ভারতের বিহার রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ৬ ও ১১ নভেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গণনা ও ফল ঘোষণা করা হবে ১৪ নভেম্বর। আজ সোমবার ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) এই ঘোষণা দিয়েছে।

২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভার বর্তমান মেয়াদ আগামী ২২ নভেম্বর শেষ হবে। ছট্ পূজার পরপরই যাতে ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়, এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কমিশনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিল।

রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি, ছট্ পূজা উপলক্ষে রাজ্যের বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষ ঘরে আসেন। তাই পূজার পরপর ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হলে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভোট দিতে পারবেন। ইন্ডিয়া টু-ডের তথ্যমতে, চলতি বছর বিহারে ২৫ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চার দিনব্যাপী ছট্ পূজা উদ্‌যাপিত হবে।

আজ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে গত শনিবার ও রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার এবং দুই নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু ও বিবেক জোশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে টানা বৈঠক করেন। তাঁরা বিহারের রাজধানী পাটনায় রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নিরাপত্তা, ভোট গ্রহণের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন।

আজকের ঘোষণায় কমিশন জানিয়েছে, ‘স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত পরিবেশে’ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে অনেক দল দুই দফার বদলে এক দফায় ভোট গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল।

জনতা দলের (ইউনাইটেড) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সঞ্জয় কুমার ঝা বলেন, ‘আমরা কমিশনকে অনুরোধ করেছি, যেন এক দফায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এটা সম্ভব। বিহারে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলার কোনো সমস্যা নেই, নকশালদের সহিংসতাও নেই। তাই মহারাষ্ট্রে এক দফায় ভোট হতে পারলে এখানে কেন নয়?’

বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধীদের জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া) শিগগিরই আসন ভাগাভাগির ঘোষণা দেবে বলে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া জোটের শরিক ও বিহারের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) জানিয়েছে, ‘জোটের আসন ভাগাভাগি প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে।’

২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ৭৪ আসন ও নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ৪৩ আসন পেয়েছিল। অপরদিকে মহাগঠবন্ধন (আরজেডি, কংগ্রেস ও বাম দলগুলোর জোট) পেয়েছিল ১১০ আসন। এর মধ্যে আরজেডি পেয়েছিল ৭৫টি, কংগ্রেস ১৯টি ও বাম দলগুলো ১৬টি আসন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ট গ রহণ র দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস

খাগড়াছড়ি জেলা সদর এবং গুইমারা উপজেলায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনার জন্য ইউপিডিএফের উসকানিকে দায়ী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এ ঘটনায় জেএসএসের পক্ষ থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে।

‘খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই অভিযোগ করা হয়। আজ রোববার প্রকাশিত এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে জেএসএসের তথ্য ও প্রচার বিভাগ। জেএসএসের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা প্রতিবেদন প্রকাশের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর এর প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে গত ২৭ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে অবরোধ ডাকা হয়। অবরোধের মধ্যেই গত ২৮ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভ ও সহিংসতায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গুইমারার রামেসু বাজার। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অবরোধকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে তিন পাহাড়ি তরুণ নিহত হন। আর আগুন দেওয়া হয় বাজারে। এতে ৪০টি দোকান ও ৫০টি বসতঘর পুড়ে যায়। এদিকে গত মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয় মেডিকেল বোর্ড।

রোববার প্রকাশিত জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া পাহাড়ি ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার সঙ্গে ২৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাঙালিদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন পাহাড়ি ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারার রামেসু বাজারে পাহাড়ি বসতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাঙালি ও বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা একসঙ্গে হামলা চালায়। এতে ৩ পাহাড়ি নিহত হন। আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি। রামেসু বাজারে আগুনে ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাহাড়ি ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং পাহাড়ে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি সদরে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে মহাসমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই সমাবেশে ইউপিডিএফের কতিপয় লোক প্রবেশ করে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে এবং উসকানি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একইভাবে গুইমারা ঘটনাও ইউপিডিএফের উসকানিতে সহিংস রূপ লাভ করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।

জেএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণের প্রতিবাদকারী বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যেনু মারমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক জোরপূর্বক তুলে নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তাঁর নেতৃত্বে ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২৭ ও ২৮ অক্টোবর অবরোধ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল সাংগঠনিকভাবে যুক্ত নয় বলে বিবৃতি দেয়। এ থেকে বোঝা যায় আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ইউপিডিএফ ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে নানাভাবে উসকানি দিয়েছিল। এ ছাড়া দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী ইউপিডিএফের সমর্থক, পরামর্শক ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত দু-একজন ব্লগার ও ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভেদ, উসকানিমূলক এবং হঠকারী বক্তব্য দিতে দেখা যায়।

পাহাড়ে নারী ও শিশুদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত ২৯ জন পাহাড়ি নারী ও শিশু মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন। দশকের পর দশক ধরে নারী ও শিশুরা সহিংসতার শিকার হলেও সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত নেই। এমনকি সঠিক তদন্তও হয় না।

প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তবে জেএসএসের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, এটি একটি ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জেএসএসের বিবৃতি বা প্রতিবেদন দেখলে বোঝা যায়, জুম্ম ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে বিতর্কিত করে প্রত্যক্ষভাবে প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোট পর্যবেক্ষণে নামসর্বস্ব সংস্থার বিষয়ে সিইসি: তথ্য পেতে তালিকা পত্রিকায় দিয়েছে ইসি
  • খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সহিংসতার পেছনে ইউপিডিএফের উসকানি দায়ী: জেএসএস
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগিয়ে ধর্মীয় বিভেদ, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি
  • সেই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • অসুরের মুখে দাড়ি লাগানোর ঘটনায় কারা জড়িত, অনুসন্ধান চলছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ৮ দিন পর খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
  • খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
  • আট দফার বাস্তবায়ন চায় জুম্ম ছাত্র-জনতা
  • এক বছরেও গ্রেপ্তার না হওয়া হতাশাজনক