গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতা-কর্মীরাও হত্যাযজ্ঞে অংশ নেন। তাঁদের গুলিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের নানা জেলায় নিহত হন অনেক মানুষ। আহতের সংখ্যাও বিপুল। দুঃখজনক হচ্ছে, গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও অস্ত্রধারী দলীয় এসব সন্ত্রাসী এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। এর মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার সেই অধরা অস্ত্রধারীদের নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পাল্টাল, তখন ফেনী ও চট্টগ্রামের রাজপথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের বিচার ছিল জেলা দুটির মানুষের অন্যতম প্রত্যাশা। এক বছর পেরোলেও সেই প্রত্যাশা পূরণের চিত্র হতাশাজনক। ফেনীর মহিপালে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গুলিতে নিহত ওয়াকিল আহমেদ শিহাবের মতো স্বপ্নবান তরুণদের পরিবারগুলো এখনো ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে। শিহাবের মা মাহফুজা আক্তারের প্রশ্ন সরল, ‘গুলি চালানো চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কোথায়?’

ফেনীতে আন্দোলনের সময় গুলি ছুড়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর অনুগত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মহিপালে শিহাবসহ মোট সাতজন ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান। প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে হামলায় অংশ নেওয়া অন্তত ৩০ জনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলেও, নিজাম হাজারীসহ শীর্ষ নেতাদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। একই চিত্র চট্টগ্রামেও। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেট এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি চালানো ২৭ জন চিহ্নিত অস্ত্রধারীর অধিকাংশই এখনো অধরা। তাঁরা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

এ ঘটনার সবচেয়ে বড় রহস্য হলো ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রগুলো। নিজাম হাজারীর ক্যাডারদের হাতে এম-১৬ রাইফেলের মতো যুদ্ধাস্ত্র থাকার প্রচার থাকলেও, ফেনী বা চট্টগ্রাম কোথাও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রের উল্লেখযোগ্য অংশ উদ্ধার হয়নি। ফেনীর পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ‘অস্ত্র ফেনীতে আছে বলে মনে হয় না।’ এই ব্যর্থতা কেবল পুলিশি তদন্তের দুর্বলতাই নয়, বরং একটি শক্তিশালী অপরাধী নেটওয়ার্কের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়, যা প্রমাণ লোপাট করতে সক্ষম।

ফেনীর প্রধান অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিন হাজারী বর্তমানে সাইপ্রাসে পালিয়ে গেছেন। তাঁর সহযোগী স্বপন মিয়াজিসহ অন্য শীর্ষ নেতারাও ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যে আত্মগোপন করে আছেন। পলাতক থাকা সত্ত্বেও এই নেতারা নিষ্ক্রিয় নন; বরং তঁারা বিদেশ থেকে ভিডিও কল ও আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে ফেনীর রাজনীতিতে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। দলীয় কর্মীদের প্রতি মাসে অর্থ অনুদান দেওয়ার খবর প্রমাণ করে যে তাঁদের অর্থ ও প্রভাবের ভিত্তি এখনো মজবুত। অন্যদিকে মামলায় নাম থাকা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত কম প্রভাবশালী নেতা-কর্মীরাই গ্রেপ্তার হচ্ছেন। যঁাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই, এমন তৃণমূলের কর্মীরাও একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। মামলা ছাড়া এভাবে গ্রেপ্তার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা আশা করব ব্যর্থতার দাগ মুছে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। এটি শুধু ন্যায়বিচারের প্রশ্নই নয়, আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পলাতক অস্ত্রধারীদের যেভাবেই হোক গ্রেপ্তার করতে হবে। শীর্ষ পলাতক আসামিদের আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত গ্রেপ্তার ও প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করতে হবে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের উৎস ও অবস্থান খুঁজে বের করে অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মামলাগুলোর তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ ত র জন ত কর ম র প রক শ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহনের সংখ্যা কম

মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতু ও ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে । এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও তার সংখ্যা কম।

শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, অনলাইনে ঘোষিত কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচির কারণে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার আশপাশে ও ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা টোল প্লাজার আশপাশের সড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েতে টহল দেওয়া শুরু করেছেন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীবাহী পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল করছে।

গতকাল রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি শরীয়তপুরের পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
 
এদিকে আজ সকাল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন ছাত্রশিবির ও বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

আজ সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, যানবাহন চলাচল করছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলমুখী এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপার হচ্ছে। তবে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা কম।

আরও পড়ুনপদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ, ট্রাকে আগুন, যানবাহন চলাচল বন্ধ১৩ নভেম্বর ২০২৫

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমেদ তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল থেকে ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের যানবাহন চলাচল করছে। পথে কোথাও যানবাহন বাধার মুখে পড়েনি। তবে যাত্রীর উপস্থিতি কম। যানবাহনও কম চলাচল করছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে পদ্মা সেতু দিয়ে। যেহেতু একটি সংগঠনের ঘোষিত কর্মসূচি রয়েছে, তাই পদ্মা সেতু এর আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নিরাপত্তার জন্য টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আরও পড়ুনজুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় আজ৫৭ মিনিট আগে

পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঢাকা যাওয়ার পথে যাত্রাবিরতি করেছিলেন। তখন আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। আজ সকাল পর্যন্ত শরীয়তপুরে পদ্মা সেতুর আশপাশে ও এক্সপ্রেসওয়েতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। আমরা চেষ্টা করছি জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানমন্ডি ৩২: সাউন্ড গ্রেনেড ফাটার পর ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা
  • সরকারের প্রস্তুতি ভালো থাকায় নাশকতা হয়নি
  • ‘৩২ নম্বর ধূলিসাৎ না করা পর্যন্ত ফিরব না’
  • শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: গোপালগঞ্জে মিছিল, সড়ক অবরোধের চেষ্টা
  • হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঘিরে আতঙ্ক নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়া ২টি বুলডোজার আটকে দিল সেনাবাহিনী
  • শেখ হাসিনার রায়কে ঘিরে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার
  • পটুয়াখালীতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন, প্রভাব পড়েনি শাটডাউনের
  • এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা সেতুতে নিরাপত্তা জোরদার, যানবাহনের সংখ্যা কম