মুনাফা কমলেও রেকর্ড লভ্যাংশ দেবে ইবনে সিনা ফার্মা
Published: 5th, October 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানি ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বা প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা কমে গেছে। গত জুনে সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৬৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৬৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটি আজ রোববার শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মুনাফার এই তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে তা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। তাতে মুনাফার এই তথ্য পাওয়া যায়। আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি কোম্পানিটি গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের ৬৪ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। তাতে একজন শেয়ারধারী একটি শেয়ারের বিপরীতে ৬ টাকা ৪০ পয়সা করে লভ্যাংশ পাবেন। বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমে অনুমোদনের পর এই লভ্যাংশ শেয়ারধারীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দেওয়া কোম্পানিটির তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তা রেকর্ড। ডিএসইতে ২০০৯ সাল থেকে কোম্পানিটির লভ্যাংশের তথ্য রয়েছে। তাতে দেখা যায়, এবারই কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ৬৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আর আগে সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ৬৩ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোম্পানিটি যে লভ্যাংশের প্রস্তাব করেছে, তাতে এ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ২০ কোটি টাকা, যা কোম্পানিটির গত অর্থবছরের মোট মুনাফার প্রায় এক–তৃতীয়াংশ। যার মধ্যে বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা। কারণ, এটির শেয়ারের প্রায় ৪৫ শতাংশই রয়েছে তাঁদের হাতে। তাই ঘোষিত লভ্যাংশবাবদ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা পাবেন প্রায় ৯ কোটি টাকা। বাকি শেয়ারের মধ্যে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে ব্যক্তি শ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ঘোষিত লভ্যাংশবাবদ পাবেন প্রায় ৬ কোটি টাকা। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ শেয়ার। তাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশবাবদ পাবেন প্রায় ৫ কোটি টাকা।
এদিকে রেকর্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও মুনাফা কমে যাওয়ায় আজ শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে। রোববার লেনদেনের প্রথম দুই ঘণ্টায় এটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ২ টাকার বেশি কমে ৩০৫ টাকায় নেমে আসে। এ সময়ে কোম্পানিটির ১৭ হাজার শেয়ারের হাতবদল হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে ১৪ দিনে ২০ কোটি টাকার ইলিশ রপ্তানি
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। গত সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে এক লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ। এই ইলিশ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার বা প্রায় ২০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছর ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান সোমবার পর্যন্ত কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এই দুটি স্থলবন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে আর ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই।
স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে এমন আশায় ছিলাম আমরা। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি, লোকসান হয়েছে। তাই আর রপ্তানি করছি নাআবদুল মান্নান, পরিচালক, প্যাসিফিক সি ফুডসএক দশকে সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, এক দশকের মধ্যে ২০১৯ সালে ইলিশ রপ্তানি শুরু হয়। ওই বছর চার লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। রপ্তানি আয় হয় ৩৯ লাখ ডলার বা ৩৩ কোটি টাকা। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই বছর ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এ সময়ে রপ্তানি আয় হয় এক কোটি ৩৪ লাখ ডলার বা ১৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এবারই ভারতে সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে।
এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। তবে সিংহভাগই রপ্তানি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।’
আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানিমূল্য কম। ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে ইলিশ আমদানি করে ভারত। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিমাণে ইলিশ আমদানি করে মিয়ানমার থেকে। যেমন ২৪-২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল-মার্চ) দেশটি মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে। গড়ে ভারতের আমদানিমূল্য ছিল ছয় ডলার ২৩ সেন্ট। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে পাঁচ লাখ ৪২ হাজার কেজি ইলিশ। গড় আমদানিমূল্য ছিল ১০ ডলার ৯৩ সেন্ট।
কত দামে ইলিশ গেল
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা এক হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। ন্যূনতম রপ্তানিমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।
যেমন এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালানের ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য, অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে। শুধু একটি চালান ন্যূনতম রপ্তানিমূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে। এই চালানটি রপ্তানি করেছে ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ৪২০ কেজি ইলিশ কেজিপ্রতি ১৩ ডলার ৬০ সেন্ট করে রপ্তানি করেছে।
প্রতিবার অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানি
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে পাঁচ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম সব সময় ওঠানামা করে। বেশি পরিমাণে রপ্তানি করার আশায় অনুমোদন নিয়ে থাকেন রপ্তানিকারকেরা। তবে সব সময় স্থানীয় বাজারে দরদাম বিবেচনা করে রপ্তানি করতে হয়। স্থানীয় বাজারের দাম বেশি থাকায় এবার অনুমতি পাওয়া পরিমাণের চেয়ে অনেক কম পরিমাণে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।