উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান) নিতে চায় এ বিষয়গুলো নাহিদ ইসলামকেই পরিস্কার করতে হবে। উনি যদি কখনও পরিষ্কার করেন, তখন সেটি নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। তার আগে এটি নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আজ বুধবার দুপুরে সচিবালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা এসব কথা বলেন।

‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে’—সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তাঁর এ বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। আজ ওই বক্তব্যের বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন।

জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক দলের মতো নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও সরকারের ভালো একটা ওয়ার্কিং রিলেশনশিপ (কাজের সম্পর্ক) আছে। এটা উনি অভিমান থেকে বলেছেন নাকি উনার কোনো বিষয়ে গ্রিভেন্স (দুঃখবোধ) আছে। এই বিষয়গুলো উনাকেই পরিষ্কার করতে হবে। উনি যদি কখনো পরিষ্কার করেন, তখন সেটা নিয়ে সরকারের বক্তব্যের কথা আসে। সেটির আগে সরকারের বক্তব্যের কোনো সুযোগ নেই।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘নাহিদ ইসলামের বক্তব্য তাঁকেই খণ্ডন করতে হবে, আমার খন্ডানোর বিষয় নয়। বক্তব্যটা স্পেসিফিক (সুনির্দিষ্ট) হলে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলা হতো। এটা হয়তো তাঁদের ধারণা, তাঁরা মনে করে এটি বক্তব্য হিসেবে বলেছে। এখানে সরকারের অবস্থান নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। সরকারের বক্তব্য দেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই।’

আসলেই কি উপদেষ্টারা এক্সিট খুঁজছে– এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমি একদম কোনো এক্সিট খুঁজছি না। দেশেই ছিলাম, এর আগেও বহু ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে। সে সব ঝড়ঝঞ্ঝা প্রতিহত করে দেশেই থেকেছি। বাকিটা জীবনও বাংলাদেশেই কাটিয়ে যাব।’

নাহিদ ইসলামের বক্তব্য নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছেন, এটি তো তাদের অধিকার। এটাই তো গণতন্ত্রের চর্চা। এখন প্রতিটা বিষয় নিয়েই যদি আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই, চিন্তা করি তাহলে আমরা মন্ত্রণালয়গুলো কখন চালাব? যখন কোনো বিষয় সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে, তখন অবশ্যই সরকার সে বিষয়ে কথা বলবে। অনানুষ্ঠানিক বক্তব্যের প্রক্ষিতে সরকারের পক্ষে কিছু বলা সম্ভব নয়।’

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে কি না এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের পরিস্থিতি একদমই স্থিতিশীল আছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা শুধু অন্তর্বর্তী সরকারই বলেছে তা নয়, সকল রাজনৈতিক দলও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।

‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এখানে আর কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন তোলার সুযোগ বা অবকাশ আছে বলে আমরা (সরকার) মনে করছি না,’ বলেন তিনি।

আরও পড়ুন‘উপদেষ্টাদের অনেকেই সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’, নাহিদ ইসলামের এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা০৫ অক্টোবর ২০২৫

নির্বাচনের আগে ছোট আকারে আরেকটা নির্বাচনকালীন সরকার হবে কি না– এ প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারই নির্বাচন করবে। এখনো পর্যন্ত এটাই হচ্ছে অবস্থা এবং অবস্থান।

সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংস্কার, বিচার এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। বিচার বিচারের গতিতে চলছে। বিচার কীভাবে চলছে এটা প্রত্যেকে প্রত্যক্ষ করতে পারছেন।

বিচারের ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রুতি সেটি সরকার দেখিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটা ট্রাইব্যুনালের ওপর চাপ বেশি হয়ে যাওয়ায় আরেকটা ট্রাইব্যুনাল বাড়িয়েছি। আমরা বিচারকে প্রাধান্য দিচ্ছি। প্রাধান্য দিয়ে সে মোতাবেক কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা অবশ্যই চাই যে সুবিচার নিশ্চিত হোক। সেজন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা দরকার সেটি করা হচ্ছে।’

আরও পড়ুনমৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই: সারজিস আলম০৭ অক্টোবর ২০২৫

সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ঐকমত্য হয়নি এ কথাটা ঠিক না। ঐকমত্য তো হয়েছে। অনেক বড় বড় বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এখন যে সমস্ত বিষয়ে সংস্কারকেন্দ্রিক ঐকমত্য হয়েছে, সেই সমস্ত ঐকমত্যের বাস্তবায়নটা কেমন করে হবে সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাস্তবায়নের বিভিন্ন অপশন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুয়েকটা অপশনের দিকে রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সমর্থন দিচ্ছে। একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক পদ্ধতিতে সমাধান করতে গেলে আপস অ্যান্ড ডাউনস (উত্থানপতন) হবেই। এটিতে স্মুথ যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে পদ্ধতিটা স্মুথ যাচ্ছে। যেখানে সবাই আলোচনায় আসছেন, মতামত দিচ্ছেন। এটা তো একটা স্মুথ প্রসেসে হচ্ছে।’

পরিবর্তন চাপিয়ে দিলে টেকসই হবে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক ডিবেট (বিতর্ক) থাকবেই। সেখানে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সংস্কার নিয়ে সরকারের প্রক্রিয়া অনুসরণের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এইজন্য যে এটি (পরিবর্তন) কোনো চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় না। চাপিয়ে দিলে কোনো কিছুই আর টেকসই হবে না। যেটা আমরা আগেও দেখেছি। তিন দলীয় রূপরেখা ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখেছি। তাই চাপিয়ে না দিয়ে সকলে একমত হয়ে যেটুকু করতে চাইবে আমরা সেটুকু সংস্কারের ঐকমত্য এবং পদ্ধতির ঐকমত্যের দিকেই যাব। একটা রাজনৈতিক আলোচনায় উত্তাপ থাকবে, একমত থাকবে। এটা খুবই স্বাভাবিক।’

বিচার কবে নাগাদ হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচার কখন হবে সেটা তো আসলে পুরো শুনানি প্রক্রিয়া, সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বলা যাবে। আগে বলা সম্ভব নয়। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে বলা যাবে। যে মামলাগুলো বিচারাধীন আছে, সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলেই হবে। দেড় বছরে বিচারের রায় হয় এতো অসম্ভব কিছু না। এর আগে তো দেখেছি যে দেড় বছরে বিচারের রায় হয়।

সরকার একটা ভালো, ইনক্লুসিভ (অন্তর্ভুক্তিমূলক) নির্বাচন করতে চায় এমনটা বলছে। ইনক্লুসিভ নির্বাচনের সংজ্ঞা কী এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার প্রথম থেকে বলেছে, একটা স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। জনগণ যে নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে সেই নির্বাচনটা চাই। জনগণের অংশগ্রহণের পথে যাতে কোনো অন্তরায় না হয়, সেজন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে যতোভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, ততোভাবে সহায়তা দেবে। কোনো রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টা আইনি হতে পারে। অংশগ্রহণ করা না করার বিষয়টা তাদের পলিটিক্যাল ওয়েটেজ (গুরুত্ব) অনুযায়ী ডিসাইডেড (নির্ধারিত) হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট দ র ন হ দ ইসল ম হ স ন বল ন স ফ এক স ট সরক র র ব প রক র য র জওয় ন ঐকমত য

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোটে ঐকমত্য, তবে সেটা কখন তা নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের মতভিন্নতা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। রোববার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে একমত হয়।

তবে যেসব সংস্কার প্রস্তাবে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত আছে, সেগুলোর কী হবে; গণভোট কি জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে হবে, নাকি তার আগে হবে; গণভোটের আগে জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা হবে কি না, এসব বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক মতভিন্নতা রয়ে গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, আগামী বুধবার দুপুরে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। কমিশন আশা করে, সেদিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

রোববারের আলোচনায় বিএনপি বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে কি না, এই প্রশ্নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট হতে পারে। গণভোটে এটি পাস হলে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। তবে যারা জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হবে, তারা তাদের নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমত অনুসারে সনদ বাস্তবায়ন করবে। গণভোটের জন্য সংবিধান আদেশ জারি বা সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও তাদের সম্মতির জন্য একটি গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে।অধ্যাপক আলী রীয়াজ সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, যেহেতু সব বিষয়ে সবাই একমত হতে পারছেন না, তাই গণভোট হতে পারে। তবে তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায়। কোনো কোনো দলের ভিন্নমত ‘বাইন্ডিং’ (মানার বাধ্যবাধকতা) নয় বলে মনে করে দলটি।

আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হতে পারে। তবে তার আগে অবশ্যই জুলাই জাতীয় সনদ নিয়ে একটি সংবিধান আদেশ জারি করতে হবে।

৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।
বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে কমিশন। রোববার ছিল দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে চতুর্থ দিনের আলোচনা।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ২৮টি দলের সঙ্গে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলোচনা শুরু হয়। এক ঘণ্টার মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে আলোচনা চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত।

বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ

আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একধরনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও তাঁদের সম্মতির জন্য একটি গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলই একমত হয়েছে।

এটি একটি বড় অর্জন। এটি সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রথম পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, তাঁরা অত্যন্ত আশাবাদী অন্য বিষয়গুলোতেও দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারবেন। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে আইনসভা তৈরি হবে, সেই আইনসভা যেন মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কারগুলো করতে পারে এবং তাকে টেকসই করতে পারে; সে জন্য এই আইনসভাকে এমনভাবে চিহ্নিত করা দরকার বা আলাদা বৈশিষ্ট্য দেওয়া দরকার। যাতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জনগুলো টেকসই হয়। এ ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যত একটি ঐকমত্য হয়েছে।

দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি মনে করি যে তাদের এই প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আমরা খুব শিগগির সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুপারিশ তৈরি করে সরকারের কাছে দিতে পারব।’

এদিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আগে কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে সামগ্রিক অগ্রগতি অবহিত করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তাগিদ দিয়েছেন, যেন দ্রুততার সঙ্গে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সুপারিশ সরকারকে দেওয়া হয়। তাঁরা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর যে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে কমিশন আশা করছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সেই জায়গাটায় পৌঁছানো যাবে।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা সুস্পষ্টভাবে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি যে ১৫ অক্টোবরের পর কমিশনের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে না।’

দলগুলো যা বলেছে

রোববার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যদি জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করা হয়, তাহলে সংবিধান আদেশ বা সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। কারণ জনগণ হচ্ছে সুপ্রিম।

সংবিধান আদেশ জারি করার এখতিয়ার এই সরকারের নেই। সেটা থাকলে তারা আলোচনা ছাড়াই সংবিধান সংশোধন করতে পারত। তিনি বলেন, গণভোটের জন্য শুধু জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনকে গণভোট আয়োজনের ক্ষমতা দেওয়া যায়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যাতে ম্যান্ডেটের অভাব না হয়, জনগণ এটা সমর্থন করে কি না, সে অনুমতির জন্য গণভোট হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন আলাদা একটা ব্যালটে জনগণের মত নেওয়া যায়। তাতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা বাধ্যতামূলক হবে এবং সার্বভৌম ক্ষমতার একটা রায় সেখানে প্রতিফলিত হবে। তখন বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আর কেউ সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে আরেকটি সুবিধা হবে, জাতীয় নির্বাচনের মতো আরেকটি বিশাল নির্বাচন করতে হবে না।

গণভোটের প্রশ্ন কী হবে, সে প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলবে। তিনি আশা করেন, জনগণ ‘হ্যাঁ’ বলবে।

এর আগে আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, যেহেতু সবাই সব বিষয়ে একমত হতে পারছেন না, তাই এগুলো গণভোটে দেওয়া যায়। জনগণ যে রায় দেবে, সেটা তাঁরা মানবেন। তিনি বলেন, সংবিধান আদেশের মাধ্যমে গণভোট করা হলে সেটা শক্তিশালী হবে। গণভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে।

হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, গণভোটের বিষয়ে একধরনের ঐকমত্য হয়েছে। এটা করা গেলে ভালো। আরপিও সংশোধন নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি একমত। জামায়াতের এই নেতা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সনদের ভেতরই থাকবে। জুলাই সনদ জনগণ অনুমোদন করে কি না, এটা নিয়ে হবে গণভোট। এটা হলে জুলাই সনদের শক্তিশালী আইনি ভিত্তি হবে। আগে গণভোট হয়ে যাক।

দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতিতে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান আযাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনগণ গণভোটে অভ্যস্ত না। আমরা মনে করি, এটা জাতীয় নির্বাচনকে কোনো ধরনের সমস্যা করা ছাড়াই নভেম্বর অথবা ডিসেম্বর করতে পারে। তফসিলের আগেও করতে পারে। গণভোট হয়ে গেলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে কোনো ধরনের বাধা নাই। জনগণকে একটা জটিল অবস্থায় ফেলে না দিয়ে, মহাপরীক্ষায় না ফেলে সহজভাবে এগোলে আমরাও বাঁচি, জাতিও বাঁচে।’

আলোচনায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, গণভোটের আগে অবশ্যই জুলাই সনদকে একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের (এলএফও) মধ্যে আনতে হবে। সুনির্দিষ্ট করা লাগবে কত দিনের মধ্যে কী হবে। আগামী নির্বাচন অন্যান্য জাতীয় নির্বাচনের মতো হবে না। এটা হবে আলাদা। তাদের মৌলিক কাজ হবে মৌলিক পরিবর্তন আনা। প্রথমে সংবিধান আদেশ বা এলএফও—যে নামেই হোক ঘোষণা দিতে হবে। সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবেন। সংবিধান সংস্কার তাঁদের এখতিয়ার থাকবে।

ভিন্নমতের কী হবে

জুলাই জাতীয় সনদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপিসহ কিছু দলের ভিন্নমত আছে। এগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়।

রোববারের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, সোজাসাপ্টা পথ হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা। সেখানে ভিন্নমতের বিষয়টি আসতে পারে। ভিন্নমত ‘বাইন্ডিং’ (মানার বাধ্যবাধকতা) নয়।

শিশির মনির তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে চারজন বিচাপতির সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল। তিনজন পক্ষে ছিলেন। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদনের জন্য গণভোট হতে পারে।

এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ আলোচনায় বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারকের মতামত দেওয়ার সমান অধিকার আছে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দলের সংখ্যার ভিত্তিতে কোনো রায় হবে না। এটা হচ্ছে রাজনৈতিক চুক্তি (পলিটিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট)। এটার সঙ্গে আদালতের রায়ের তুলনা করা ঠিক হবে না।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আরেকটা বিষয় এসেছে, নোট অব ডিসেন্টের ক্ষেত্রে মেজরিটির মতামতের ভিত্তিতে নোট অব ডিসেন্টটাকে আমরা ওভাররুলড (বাতিল) করতে পারি কি না? না। এটা হচ্ছে একটা পলিটিক্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট। যারা ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হবে, তারা তাদের নোট অব ডিসেন্ট অনুসারে যাবে। সেটা অঙ্গীকারনামায় সংযুক্ত করার জন্য আমি মাননীয় সভাপতিকে অনুরোধ করেছিলাম। হয়তোবা সেটা অঙ্গীকারনামায় আসতে পারে। তো সে জন্য নোট অব ডিসেন্ট মেজরিটির ভিত্তিতে কখনো ওভাররুলড করা যাবে না।’

ঐকমত্য না হলে একাধিক প্রস্তাব
সকালে আলোচনার শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে একাধিক পদ্ধতি সুপারিশ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
আলোচনায় কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ: ‘শেষ দিনের আলোচনায়’ ঐকমত্য কমিশন
  • দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা চলছে
  • গণভোটের প্রশ্ন নিয়েও ঐকমত্য প্রয়োজন
  • দুর্বোধ্য প্রস্তাবে গণভোট জনগণের প্রতি অবিচার
  • সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশ করতে পারে কমিশন
  • জামায়াতের আমিরের সঙ্গে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
  • গণভোটে ঐকমত্য, তবে সেটা কখন তা নিয়ে বিএনপি–জামায়াতের মতভিন্নতা
  • জনগণ জুলাই সনদ বাস্তবায়ন দেখতে চায়: সারোয়ার তুষার
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলে আরেকটি অভ্যুত্থান অনিবার্য: এবি পার্টি