জুলাই সনদ: ‘শেষ দিনের আলোচনায়’ ঐকমত্য কমিশন
Published: 8th, October 2025 GMT
জুলাই সনদ প্রণয়নের পর তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? রাজনৈতিক দলগুলোকে মতৈক্যে আনতে ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেই বৈঠকের শেষ টানতে চাইছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘আজকে জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে গত বৈঠকের অসামপ্ত আলোচনা শেষ করলে আজকে কমিশনের শেষ দিন হবে। আমরা আজকে চূড়ান্তের জায়গাটাতে যেতে চাই।’
ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করে। সেই কমিশনগুলোর সুপারিশমালা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যান। নানা আলোচনা-বিতর্কের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো মতভেদ রয়ে গেছে।
এ অবস্থায় আজ বিকেলে ঢাকার বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পঞ্চম দিনের আলোচনায় বসেন আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরা।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন আমরা ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম বসি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় ছিল, আমরা এক জায়গায় আসতে পারব কি না.
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘মৌলিক ঐকমত্য’ তৈরি হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন এখন চূড়ান্ত কাঠামো নির্ধারণে কাজ করছে।
কমিশন চায় সব দলের মতামত ও আপত্তির পর্যালোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করে সরকারকে সুপারিশ করতে। আলী রীয়াজ দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের পক্ষ থেকে যদি সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট একটি জায়গায় একটি প্রস্তাব আসে, কমিশন সরকারকে সেটাই উপস্থাপন করবে এবং কমিশন চাইবে যে সেটাই বাস্তবায়িত হোক।’
কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া রয়েছেন বৈঠকে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) মনির হায়দার করছেন সঞ্চালনা।
জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকা বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সব দল একভাবে সম্মতি না দিলেও জনগণের চূড়ান্ত মত, অর্থাৎ গণভোট নেওয়ার সময় এসব আপত্তির বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
আলী রীয়াজের ভাষ্যে, ‘জুলাই জাতীয় সনদে যে বিষয়গুলো আছে, সেখানে যেহেতু কিছু “নোট অব ডিসেন্ট” আছে, সেটাকে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। সব কটিই একভাবে বিবেচনা করা যাবে, তা আমরা মনে করছি না। কারণ হচ্ছে যেসব রাজনৈতিক দল “নোট অব ডিসেন্ট” দিয়েছে, তারা তাদের অবস্থানের দিক থেকে দিয়েছে, তাদের শুধু দলীয় অবস্থান নয়, আমরা আশা করি যে তারা অন্যান্য বিবেচনা থেকেও দিয়েছে। সনদের বিষয়ে জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করার সময় এসব ভিন্নমত যেন যথাযথভাবে জানানো হয়, সেটিই হবে গণভোটের মূল উদ্দেশ্য।’
১০ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিতে চায় কমিশন। ১৬ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ গণভ ট র ঐকমত য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন কীভাবে হবে, সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়কে ‘যুগান্তকারী’ অভিহিত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে দলটি বলছে, এই রায়ের পর এই প্রশ্ন সামনে এসেছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো করে হবে, নাকি জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে গঠিত হবে। এই অস্পষ্টতা সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে জুলাই সনদের ব্যত্যয় করার সুযোগ নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় দলের পক্ষ থেকে এসব কথা বলেছেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একতরফা নির্বাচন করেছিল হাসিনা সরকার। এর মধ্য দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছিল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায় যুগান্তকারী উল্লেখ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের আমলে দেওয়া কলঙ্কজনক রায় থেকে দেশের বিচার বিভাগ ও জাতি মুক্তি লাভ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছিলাম, দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হবে। জুলাই সনদে এ ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু জুলাই সনদের আদেশে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ত্রয়োদশ সংশোধনীর মতো করে হবে, নাকি জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে গঠিত হবে—তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ের পর এই প্রশ্ন সামনে এসেছে বলে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই অস্পষ্টতা সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, জুলাই সনদে যেভাবে বলা হয়েছে, সেভাবে হবে। কিন্তু বিভিন্ন দল, বিশেষ করে বিএনপি ত্রয়োদশ সংশোধনীতেই ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। কিন্তু সেখানে যেভাবে এটা আছে, সেটা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নানা ধরনের সংকট তৈরি করেছে, এক–এগারোর মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেই জায়গায় শুধু বিচার বিভাগের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে জুলাই সনদে যেভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে, সেভাবে গঠন করাই দেশে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের সবচেয়ে উপযোগী পদ্ধতি। এর ব্যত্যয় করার কোনো সুযোগ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।