শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও চাকরি স্থায়ীকরণে কমিশন গঠন করবে বিএনপি
Published: 7th, October 2025 GMT
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণে উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করবে।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি রাষ্ট্র ও সমাজে শিক্ষকদের সম্মান এবং মর্যাদার সাথে রাষ্ট্রের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি জড়িত। দুর্নীতিবাজরা বিত্তবান হলে রাষ্ট্রের সমাজের ভাবমূর্তি কমে আর সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকলে সমাজের ভাবমূর্তি বাড়ে।”
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
ভারত যদি স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে দেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, আমাদের কিছু করার নেই
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ‘শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের’ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
তারেক রহমান বলেন, “রাষ্ট্র ও সমাজে দুর্নীতি নামক ব্যাধি রয়েছে। সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষকরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেন বলে আমি মনে করি।”
তিনি বলেন, “জনগণের ভোটে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে রাষ্ট্রের সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়ানো কিংবা চাকরি স্থায়ীকরণ কিংবা জাতীয়করণের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করব ইনশাআল্লাহ।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “অতীতের ভালো দৃষ্টান্তগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন আর খারাপ দৃষ্টান্তগুলো বর্জনের মধ্য দিয়ে একটি একটি সমৃদ্ধ সুন্দর নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নই হোক আমাদের এই সময়ের অঙ্গীকার।”
তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে প্রবেশ করেছে। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে সমান এবং মর্যাদার সাথে একটি প্রভাবশালী জাতি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকাই আমাদের সামনে এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদেরকে অর্থ-বিত্তে, মেধা-মননে, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতেই হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ। দেশের শিক্ষকগণই হচ্ছেন জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র-সমাজ গড়ার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। সুতরাং এই হাতিয়ার যদি দুর্বল হয় তাহলে রাষ্ট্রকেশক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করানো সম্ভব নয়। শিক্ষক সম্পর্কে জগৎবিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি কথা মনে করতে পারি। তিনি বলেছিলেন, ‘সৃষ্টিশীল প্রকাশ ও জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত করা হলো শিক্ষকের সর্বপ্রধান শিল্প।’ সুতরাং রাষ্ট্র, সরকার প্রশাসন এবং সমাজের নানা বাস্তবতায় একজন শিক্ষক যদি নিজেই নিরানন্দ পরিস্থিতিতে থাকেন তাহলে তার দ্বারা ‘জ্ঞানের মধ্যে আনন্দ জাগ্রত করা’ কি সম্ভব? সম্ভব নয়। এ কারণে রাষ্ট্র এবং সমাজে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সামাজিক সম্মান নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
তিনি উল্লেখ করেন, “প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি এমপিও কিংবা নন-এমপিও সবমিলিয়ে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমবেশি সম্ভবত প্রায় ৯৫ হাজার। এরমধ্যে সম্ভবত সম্পূর্ণ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। জনসংখ্যার তুলনায় দেশের বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই সংখ্যাকে হয়তো বেশি বলা যাবে না কিন্তু আমরা সবাই মিলে যদি শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত করতেই হবে। একদিকে আমাদের শিক্ষার ভিত্তি স্কুল-কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে পারি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষা ও গবেষণার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করতে পারি তাহলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুঁথিনির্ভর না রেখে শিক্ষা কারিকুলামকে স্কুল পর্যায় থেকেই ব্যবহারিক ও কারিগরি-নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় রূপান্তর করার বিকল্প নেই। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি ইতোমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।”
তিনি বলেন, “পারিবারিক পাঠশালার গণ্ডি পার হওয়ার পর প্রতিটি শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষক-শিক্ষিকারাই হচ্ছেন আদর্শ রোল মডেল। কিন্তু শিক্ষকরাই যদি রাষ্ট্র ও সমাজে প্রতিনিয়ত সংসার-সম্মান নিয়ে টানাপোড়েনে থাকেন তাহলে একজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপন সম্ভব নয়।”
