রোহিত শর্মাকে সরিয়ে শুবমান গিলকে ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়াকে ভুল মনে করছেন না ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে রোহিতের বয়স হবে ৪০।

রোহিতকে সরানোর মূল কারণ এটাই বলে মনে করেন গাঙ্গুলী। তিনি ও রাহুল দ্রাবিড়ও একই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন বলেও দাবি করেছেন বিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি।

শুক্রবার কলকাতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সৌরভ বলেন, ‘আমি জানি না রোহিতকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, নাকি অন্য কিছু। তবে মনে হয়, এটা দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। কারণ, রোহিত একজন অসাধারণ অধিনায়ক। গত দুই বছরে রোহিত টি-২০ বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে। সুতরাং রোহিতের পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। নির্বাচকদের মনে যা এসেছে, তা হলো—দুই বছর পর বিশ্বকাপের সময় রোহিতের বয়স হবে ৪০।’

রোহিত এ মুহূর্তে শুধু ওয়ানডে সংস্করণ খেলছেন। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন, গত মে মাসে ছেড়েছেন টেস্ট ক্রিকেট। প্রসঙ্গ টেনে গাঙ্গুলী বলেছেন, ‘রোহিত টি-২০ ক্রিকেট খেলে না, তাই ২০২৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে ও খেলবে না। কিন্তু ২০২৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে বিশ্বকাপের সময় রোহিতের বয়স হবে ৪০। খেলাধুলায় এটা অনেক বড় সংখ্যা। রোহিত দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের হয়ে খেলছে। কিন্তু ৪০ বছর বয়সে রোহিত খেলতে পারবে কি না, সেটি নিশ্চিত নয়। তাই আমি মনে করি, এটা খারাপ সিদ্ধান্ত নয়।’

গাঙ্গুলীর দাবি, রোহিতের মতো একই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেও গিয়েছেন। একই অভিজ্ঞতা রাহুল দ্রাবিড়েরও। নতুন দায়িত্ব পাওয়া গিলও সামনে একই পরিস্থিতিতে পড়বে বলেও ধারণা তাঁর, ‘এমনটা সবারই হয়। আমি যখন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে সরে গেলাম, তখন বয়স ৩৭। রাহুল দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রেও তা–ই হয়েছে। আমরা সবাই ওয়ানডেতে ১০-১১ হাজারের বেশি রান করেছি। সুতরাং এমনটা সবার ক্ষেত্রেই ঘটে। ১০ বছর পর, শুবমানও ৪০-এর কাছাকাছি এসে ১২-১৩ হাজার রান করলে একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। কারণ, খেলাধুলায় সবারই একদিন শেষ করতে হয়, সেটা রজার ফেদেরার, পিট সাম্প্রাস, রাফায়েল নাদাল বা ডিয়েগো ম্যারাডোনা হলেও।’

ভারতের সাবেক অধিনায়ক আরও বলেন, ‘সুতরাং শুবমানকে দায়িত্ব দেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত নয়। তিনি ইংল্যান্ডে প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। এই তরুণদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমার মনে হয়, এটা রোহিতের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। রোহিত খেলতে থাকবেন, আর এ সময়ে একজন তরুণ অধিনায়ককে প্রস্তুত করা হবে।’

রোহিত ও বিরাট কোহলি ২০২৭ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে পারবেন কি না—এই প্রশ্নে গাঙ্গুলী বলেন, ‘এটা ওদের ফিটনেস এবং পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করবে। যে সুযোগ পাবে, তারা ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবে। কারণ, ক্রিকেট এমন একটি খেলা, যেখানে নিয়মিত খেলা জরুরি। না খেললে ফর্ম হারিয়ে যায়।’

গিলের নেতৃত্বে ভারত প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামবে ১৯ অক্টোবর, পার্থে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বক প র বয়স

এছাড়াও পড়ুন:

স্বল্প আয়: কমছে নৈশপ্রহরীর পেশায় আগ্রহ, সংকটে নিরাপত্তা

শহুরে সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে, নিরাপত্তার চাহিদা ততই বাড়ছে। শহরের জনজীবনের নিরাপত্তা এক মৌলিক স্তম্ভ হলো নৈশপ্রহরী বা নাইট গার্ড। অথচ এই পেশা ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের নগরজীবনের মূল কাঠামো থেকে। এর মূল কারণ হলো স্বল্প মজুরি। কম বেতন, অনিরাপদ কর্মঘণ্টা এবং সামগ্রিক অবহেলার কারণে নৈশপ্রহরীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পেশায় কর্মীর সংখ্যা দ্রুত কমছে।

অথচ এ পেশাই ছিল শহরের রাতের নিরাপত্তার অন্যতম ভরসা। নৈশপ্রহরী রাতের বেলা নিরবচ্ছিন্নভাবে কোনো এলাকায়, ভবনে, পাড়ায় বা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। যখন পুরো শহর ঘুমিয়ে থাকে, তখন শুরু হয় তাঁর দায়িত্ব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নৈশপ্রহরীর কাজ হলো এলাকা বা ভবন টহল দেওয়া, শহরে বা এলাকায় চুরি, ডাকাতি কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করা। এককথায়, তাঁদের রাতে শহরের যেকোনো ঝুঁকির প্রথম প্রতিরক্ষা সারি বলা যায়।

শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা যতই প্রযুক্তিনির্ভর হোক, নৈশপ্রহরীর অবদানের বিকল্প নেই। একটি ক্যামেরা ছবি তুলতে পারে কিন্তু আশঙ্কাজনক শব্দ শুনে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না।

শহরের জনজীবনের এক স্বস্তির নিশ্বাস হলেন নৈশপ্রহরীরা। রাতের শান্তি বজায় রাখার মাধ্যমে নাগরিকের মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন হাজারো নির্ঘুম প্রহরী।

গবেষণা বলছে, দৃশ্যমান নিরাপত্তাকর্মীর উপস্থিতি অপরাধীদের নিরুৎসাহিত করে। শহরে রাতের বেলা চুরি ও ডাকাতি কমাতে নৈশপ্রহরী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দ্রুত বাড়তে থাকা জনঘনত্বপূর্ণ এলাকা, বহুতল ভবন, গাড়ির সংখ্যা—এই সবকিছু মিলিয়ে রাতের শহরটি ঝুঁকিপূর্ণ। নৈশপ্রহরী সেখানে মানবিক নজরদারির অপরিহার্য এক উপাদান।

তাহলে কেন এই গুরুত্বপূর্ণ পেশা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছেন মানুষ? ঢাকায় কোনো পরিবারের একজন উপার্জনকারীকে ২০-২৫ হাজার টাকার প্রাথমিক ব্যয় ধরতেই হয়। তা–ও কেবলই টিকে থাকতে, কোনো আরাম–আয়েশ ছাড়া। এদিকে নৈশপ্রহরীদের মাসিক বেতন অনেক এলাকায় মাত্র ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। যা জীবনযাত্রার মৌলিক ব্যয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পাশাপাশি এই পেশার নেই কোনো সামাজিক স্বীকৃতি। নৈশপ্রহরীর কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সমাজে তাঁদের জন্য থাকে না সম্মান, না প্রশংসা। অনেক সময় তাঁদের কাজকে তুচ্ছ হিসেবে দেখা হয়, ফলে আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়। এসব কারণেই দিন দিন নৈশপ্রহরীর পেশায় অনীহা দেখা দিচ্ছে।

তাহলে এর সমাধান কোথায়? নৈশপ্রহরী পেশাকে টেকসই ও সম্মানজনক করতে কী করা দরকার?

প্রথমত, ন্যায্য ও জীবিকা নির্বাহের জন্য বেতন নির্ধারণ করা। শিগগিরই সরকার, সিটি করপোরেশন ও হাউজিং কমিটিগুলোকে যৌথভাবে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করতে হবে। ১৮-২০ হাজার টাকা না হলে একজন প্রহরী জীবন চালাতে পারেন না। বেতনকাঠামো অবশ্যই আইনি বাধ্যবাধকতার অধীনে রাখতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রহরীদের জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম দেওয়া সরকারিভাবে। তৃতীয়ত, আট ঘণ্টার কর্মঘণ্টা নিশ্চিতকরণ। এ ছাড়া নিরাপত্তা প্রহরীকে কেয়ারটেকার বা কমিউনিটি সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে পরিচিত করা যেতে পারে। এতে সামাজিক মর্যাদার ফলে এ পেশায় কাজের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।

পরিশেষে, রাতের অন্ধকারে শহরকে নিরাপদ রাখেন যেসব নৈশপ্রহরী, তাঁদের পেশাকে অবহেলার কারণে আমরা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি আমাদের সামাজিক জীবনের নিরাপত্তা। যাঁরা রাতের বেলা জীবনের অনিশ্চয়তাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে আমাদের ঘুম নিঃশব্দে রক্ষা করেন, তাঁদের যথার্থ সম্মান ও সঠিক পারিশ্রমিক নিশ্চিত করাই এখন জরুরি।

মায়িশা ফাহমিদা ইসলাম শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গোপালগঞ্জ শহরে হোটেল থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার
  • কুমিল্লায় বাসের ধাক্কায় দুজনের মৃত্যু
  • ১২ বছর পর জিম্বাবুয়ে সফরে অস্ট্রেলিয়া
  • মণিপুরে আসাম রাইফেলসের চৌকিতে হামলা, ৪ জওয়ান আহত
  • দাউদকান্দিতে বাসের ধাক্কায় ট্রলির দুই আরোহী নিহত
  • স্বল্প আয়: কমছে নৈশপ্রহরীর পেশায় আগ্রহ, সংকটে নিরাপত্তা
  • ভারতীয় শিল্পপতির মেয়ের বিয়েতে পারফর্ম করতে কত নিয়েছেন জেনিফার লোপেজ
  • কঠিন পথ মাড়িয়ে সাফল‌্যের খোঁজে বাংলাদেশ
  • দল নির্বাচন নিয়ে বিসিবি-নির্বাচকদের ‘এক হাত নিলেন’ লিটন
  • ভারতের বাজে পারফরম্যান্স: শ্রীকান্তের কাঠগড়ায় গম্ভীর ও পন্ত