সোনারগাঁয়ের কাঁচপুরকে নাসিকে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগে নিন্দা-প্রতিবাদ, গণসাক্ষর
Published: 10th, October 2025 GMT
সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের দক্ষিণাংশকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় বইছে। স্থানীয় জনগণ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, যার উদ্দেশ্য সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য, প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র ও রাজনৈতিক ভারসাম্য ভেঙে দেওয়া।
সোমবার (৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার টি.
চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উপজেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
এই চিঠিকে কেন্দ্র করে কাঁচপুর ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কাঁচপুর বাজারে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেন এবং গণসাক্ষর কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সোনারগাঁ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। “আমরা সোনারগাঁওবাসী, সিটি করপোরেশনে নয়”এই স্লোগান ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে এলাকা।
স্থানীয় সমাজসেবক বি. এম ডালিম বলেন, “সোনারগাঁ কেবল একটি উপজেলা নয় এটি ইতিহাসের অংশ, এটি ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রশাসনিক স্বার্থে কিংবা ভোটের রাজনীতি করতে এসে যদি কেউ এই এলাকার মানচিত্র নিয়ে খেলা করতে চায়, আমরা তা মেনে নেব না। কাঁচপুর ছিল, আছে, থাকবে সোনারগাঁয়ের অংশ হিসেবেই।”
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রুবেল হোসাইন বলেন, “এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করার গোপন পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য ধ্বংস করে কাঁচপুরকে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে তারা ভোটের মাঠে সুবিধা নিতে চায়।”
সোনারগাঁয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি নিছক প্রশাসনিক পরিবর্তন নয়। এর পেছনে রয়েছে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। আগে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনকে শুধুমাত্র সোনারগাঁ নিয়ে গঠন করা হয়েছিল, পরে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের কিছু অংশ যুক্ত করা হয়।
এবার সেই একই কৌশলে কাঁচপুরকে সিটি করপোরেশনের আওতায় নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এটি জনগণের মতামতের প্রতি চরম অবজ্ঞা।”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক বরাবর কিছু প্রভাবশালী মহল কাঁচপুরের একাংশকে সিটি করপোরেশনে যুক্ত করলে নির্বাচনে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর জন্য ভোটের ভারসাম্য তৈরি হবে এমন ধারণা থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও প্রশাসন বিষয়টি অস্বীকার করছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, “এলাকার উন্নয়ন চাই সবাই, কিন্তু এর নামে যদি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হয়, সেটা কখনো মেনে নেওয়া যাবে না। আমাদের সড়ক, ড্রেনেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবকিছু সোনারগাঁ প্রশাসনের অধীনে চলে। হঠাৎ করে সিটি করপোরেশনের আওতায় গেলে এই সব সেবার সমন্বয় ভেঙে পড়বে।”
এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা রাব্বি হোসেন বলেন, “নির্বাচনের সময় এলেই কিছু মহল সোনারগাঁয়ের মানচিত্র নিয়ে খেলা শুরু করে। এটি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।”
কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী সেলিম হক রুমী বলেন, “আমরা দেখছি, নির্বাচনের আগে কিছু মহল নানা অজুহাতে সোনারগাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সিটি করপোরেশনে কাঁচপুর গেলে জনগণ সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়বে। এক শ্রেণীর কুচক্রী মহল রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার হন্য সরাসরি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা চালাচ্ছে ।”
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি এসেছে। এটি কেবল প্রাথমিক তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জনগণের স্বার্থবিরোধী কিছু হলে আমরা অবশ্যই তা উচ্চ পর্যায়ে জানাব।”
এছাড়াও কাঁচপুর ইউনিয়নের তরুণ সমাজ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একমত এই প্রস্তাব অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। তারা দাবি করেছেন, সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রশাসনিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় কাঁচপুরের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালাবে।
ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে“সোনারগাঁ এক ও অভিন্ন” প্রচারণা শুরু হয়েছে, যা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে।
সোনারগাঁবাসীর ভাষায়“ এই সিদ্ধান্ত শুধু কাঁচপুরের নয়, পুরো সোনারগাঁয়ের মর্যাদার প্রশ্ন। ”তারা দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক স্বার্থে নয় সোনারগাঁ থাকবে এক ও অভিন্ন, নিজের পরিচয় ও ঐতিহ্যের গর্বে অটুট।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ ষড়যন ত র র জন ত ক জনগণ র স ন রগ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাসে মেতে উঠেছে’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ আগুন সন্ত্রাসে মেতে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু।
তিনি বলেন, ‘‘কড়াইল বস্তিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুনের পেছনে কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখা জরুরি। জনগণ বিশ্বাস করে, এগুলোর সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।’’
বুধবার (২৬ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ছনবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
মীর সরফত আলী সপু বলেন, ‘‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, দেশের মানুষ এখন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা শৃঙ্খলাভঙ্গ করে নির্বাচন ব্যাহত করা যাবে না। জনগণ এবার ভোটের মাধ্যমে তাদের জবাব দেবে।’’
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সদস্য মোমিন আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস ধীরন।
ঢাকা/রতন/রাজীব