প্রতিটি মামলায় আসামি করার হুমকিদাতা বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি, থানায় জিডি
Published: 9th, October 2025 GMT
শরীয়তপুরে এক সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি নেতা মতিউর রহমান ওরফে সাগরের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দলটি। হুমকি দেওয়ার ঘটনায় গতকাল বুধবার রাতে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই সাংবাদিক।
অভিযুক্ত মতিউর রহমান নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলার ঘড়িষার ইউনিয়নের নোয়াদ্দ বাংলাবাজার এলাকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সাবেক ডিলার। অন্যদিকে অভিযোগকারী ব্যক্তির নাম আশিকুর রহমান। তিনি একটি অনলাইনভিত্তিক নিউজপোর্টালের শরীয়তপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।
আরও পড়ুন‘প্রস্তুত থাকেন, প্রত্যেকটা মামলায় আপনি আসামি হবেন’, সাংবাদিককে বিএনপি নেতার হুমকি১৯ ঘণ্টা আগেঅভিযোগ আছে, একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে গত মঙ্গলবার রাতে আশিকুর রহমানকে মুঠোফোনে মামলায় জড়ানোর ও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন মতিউর রহমান।
তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সূত্রে জানা গেছে, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে চাল বিতরণে অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ ওঠে। তদন্তে সত্যতা মেলায় ২৪ সেপ্টেম্বর তাঁর ডিলারশিপ বাতিল করে খাদ্য অধিদপ্তর। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল কাইয়ুম খানের ওপর ক্ষুব্ধ হন মতিউর। ইউএনওর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি ও দুই লাখ টাকা গ্রহণের অভিযোগ এনে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেন মতিউর। এ বিষয়ে আশিকুরের তৈরি একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ওই অনলাইন পোর্টালে। পরে মতিউর রাতেই ওই সাংবাদিককে ফোন করে হুমকি ও গালিগালাজ করেন। বলেন, নড়িয়ায় যদি কোনো রাজনৈতিক মামলা হয়, ওই সাংবাদিক নিজে প্রতিটির আসামি হবেন।
এ ঘটনায় আশিকুর রহমান গতকাল রাতে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। অন্যদিকে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির পক্ষ হতে ওই ঘটনা তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হাসান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করে মতিউর রহমান জানান, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ওই সাংবাদিক (আশিকুর) ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাঁর পেছনে লেগে নিউজ করেছেন। বিষয়টি জিজ্ঞেস করার জন্যই মূলত আশিকুরকে ফোন করেছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন কর ছ ন উপজ ল গঠন ক ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বজনেরা
অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) ভর্তি হন রোজিনা বেগম (৪৫)। চার ঘণ্টার মাথায় রাত ৯টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে ‘চিকিৎসা’ না পাওয়ার কারণে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার এই নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোখলেছুর রহমান সরকার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোগী খুব খারাপ অবস্থায় আসছিল। আমরা অ্যানথ্রাক্স সাসপেক্ট (সন্দেহ) করেছিলাম, তাঁর শরীরে লিসন (ত্বকে ঘা বা ক্ষত) ছিল। চিকিৎসা যখন শুরু করা হলো, ওরা (স্বজন) কানাঘুষা শুনেছিল, অ্যানথ্রাক্স হইছি, এটা খারাপ। ওরা যখন এটা শুনছে, তখন রোগী নিতে যাইছিল। নিয়ে গেছেই প্রায়। সম্ভবত ওয়ার্ড থেকে বের হয়েছে, অমন সময় খারাপ হয়েছে (মারা গেছে)।’
তবে মায়ের চিকিৎসাবিষয়ক ভিন্ন কথা বলেন রোজিনার ছেলে রইসুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর মাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। অ্যানথ্রাক্স-আতঙ্কে হাসপাতালের নার্সরা তাঁকে দেখতে আসেননি।
রইসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেডিকেলে চিকিৎসা নাই। ডাক্তার ও নার্সরা রোগীর কাছে আসতে ভয় পান। তাঁরা বলেন, অন্য ডাক্তারকে দেখান। অক্সিজেন ২০০ টাকা দিয়ে নিতে হয়েছিল। এমনকি নেবুলাইজার মাস্কের জন্য ২০০ টাকা দিতে হয়েছিল। টাকা ছাড়া কেউ একটা কথা বলে না।’ রইসুলের দাবি, চিকিৎসা না পেয়ে তাঁর মাকে একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ওই রাত ৯টা ১০ মিনিটে তাঁর মা হাসপাতালের শয্যায় মারা যান।
রইসুল কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আপনার মা যদি আপনার সামনে কাতরায় আপনি চুপ করে কীভাবে বসে থাকবেন? আমরাও এই কাজ করছি।’
রংপুর ও গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেওয়া রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বিগ্ন রোগী ও তাঁর স্বজনেরা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে দেখা গেছে, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে রোগীরা নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে গবাদিপশু নিয়ে খামারি ও কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি কমেছে।
রোকেয়া ছাড়াও অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া রংপুরের পীরগাছা আবদুর রাজ্জাক ও কমলা বেগমের স্বজনেরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ করেন। রাজ্জাকের স্ত্রী ফেনসী আক্তার বলেন, তাঁর স্বামীকেও রমেক হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু চিকিৎসা পাননি।
আরও পড়ুনঅ্যানথ্রাক্স কী, কীভাবে ছড়ায়০৪ অক্টোবর ২০২৫তবে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স প্রাণঘাতী নয়। তবে অনেকে আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে চিকিৎসা জটিলতায় পড়ছেন। এ জন্য অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যাওয়া সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হবে। ছোটাছুটি না করে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (মেডিসিন) মাহ্জাবীন জামাল।
গত শনিবার অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে পীরগাছার পিয়ারপাড়ার সাজ্জাদ হোসেন (২০) ভর্তি হয়েছেন। আজ সোমবার হাসপাতালের শয্যায় সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ১৭-১৮ দিন আগে পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে গরুর মাংস খেয়েছেন। পরে জানতে পেরেছেন, অসুস্থ গরু জবাই করা হয়েছিল। তাঁদের এলাকায় শরিফুল, মজনু, জাকেরুল, হামেদ, আল আমিন অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন। কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন, কেউ নেননি।
সাজ্জাদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মা সহিদা বেগম বলেন, ‘হাসপাতালে এসে সবকিছু নিজের টাকা দিয়া করা লাগছে। টেস্ট (পরীক্ষা) করা ও ওষুধ কেনা—সব নিজের টাকা দিয়ে। শুধু নাপা ও প্যারাসিটামল হাসপাতাল থাকি দিছে। পরশু দিন থাকি আমার ৫ হাজার টাকা চলি গেল।’
অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এই হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোরে অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন। তবে রোগী যদি বাড়ে তাহলে তাঁরা করোনা ইউনিটিকে অ্যানথ্রাক্স রোগীর ইউনিট করবেন।
বাড়িতে বসেই চলছে চিকিৎসাগাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তরা উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। তাঁরা নিজ বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে গবাদিপশু নিয়ে খামারি ও কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পাশাপাশি গরু-ছাগলের মাংস বিক্রি কমেছে।
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এক নারীর মৃত্যু ও ১১ জনের মধ্যে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়ার পর থেকে এই আতঙ্ক চলছে। অবশ্য স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ওই নারী অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি।
অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দিয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত সদর গ্রামের মোজাফফর আলীর