দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করছেন গোলাম কিবরিয়া। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার কারণে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই ৬৫ বছর বয়সী এই প্রবাসীর। এতে দেশে ব্যাংক এবং সম্পদসংক্রান্ত আইনি কাজে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়। এনআইডি না থাকায় নিজের ভোটাধিকারও প্রয়োগ করতে পারেননি তিনি।

গোলাম কিবরিয়ার মতো ভুক্তভোগী সেখানকার আরও অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। লস অ্যাঞ্জেলেসের সমাজকর্মী সৈয়দ নাসির জেবুল প্রথম আলোকে বলেন, শুধু এনআইডি করতেই অনেক টাকা খরচ করে বাংলাদেশে যেতে হয়। এরপরও এনআইডি না পেয়েই ফিরতে হয়েছে, যা অর্থের অপচয়।

অবশেষে প্রবাসীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় (লস অ্যাঞ্জেলেস সময়) আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে প্রবাসীদের এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম।

নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে এই পরিষেবা চালু হচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এখন থেকে দেশে না গিয়ে কনস্যুলেট থেকেই এনআইডিসংক্রান্ত সব সেবা পাবেন তাঁরা। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল কাজী জাবেদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কয়েক দিন হলো এখানে যোগদান করেছি। যোগদানের পরপরই প্রবাসীদের জন্য এনআইডি সেবা চালু হচ্ছে, যা আমার জন্য খুবই আনন্দের। প্রবাসীরা আবেদন করার পর দ্রুততার সঙ্গে যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেতে পারেন, সে চেষ্টা আমরা করব।’

সব নথি যাচাই শেষে নির্বাচন কমিশন আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার আওতাধীন উপজেলা নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে। এরপর আবেদন যাচাই হয়ে গেলে এনআইডি কার্ড সরাসরি আবেদনকারীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।

কনসাল জেনারেল আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসীরা দেশের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখলেও তা বাস্তবায়নের সুযোগ সীমিত ছিল। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

যেভাবে আবেদন করতে হবে

প্রবাসী বাংলাদেশিরা অনলাইনে ফরম-২(ক) পূরণ করে এনআইডির জন্য আবেদন করতে পারবেন। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কাগজপত্রও জমা দেওয়া যাবে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিশেষ এলাকার জন্য নির্ধারিত ফরম, নাগরিক সনদ, নিকাহনামা ও স্বামী বা স্ত্রীর এনআইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, টিআইএন সার্টিফিকেট, স্থানীয় প্রশাসনের নাগরিক সনদ এবং ইউটিলিটি বিল বা বাড়িভাড়ার রসিদের অনুলিপি।

সব নথি যাচাই শেষে নির্বাচন কমিশন আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানার আওতাধীন উপজেলা নির্বাচন অফিসারের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করবে। এরপর আবেদন যাচাই হয়ে গেলে এনআইডি সরাসরি আবেদনকারীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।

প্রবাসীরা আবেদন করার পর দ্রুততার সঙ্গে যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেতে পারেন, সে চেষ্টা আমরা করবকাজী জাবেদ ইকবাল, কনসাল জেনারেল, বাংলাদেশ কনস্যুলেট, লস অ্যাঞ্জেলেস

এর আগে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে প্রবাসীরা অনলাইনে নির্ধারিত ফরম-২(ক) পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন এবং আবেদন করার সময় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

এসব কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্র, অনলাইন ভেরিফায়েড জন্মনিবন্ধন সনদের অনুলিপি, বৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি পাসপোর্ট বা বিদেশি পাসপোর্টের অনুলিপি অথবা এনআইডি আছে একই দেশে বসবাসকারী এমন তিনজন বাংলাদেশির প্রত্যয়নপত্র, আবেদনকারীর বাবা-মায়ের এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন বা নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টের অনুলিপি এবং পাসপোর্ট সাইজের একটি রঙিন ছবি।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আবেদনকারী নিজে উপস্থিত হতে না পারলে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন কার্যালয়ে কাগজপত্র জমা দিতে পারবেন। আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্য স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা যাচাই করবেন। সঠিক ও প্রামাণিক কাগজপত্র না থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।

