আসামি হওয়ার খবর শুনে হাসপাতালে অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু, অভিযোগ স্বজনদের
Published: 10th, November 2025 GMT
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলায় আসামি হওয়ার কথা শুনে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলে তাঁর স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন।
মৃত রুহুল ফকিরের (৬০) বাড়ি উপজেলার রাকালতলী গ্রামে। গতকাল রোববার ভোরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। দুই মাস ধরে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
গত শুক্রবার বোয়ালমারীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় শনিবার রাতে বোয়ালমারী থানায় বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। বিএনপির বিবদমান দুই পক্ষ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার নাসিরুল হক ও বোয়ালমারী উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদ শাহাবুদ্দীন মিয়ার দুই সমর্থক বাদী হয়ে এ মামলা দুটি করেন।
শাহাবুদ্দীন মিয়ার সমর্থক উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বাদী হয়ে ১৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জন আসামি করে মামলা করেন। এ মামলার ২৯ নম্বর আসামি ছিলেন রুহুল ফকির।
রুহুল ফকিরের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী রাজনীতি করতেন না। তবে জমিজমা নিয়ে শেখর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি সমর্থক রইসুল ইসলাম ওরফে পলাশের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। এ নিয়ে একাধিক মামলা-মোকদ্দমা চলছে। হুমকি–ধমকিতে আমার স্বামী ঠিকমতো বাড়িতে ঘুমাতে পারতেন না। গুরুতর অসুস্থ হয়ে দুই মাস আগে তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হন। নতুন করে রাজনৈতিক মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। এ খবর শুনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। একপর্যায়ে তিনি মারা যান।’
সালেহা বেগম অভিযোগ করেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও পূর্ববিরোধের জেরে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রইসুল ইসলামের প্ররোচনায় আমার স্বামীকে আসামি করা হয়েছে।’
এ অভিযোগ অস্বীকার করে রইসুল ইসলাম বলেন, তাঁর সঙ্গে রুহুল ফকিরের কোনো বিরোধ ছিল না। তাঁর মামাদের সঙ্গে রুহুলের জমি নিয়ে সমস্যা ছিল। রুহুল ফকিরকে আসামি করা হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভুগছিলেন। আসামি করার কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এ অভিযোগ প্রতিপক্ষের বানানো গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মৃত্যুকালে রুহুল ফকিরের বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। তবে মামলার এজাহারে তাঁর বয়স লেখা হয়েছে ৪৯ বছর।
মামলার বাদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁদের সবাইকে তিনি চেনেন না, জানেন না। একজন অসুস্থ মানুষকে মামলার আসামি করা দুঃখজনক।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, রুহুল আমিন অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, তাঁকে কেন আসামি করা হয়েছিল?
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইবোনের শেষ দেখা করাল বিজিবি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে এক বিরল মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এক ভারতীয় বৃদ্ধার মরদেহ তার বাংলাদেশি স্বজনদের শেষবারের মতো দেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
শনিবার (৮ নভেম্বর) সকালে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার আজমতপুর সীমান্তের শূন্য রেখায় এই হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটে। এ সময় বিজিবি ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
কলমাকান্দায় ৩৯ বোতল ভারতীয় মদ উদ্ধার
উখিয়ায় ৪ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার
মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া জানান, মৃত নারীর নাম সেলিনা বেগম। বার্ধক্যজনিত কারণে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ভারতের মালদা জেলার গোপালগঞ্জ থানার শ্মশানী-চকমাহিলপুরের নিজ বাড়িতে মারা যান। তিনি মৃত গাজলুর রহমানের স্ত্রী। মৃত সেলিনা বেগমের ভাই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোল্লাটোলা-বাগিচাপাড়ার বাসিন্দা তোফাজ্জল হক।
তিনি জানান, তার বোনের মরদেহ শেষবারের মতো দেখার জন্য বিজিবির কাছে আবেদন জানান। আবেদনের গুরুত্ব বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় বিজিবি। তারা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উপস্থিতিতে মরদেহ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক সীমারেখায় সীমান্ত পিলার ১৮২/২-এস এর নিকট শূন্য লাইনে তোফাজ্জল হককে তার প্রয়াত বোনের মরদেহ দেখানোর সুযোগ দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, সীমান্তে বিজিবি সবসময় অত্যন্ত মানবিক ভূমিকা পালন করতে চায়। মরদেহ স্বজনদের দেখানোসহ এ ধরনের কার্যক্রমকে বিজিবি মৌলিক কর্তব্য মনে করে।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এমন উদ্যোগকে স্থানীয়রা উচ্চ প্রশংসা করেছে। তারা বলছেন, এটি প্রমাণ করে যে মানবিক সম্পর্ক সীমান্তের বেড়াজাল পেরিয়েও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ঢাকা/মেহেদী/মেহেদী