তারেক রহমান বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা যাতে নিজেকে একজন রোল মডেল হিসেবে শিক্ষার্থীদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করতে পারেন সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা প্রণয়নে বিএনপি বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। বিএনপির কর্মপরিকল্পনায় শিক্ষকদের আর্থিক এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছি। দেশের শিক্ষক সমাজের বিশেষ করে স্কুল-মাদরাসার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা এবং সামাজিক সম্মান সমুন্নত করে শিক্ষকতা পেশাকে সুযোগ এবং সম্মানের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমি আগেও বলেছি, শিক্ষকতা পেশা কখনোই ‘উপায়হীন বিকল্প’ কিংবা একটি সাধারণ চাকরির মতো হতে পারে না। বরং, শিক্ষা-দীক্ষায় সবচেয়ে মেধাবী মানুষটি যাতে কর্মজীবনে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে শিক্ষকতা পেশাকে বেঁচে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিএনপি শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবেই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা এবং উপায় নিয়ে কাজ করছে।”
তিনি বলেন, “শিক্ষকদের নিয়ে আমি আমার একটি পরিকল্পনার কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসসহ প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে থাকেন। শুভেছা বিনিময় করে থাকেন। আমি মনে করি, এ ধরনের জাতীয় দিবসগুলোতে আমন্ত্রিতদের তালিকায় বাধ্যতামূলকভাবে অবশ্যই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের কমপক্ষে একজন করে শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানানো জরুরি।”
তারেক রহমান বলেন, “এটি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম পুনর্মূল্যায়ন করে রাষ্ট্র ও সমাজে শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের ‘রোল মডেল’ শিক্ষকদের সম্মানজনক অবস্থান এবং বিচরণ দেখতে পেলে সেটি অবশ্যই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই সমাবেশে আপনাদের অনেকের বক্তব্যে শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের প্রসঙ্গ এসেছে। কেউ কেউ আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করার কথা বলেছেন। এছাড়াও আপনাদের এই সংগঠনের বাইরেও বেসরকারি শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি রয়েছে।”
‘দেশের একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির সাথে নীতিগতভাবে অবশ্যই একমত। রাষ্ট্র ও রাজনীতির সংস্কার কিংবা নাগরিক উন্নয়নে আমরা যত উদ্যোগই গ্রহণ করি না কেন, শিক্ষাব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের আর্থসামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলবে না,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “একইসাথে প্রচলিত শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষা প্রধান করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ‘শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করা হবে। নৈতিকতা ও ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।”
তারেক রহমান বলেন, “রাষ্ট্র-রাজনীতি এবং সরকারের উন্নয়নে বিএনপির গৃহীত সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন। প্রয়োজন দেশের সবচেয়ে সচেতন অংশ শিক্ষকদের সমর্থন। একটি জ্ঞান ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনে আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি আপনাদের সমর্থন ও সহায়তা চায়। বিএনপি সম্মানিত শিক্ষক-কর্মচারী ভাই-বোনদের আন্তরিক সহযোগিতা চায়।”
ঢাকা/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ত র ক রহম ন ন শ চ ত কর ম ন বল ন ব যবস থ আপন দ র ব এনপ র গঠন কর র জন ত পর য য় আম দ র র জন য র স মন এমপ ও সরক র ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থহীনের অ্যালবামে সুমনের পুত্র আহনাফ
প্রায় তিন বছর পর অ্যালবাম প্রকাশের ঘোষণা দিল অর্থহীন। গতকাল সকালে ঢাকার এক রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যান্ডটি জানিয়েছে, ১৭ অক্টোবর প্রকাশিত হবে ফিনিক্সের ডায়েরি ২। ইউটিউব মিউজিক, স্পটিফাই, অ্যাপল মিউজিকসহ শীর্ষ স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও শোনা যাবে। এর মধ্যে ২ অক্টোবর ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে অ্যালবামের প্রথম গান ‘উন্মাদ’।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা, বেজ গিটারিস্ট, ভোকালিস্ট সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন বলেন, ‘গানগুলো শুধু আগের শ্রোতারাই পছন্দ করবে—এমন নয়; জেন–জি, জেন–আলফা বা পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও এর আকর্ষণ থাকবে।’
অর্থহীন জানিয়েছে, অ্যালবামটিতে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিশোধের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। আগের অ্যালবামের তুলনায় এটি আরও বেশি সমৃদ্ধ।
অ্যালবামটি সংগীত পরিচালক ও শিল্পী এ কে রাতুলকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এতে গ্র্যামি মনোনয়নপ্রাপ্ত গিটারিস্ট ফ্র্যাঙ্ক গ্যামবালি, স্যাক্সোফোন প্লেয়ার বব ফ্র্যাঙ্কেসচিনি, বেজ গিটারিস্ট বাবি লুইস ও ‘বেজবাবা’ সুমনের পুত্র আহনাফের সঙ্গে কোলাবরেশন করেছে অর্থহীন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বেজবাবা’ সুমনের সঙ্গে ব্যান্ডের বাকি দুই সদস্য ড্রামার মার্ক ডন ও গিটারের এহতেশাম আলী উপস্থিত ছিলেন