যুক্ত হলো বিশেষ নিয়ম

প্রবাসী হিসেবে এনআইডি পেতে একটি বিশেষ নিয়ম চালু করা হয়েছে। যে প্রবাসী এনআইডির জন্য আবেদন করবেন, তাঁর বর্তমান ঠিকানায় বসবাস করছেন এমন তিনজন বাংলাদেশি নাগরিকের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে। প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ থাকবে আবেদনকারী প্রবাসী ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের নাগরিক এবং উক্ত ঠিকানায় বসবাস করছেন।

প্রত্যয়নপত্রে তিনজন প্রত্যয়নকারীর নাম, এনআইডি নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, মুঠোফোন নম্বর, স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অক্টোবরে যাঁরা এনআইডির জন্য আবেদন করবেন, আমরা তাঁদের পরিচয়পত্র দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করব, যাতে প্রবাসীরা দেশের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, আবেদনের সময় যদি সঠিকভাবে কাগজপত্র জমা দেয়, তাহলে এনআইডি পেতে খুব বেশি দিন লাগবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স প রব স দ র কনস য ল ট ক গজপত র র অন ল প প রব স র র জন য প রব ন বসব স

এছাড়াও পড়ুন:

‘এটি আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত’

‘জন্ম থেকে দুই হাত না থাকায় জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক জায়গায় ঘুরেছি, কিন্তু এনআইডি পাইনি। আজ ইউএনও স্যার আমার দোকানে এসে নিজ হাতে কার্ডটি দিয়েছেন। এটি আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। আমি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আজ নিজের এনআইডি পাওয়ায় মনে হচ্ছে জীবনের বড় একটা অর্জন হলো।’

নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন ফরিদপুরের নগরকান্দার জসিম মাতুব্বর (২৬)।

উপজেলার কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা জসিম মাতুব্বর। জন্ম থেকেই তাঁর দুই হাত নেই। পা দিয়ে লিখেই উত্তীর্ণ হয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষায়। পড়াশোনার পাশাপাশি হাটে সবজি ও ফল বিক্রি করে নিজের ও পরিবারের খরচ চালান অদম্য এই তরুণ। তাঁর জীবনের এই কঠিন লড়াইয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এনআইডি না থাকা। আঙুলের ছাপ দিতে না পারায় তিন বছর ধরে আবেদন করেও কার্ড পাননি। অবশেষে তাঁর এনআইডি পাওয়ার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দবির উদ্দিন উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের কালীবাড়ি বাজারে জসিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাঁকে এনআইডি দেন।

জসিম মাতুব্বর বলেন, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারি নাই ইউএনও স্যার আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের দোকানে আসবেন। যেখানে কার্ড আনতে আমার যাওয়ার কথা ছিল ইউএনও অফিসে, সেখানে স্যার এসেছেন আমার এই ছোট্ট দোকানে।’

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইউএনও দবির উদ্দিনের উদ্যোগে জসিমকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁর চোখের আইরিশের ছবি ও পায়ের মাধ্যমে স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। পরে দ্রুত কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। গত ৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে একটি বার্তা দিয়ে জসিমকে জানানো হয়, ‘অভিনন্দন জসিম মাতুব্বর, এটি আপনার এনআইডি নম্বর।’ পরে ইউএনও জসিমের কার্ডটি ডাউনলোড করে সেটি আজ জসিমকে দেন।

জসিমের দীর্ঘদিনের আশা পূরণ করতে পেরে খুশি ইউএনও দবির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মিডিয়ার মাধ্যমেই জসিমের সমস্যার কথাটি আমি প্রথম জানতে পারি। তাঁর মতো একজন মেধাবী তরুণ শুধু এনআইডি না থাকার কারণে যেন পিছিয়ে না পড়েন, সেটিই নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এ কাজটি আমি করতে পেরেছি। এটি সারা জীবন আমার জীবনে আনন্দের ঘটনা হয়ে থাকবে।’

কার্ড বিতরণের সময় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাওন সাগর, নগরকান্দা প্রেসক্লাবের সভাপতি শওকত আলী শরীফসহ গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘এটি আমার জীবনের এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত’
  • অবশেষে এনআইডি পেলেন দুই হাতহীন জসিম
  • বক্ষব্যাধি হাসপাতালে এবি ব্যাংকের বুথ