির্দেশনা:
পূজামণ্ডপগুলোতে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মণ্ডপে ব্যাগ, থলে বা পোঁটলা নিয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। সব নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর তৎপরতায় প্রতিমা বিসর্জন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
ঢাকা/এমআর/এসবি