গাজায় যুদ্ধ বন্ধে শান্তি পরিকল্পনার প্রথম দফা কার্যকরে ইসরায়েল ও হামাস একমত হওয়ার খবরে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এবং এই চুক্তি মেনে চলার জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। 

আরো পড়ুন:

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘বিশ্বের জন্য একটি মহান দিন’: ট্রাম্প

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনির বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চুক্তি ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের পথ খুলে দেবে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু চুক্তিটিকে ‘ইসরায়েলের জন্য একটি মহান দিন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জানান, তার সরকার চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক করবে।

এদিকে, ইসরায়েল যাতে দ্রুত চুক্তিটি বাস্তবায়ন করে তা নিশ্চিত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চুক্তিটিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ‘গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ চুক্তির ‘পূর্ণ বাস্তবায়ন’ সমর্থন করবে, যা মানবিক সহায়তা সরবরাহ বৃদ্ধি করবে এবং গাজা পুনর্গঠন প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে।

গুতেরেস সব পক্ষকে চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি মেনে চলা এবং অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্য সরবরাহের অনুমতি দেওয়া।

গুতেরেস বলেন, “এই দুর্ভোগের অবসান হওয়া উচিত।”

গাজা শান্তি চুক্তির খবর নিয়ে উষ্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচারও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি বলেন, “দারুন খবর। আসুন জিম্মিদের বের করে আনি এবং দ্রুত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই।”

বুধবার গাজা শান্তি চুক্তির ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে বলেন, “এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরায়েল, আশেপাশের সব দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি মহান দিন।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা কাতার, মিশর এবং তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীদের ধন্যবাদ জানাই, যারা এই ঐতিহাসিক এবং অভূতপূর্ব ঘটনাটি ঘটাতে আমাদের সাথে কাজ করেছেন।” 

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার বলেছেন, এই চুক্তিটি ‘গভীর স্বস্তির মুহূর্ত যা বিশ্বজুড়ে অনুভূত হবে’।

তিনি সকল সব ‘তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করার, যুদ্ধের অবসান ঘটানোর এবং সংঘাতের ন্যায্য ও স্থায়ী অবসানের ভিত্তি তৈরি করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, “দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত, জিম্মিদের আটক এবং বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির পর, এটি শান্তির দিকে একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং আমরা সব পক্ষকে শান্তি পরিকল্পনার শর্তাবলী মেনে চলার আহ্বান জানাই।”

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নেতা চাক শুমার বলেন, এই চুক্তি ‘জিম্মি পরিবার, পুরো ইসরায়েল এবং এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দীর্ঘকাল ধরে ভোগা ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বিশাল স্বস্তির নিঃশ্বাস’ এনেছে।

গাজায় ইসরায়েলি বন্দীদের প্রত্যাবর্তনের পক্ষে সমর্থনকারী সংস্থা হোস্টেজেস ফ্যামিলিজ ফোরাম এক বিবৃতিতে, চুক্তিটিকে জিম্মিদের মুক্তির ক্ষেত্রে ‘ঐতিহাসিক অগ্রগতি’ বলে উল্লেখ করার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ‘গভীর কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য একট আহ ব ন জ ন এই চ ক ত ম নব ক কর ছ ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

সার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব

ইউরিয়া সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূল কাঁচামাল হিসেবে কাজ করে প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু গ্যাস–সংকটে বছরের বেশির ভাগ সময় সরকারি সার কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবছর সার উৎপাদন কমছে। চাহিদা মেটাতে বাড়তি দামে সার আমদানি করতে হচ্ছে। এখন আমদানি কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। তাই গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়ে সার কারখানা চালু রাখার নামে বাড়ছে গ্যাসের দাম।

সার কারখানায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আজ সোমবার গণশুনানি করেছে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এতে অংশীজনেরা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে ২০২২ সালে শিল্পে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। যদিও বাড়তি দাম দিয়ে গ্যাস পায়নি শিল্প। সার কারখানায় প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করার পরও কারখানা বন্ধ ছিল। এখন আরও বাড়িয়ে ৩০ টাকা করার চেষ্টা চলছে।

সরকারি মালিকানায় ৫টি ইউরিয়া সার কারখানা আছে। এগুলো বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) অধীনে। সংস্থাটির কর্মকর্তারা শুনানিতে জানান, গ্যাসের অভাবে গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) যমুনা সার কারখানা বন্ধ ছিল ৩৫১ দিন। তার মানে চালু ছিল মাত্র ১৪ দিন। আশুগঞ্জ সার কারখানা বন্ধ ছিল ২৫৯ দিন। শাহজালাল সার কারখানা বন্ধ ছিল ১৪৭ দিন। চট্টগ্রাম ইউরিয়া কারখানা বন্ধ ছিল ৮১ দিন। এর আগের বছরেও বেশির ভাগ সময় বন্ধ ছিল কারখানা। ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকেই বছরের বড় একটি সময় সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা শুরু হয়।

রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণশুনানি চলে। এতে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) ও ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি দাম বাড়ানোর অভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরে। তারা সার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বিইআরসি গঠিত কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা নির্ধারণের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত ১০ আগস্ট সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলা। এরপর একই প্রস্তাব আলাদা করে জমা দেয় ৬টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। এতে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার গ্যাসে গড়ে খরচ হয় ২৮ টাকা ৭৮ পয়সা। বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সা। প্রতি ঘনমিটারে লোকসান হচ্ছে ৫ টাকা ৮৫ পয়সা। এতে চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার ২৯১ কোটি টাকা ঘাটতি হতে পারে। সরকার ভর্তুকি বরাদ্দ রেখেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। সার কারখানায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে ঘাটতি কমানো সম্ভব হবে।

শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, ২০ বছর আগে প্রিপেইড মিটারের কাজ শুরু হয়েছে, এখনো ২০ শতাংশ হয়নি। সদিচ্ছা থাকলে এটা হতো। গ্যাস খাতে সিস্টেম লস (কারিগরি ক্ষতি) কমাতে সদিচ্ছা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ১৭ কোটি মানুষকে খাইয়ে পরিয়ে রাখছে কৃষি। তাই কৃষির জন্য বোঝা তৈরি করা যাবে না। সার কারখানায় উৎপাদন ধরে রাখতে হবে। আবার পেট্রোবাংলার ঘাটতিও করা যাবে না। সব দিক চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। সবার মতামত বিবেচনা করা হবে। এর বাইরে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে লিখিত মতামত দিতে পারবেন।

শুনানিতে অংশ নিয়ে নাগরিকদের কেউ কেউ গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সারের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এরপর সেই অজুহাতে সারের দাম বাড়ানো হবে। এতে কৃষিপণ্যের খরচ বাড়বে, যা ভোক্তার ওপর প্রভাব পড়বে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতি টন সারে ভর্তুকি এখন ১৩ হাজার টাকা। কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই। বাড়তি উৎপাদন খরচের দায় যদি সরকার ভর্তুকি দিয়ে মেটায়, তাহলে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে।

তবে বিসিআইসির পরিচালক (পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০২২ সালে গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাম বাড়িয়েছিল, সেটা রক্ষা করা হয়নি। এতে আগের চেয়ে বছরে উৎপাদন কমেছে ৩ লাখ টন। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর দাম যদি বাড়াতেই হয়, তাহলে ১৬ টাকা থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা যেতে পারে। এতে কৃষক বাঁচবে।

বিসিআইসির তথ্য বলছে, ২০০৬-০৭ সালে তারা সার উৎপাদন করেছে ১৮ লাখ ১৭ হাজার টন। কমতে কমতে ২০২১-২২ সালে করেছে ১০ লাখ ১০ হাজার টন। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর ২০২২-২৩ সালে করেছে ৭ লাখ ১৮ হাজার টন ও ২০২৩-২৪ সালে করেছে ৬ লাখ ৯৪ হাজার টন। তবে গত অর্থবছরে উৎপাদন ১০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। যদিও এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ টন উৎপাদন করেছে গত বছরের মার্চে উৎপাদনে আসা ঘোড়াশালের নতুন সার কারখানা। সেই হিসাবে আগের কারখানাগুলোয় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ টন। যদিও পুরোনো কারখানাগুলোর জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শুনানিতে। বিসিআইসির কর্মকর্তারা শুনানিতে বলেন, প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করা হলেও সার আমদানির চেয়ে দেশে সার উৎপাদন খরচ কম হবে।

শুনানিতে অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম আজ প্রথম আলোকে বলেন, দাম বাড়ানোর পর গ্যাস পাবে কোথায়? আগেও গ্যাস দেবে বলে দাম বাড়ানো হয়েছিল। এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর সারের দাম বাড়বে। সারের দাম বাড়লে কৃষি ধ্বংস হয়ে যাবে। এরপর খাদ্যও আমদানি করতে হবে। দেশ ধীরে ধীরে আমদানি বাজারে পরিণত হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৫০ কোটি টাকায় কেনা হচ্ছে ৪৩ হাজার বডি ক্যামেরা
  • মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে হবে
  • পূর্বাচলে ফায়ার স্টেশনের জমিতে রিসোর্ট
  • হঠাৎ বিদ্যুৎ বিল বেড়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ, বিপাকে গ্রাহক
  • ঠাকুরগাঁওয়ে সবজির দাম চড়া, মরিচে স্বস্তি
  • মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা
  • নিলামে ১০৪ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • ডেঙ্গু প্রতিরোধে ফগার মেশিন সরবরাহ, প্রশংসায় ভাসছেন শিল্পপতি বাবুল
  • সার কারখানার জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব