কুমারখালীতে চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে মারধর, সালিসে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেল
Published: 10th, November 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে দোকানে চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে বাজারে ডেকে এনে মারধর ও আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার রাত দুইটা থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তারাপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা একই ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামের রাকিব হোসেন (১৭) ও সাইফ হোসেন (১৭)। তারা বর্তমানে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
রাকিবকে মারধরের ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আজ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন রাকিবের হাত, মুখ ও গলা চেপে ধরে রেখেছেন। আরেকজন বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের তারাপুর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম দোকান বন্ধ করে চলে যান। পরে রাত ১১টার দিকে ফিরে দেখেন, তাঁর দোকানের পেছনের দরজা খোলা। ড্রয়ারে টাকাসহ কিছু মালামাল নেই। এ সময় বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে তিনি রাকিব ও সাইফকে সন্দেহ করেন। পরে তাঁর লোকজন নিয়ে উপজেলার নন্দলালপুর এলাকা থেকে রাত দুইটার দিকে ফোনে যোগাযোগ করে ওই দুজনকে তারাপুর বাজারে ডেকে আনেন। পরে আবুল কালাম ও তাঁর চাচাতো ভাই মিজানসহ বেশ কয়েকজন রাতে ওই দুই কিশোরকে মরধর করে চুরির কথা জোরপূর্বক স্বীকার করিয়ে বাজার এলাকায় আটকে রাখেন।
আজ সকালে কাঠচেরাই মিলে সালিস বসান জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিম। সালিসে দোকানদারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই কিশোরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর সাইফের মা পলি খাতুন ১০ হাজার টাকা দেন এবং অবশিষ্ট টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের দুজনকে বাড়ি নিয়ে আসেন। সকাল ১০টার দিকে তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
আজ দুপুরে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় চিকিৎসাধীন রাকিব ও সাইফ। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন। পাশে বসে আছেন স্বজনেরা।
এ সময় আহত রাকিব হোসেন বলে, ‘আবুল কালামের দোকানে আমরা নিয়মিত ক্যারম খেলি। গতকাল রাতেও বাজারে ছিলাম। রাত ১১টার দিকে নন্দলালপুর ইউনিয়নে খালাদের বাড়ি গিছিলাম। পরে রাত দুটার দিকে হঠাৎ কালাম বারবার বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিতে থাকেন। পরে আমরা বাড়িতে আসলে আজাদ, তাঁর চাচাতো ভাই মিজান, হাসানসহ অনেকেই আমাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান বাজারে। সেখানে ফজরের আজান পর্যন্ত কাঠ ও বাঁশের লাঠি দিয়ে অনেক মারধর করে আটকে রাখেন।’
আহত সাইফ হোসেন বলে, ‘আমরা চুরি করিনি। তবুও সন্দেহ করে হাতে, পাঁয়ে, পিঠে সবখানে সারা রাত প্রচুর মারছে ওরা। পরে সকালে করিম মেম্বার সালিসে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করলে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করলে ছাড়া পাই।’
সাইফের মা পলি খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলে চুরি করেনি। তবুও অমানবিকভাবে মারেছে। ছেলের চিকিৎসা করার জন্য জরিমানা মেনে নিয়ে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমরা এর বিচার চাই।’
রাকিবের মা শারমিন বলেন, ‘আমরা থানায় যাব। মামলা করব। এমন মার কেউ মারে!’
আজ বিকেলে তারাপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আবুল কালামের দোকান বন্ধ। দোকানের সামনেই তাঁর বসতবাড়ি। এ সময় অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম বলেন, ‘দাদি মারা যাওয়ার খবর শুনে সন্ধ্যায় দোকান বন্ধ করে চলে যাই। রাত ১১টার দিকে ফিরে দেখি পেছনের দরজা খোলা। ড্রয়ারে ৫৫ হাজার টাকা নেই, কিছু সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল নেই। পরে খোঁজ নিয়ে রাকিব ও সাইফের প্রতি সন্দেহ হয়। এরপর সবাই মিলে ওদের ডেকে বাজারে আনলে উৎসুক জনতা মারধর করে। মারধরের পর ওরা চুরির কথা স্বীকার করে। পরে বিএনপি নেতা করিম সকালে সালিস বসিয়ে সমাধান করেন।’
এ বিষয়ে বাজারের দোকানদার ও স্থানীয়রা কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল করিম বলেন, ‘চোরকে মারধর করে লোকজন আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এনেছিলেন। আমি তাদের এখান থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে সালিস করিনি। শুনেছি ৩৭ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। ৩০ হাজার টাকায় মিটমাট হয়েছে।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘যেকোনো ঘটনায় আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। চুরির ঘটনায় মারধরের কথা শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১০ হ জ র ট ক স ব ক র কর দ ই ক শ রক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন থেকে আয়কর কাটার নির্দেশ
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট বেতনসীমা অতিক্রম করলেই মাসিক বেতন থেকে উৎসে আয়কর কর্তন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। চলতি আয় বছর থেকেই বেতন বিল থেকে উৎস আয়কর কর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের (সিজিএ) কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অতিরিক্ত হিসাব ও পদ্ধতি শাখা থেকে জারি করা পত্রে বলা হয়েছে, আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী চলতি আয় বছরে যেসব পুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক মূল বেতন ২৬ হাজার ৭৮৫ টাকা এবং নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক মূল বেতন ৩০ হাজার ৩৫৭ টাকা বা তার বেশি, তাদের আয়ের পরিমাণ করমুক্ত সীমা অতিক্রম করেছে। ফলে তাদের বেতন বিল প্রস্তুতের সময় উৎসে আয়কর কর্তন করতে হবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বিল হতে আয়করসহ অন্যান্য কর্তনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ট্রেজারি রুলস এসআর ১২৫ অনুযায়ী উত্তোলনকারীর ওপর বর্তাবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দেশের সব চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার, বিভাগীয় ও জেলা হিসাব নিয়ন্ত্রক, উপজেলা হিসাব কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাটি অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে সচিবের মাধ্যমে, যার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বাজেট-১ অনুচ্ছেদে কর্মরত যুগ্ম-সচিবের প্রতি।
এ নির্দেশনায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে গত ৭ অক্টোবর জারি করা আধা-সরকারি চিঠির উল্লেখ রয়েছে, যেখানে সরকারি বেতনভোগীদের উৎসে কর কর্তনের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী