বাংলাদেশের আর্থিক খাতে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে আসছে ডিজিটাল ব্যাংক। এক যুগ আগে মোবাইল ফোন থেকে মোবাইল ফোনে টাকা পাঠানোর সুবিধা যেভাবে বিপ্লব ঘটিয়েছিল, ডিজিটাল ব্যাংক তার চেয়েও বেশি সুবিধা নিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে টাকা জমা, ঋণ গ্রহণ, প্রবাসী আয় গ্রহণসহ সব ধরনের আর্থিক সেবা এখন হাতের মুঠোয় চলে আসবে। কোনো ধরনের শাখা স্থাপন ছাড়াই সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় সেবার খরচ অনেক কমে যাবে, যা সাধারণ মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে আরও সহজ করবে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়ে গেছে। ডিজিটাল ব্যাংকের কোনো ভৌগোলিক সীমা না থাকায় এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছেও ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে পারবে, যা দেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল ব্যাংক কী, এই ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে এত আগ্রহ কেন২১ আগস্ট ২০২৩

জানা গেছে, আগামী বছরের মধ্যেই দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এর আগে ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদনের প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্ক ওঠায় এবার লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন গ্রহণ করার কথা জানিয়েছিল। পরে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আবেদনকারীদের ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩১ ধারা অনুযায়ী নীতিগত লাইসেন্স দেওয়া হবে। এ জন্য উদ্যোক্তাদের সিলগালা করা আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫ লাখ টাকা প্রসেসিং ফি ও সব নথি জমা দিতে হবে। নথি সরাসরি ও ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে।

আবেদন বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রযুক্তিনির্ভর পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশে দক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতেই এ উদ্যোগ। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক সেবায় প্রবেশাধিকার বাড়বে, ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পাবেন এবং কর্মসংস্থান ও খাদ্যনিরাপত্তা জোরদার হবে।

ডিজিটাল ব্যাংক কী

ডিজিটাল ব্যাংক এমন একটি ব্যাংক, যার নিজস্ব কোনো শাখা, উপশাখা, এটিএম বা সিডিএম (নগদ জমা মেশিন) থাকবে না। এর সব সেবা মিলবে শুধু ডিজিটাল মাধ্যমে, যেমন ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপ। এটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য ভার্চ্যুয়াল কার্ড ও কিউআর কোডের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। লেনদেনের জন্য গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম বা এজেন্ট সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। এটি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে হিসাব খোলা থেকে শুরু করে যেকোনো সেবা নেওয়ার জন্য কোথাও যেতে হবে না, যেকোনো স্থান থেকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেই সেবা নেওয়া যাবে।

বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়েছে, এটি বড় বা মাঝারি শিল্পে ঋণ দিতে পারবে না। তবে ছোট আকারের ঋণ দিতে পারবে। এ ছাড়া কোনো ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুমতি থাকবে না। বর্তমানে দেশে বিকাশ, নগদ বা রকেটের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) চালু থাকলেও, সেগুলো ডিজিটাল ব্যাংকের একটি অংশমাত্র। ডিজিটাল ব্যাংক হবে একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক, যা আর্থিক সেবাগুলোকে আরও সর্বজনীন করে তুলবে।

বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রসার

বিশ্বের অনেক দেশে প্রথাগত ব্যাংকের পাশাপাশি ডিজিটাল ব্যাংক বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রযুক্তির সাহায্যে উদ্ভাবনী সেবা দিয়ে এসব ব্যাংক গ্রাহকদের কাছে সহজেই পৌঁছে গেছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৪০০-এর বেশি ডিজিটাল ব্যাংক রয়েছে। রেভোলুট হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি ডিজিটাল ব্যাংক। যারা আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্স, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড, স্টক ট্রেডিং এবং একাধিক মুদ্রায় হিসাব খোলার মতো সুবিধা দেয়। এনটুসিক্স হলো জার্মানভিত্তিক একটি ব্যাংক, যারা মোবাইল অ্যাপ এবং মাশুলবিহীন হিসাব খোলার সুবিধার কারণে ইউরোপজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

নিওব্যাংক হলো লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম ডিজিটাল ব্যাংক। ব্রাজিল, মেক্সিকো ও কলম্বিয়ায় এটি ক্রেডিট কার্ড, সঞ্চয়ী হিসাব ও ক্ষুদ্রঋণের মতো সেবা দিয়ে কোটি কোটি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে গেছে। এদিকে কাকাওব্যাংক হলো দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ডিজিটাল ব্যাংক। এটি জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ ‘কাকাওটক’-এর মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক গ্রাহককে যুক্ত করেছে। এটি আমানত, ঋণ, ক্রেডিট কার্ড এবং আন্তর্দেশীয় রেমিট্যান্স–সেবাসহ সব ধরনের ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা দেয়।
দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে এবং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। এমনকি গ্রামের রিকশাচালক থেকে শুরু করে শহরের ভিক্ষুকদের একটি অংশও এখন ইন্টারনেটযুক্ত ফোন ব্যবহার করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল ব্যাংক অত্যাধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারবে।

দেশের মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই ডিজিটাল লেনদেনের অভ্যাস তৈরি করেছে। তবে তাদের সেবার ধরন সীমিত। ডিজিটাল ব্যাংক এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারবে। যেমন এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত নিতে বা ঋণ দিতে পারে না। কিন্তু বিকাশের মতো দীর্ঘদিন ডিজিটাল আর্থিক সেবা দিয়ে আসা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স পেলে তারা সরাসরি আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণ করতে পারবে। বিকাশের ৮ কোটিরও বেশি গ্রাহক থাকায় এটি সমাজের সর্বস্তরে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে এমএফএসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ডিজিটাল ব্যাংক হলে গ্রাহকেরা সরাসরি তাঁদের অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারবেন, যা খরচ কমাবে এবং প্রক্রিয়া সহজ করবে।

ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব উদ্ভাবনকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি নতুন উদ্যোগকেও বাধাগ্রস্ত করছে।বাংলাদেশ: কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক: আইএফসি

এ ছাড়া ডিজিটাল ব্যাংক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ঋণ ও সঞ্চয় সেবা দিয়ে আর্থিক ব্যবস্থায় তাঁদের অংশগ্রহণ বাড়াতে পারবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঋণ বিতরণ করলে খেলাপি ঋণের ঝুঁকিও কমবে। যেমন বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে প্রায় ১০ লাখেরও বেশি গ্রাহক সিটি ব্যাংক থেকে ৫৫ লাখ বারের বেশি ডিজিটাল ঋণ নিয়েছেন, যার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এই ধরনের ডিজিটাল ঋণকে আরও সহজ ও সর্বজনীন করা সম্ভব।
এ ছাড়া অঞ্চল, শ্রেণি-পেশাভিত্তিক সেবা চালু করে সহজেই যেকোনো গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যেতে পারে ডিজিটাল ব্যাংক। পুরো সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে হওয়ায় সহজেই যে কারও কাছে পৌঁছে যেতে পারে এই ব্যাংক।

স্বচ্ছতা ও সতর্কতা প্রয়োজন

ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করতে যেমন সতর্কতা প্রয়োজন, তেমনি লাইসেন্সের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। দেশের মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও আর্থিক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেকেই এখনো ততটা অভিজ্ঞ নন। তাই গ্রাহকদের প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা ব্যবহারের জ্ঞান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি জোরদার করতে হবে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও। এ জন্য প্রয়োজন বড় বিনিয়োগ ও পেশাদারদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ থাকা।

এর আগে ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য ৫২টি আবেদন থেকে ৮টি প্রাথমিক অনুমোদন ও ২টি লেটার অব কনসেন্ট দেওয়া হয়েছিল। তবে তখন ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছিল, যা আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার (আইএফসি) এক রিপোর্টেও উঠে আসে। ‘বাংলাদেশ: কান্ট্রি প্রাইভেট সেক্টর ডায়াগনস্টিক’ শীর্ষক এই রিপোর্টে বলা হয়, ‘ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব উদ্ভাবনকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি নতুন উদ্যোগকেও বাধাগ্রস্ত করছে। যেমন ২০২৩ সালের অক্টোবরে ৫২টি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দুটিকে একটি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছিল তাদের রাজনৈতিক পরিচয়।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, ডিজিটাল ব্যাংকিং শুধু প্রযুক্তির উন্নয়ন নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনেও সহায়ক হতে পারে। তাই এমন উদ্যোক্তাদের হাতেই এর লাইসেন্স দেওয়া উচিত, যাঁদের বিনিয়োগ করার সক্ষমতা এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা আছে।

আরও পড়ুনডিজিটাল ব্যাংক খুলতে লাগবে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা২৪ আগস্ট ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর আর থ ক স ব গ র হক র উদ য ক ত র আর থ ক ব যবস থ র জন য গ রহণ র একট ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই ডিজিটাল সেবার বাইরে

দেশের সব ধরনের আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত মোট গ্রাহকের ৭৫ শতাংশের বেশি ডিজিটাল সেবা পান না। উল্টোভাবে বলা হলে, একটি মাত্র ডিজিটাল সেবা ব্যবহার করেন, এমন গ্রাহক ২৪ শতাংশ বেশি। এমন সব সেবার আওতায় থাকা মোট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৪২ কোটি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণার এক জরিপে এ তথ্যগুলো উঠে এসেছে।

গবেষণায় বলা হয়, আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত মোট গ্রাহকের হিসাবের মধ্যে রয়েছেন ব্যাংকগুলোর শাখার আমানতকারী, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) এজেন্ট ও গ্রাহক, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবার এজেন্ট ও গ্রাহক, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী এবং অ্যাপ ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি গ্রাহক বিভিন্ন ব্যাংকের আমানতকারী। এমএলএস গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। অন্যরা অন্যান্য সেবার গ্রাহক। এই হিসাবে এমএফএস প্রতিষ্ঠান নগদের গ্রাহকদের রাখা হয়নি।

আজ বুধবার বিআইবিএম আয়োজিত ব্যাংকের আর্থিক সেবা খাতে ডিজিটাল রূপান্তর ও পণ্য ব্যবহার নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। আলোচনায় ‘ব্যাংকের আর্থিক সেবা খাতে রিটেইল ব্যাংকিংয়ে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রভাব ও ব্যাংকিং পণ্য উদ্ভাবন’ নিয়ে একটি গবেষণা উপস্থাপন করা হয়। বিআইবিএমের চার শিক্ষক এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা মিলে মোট ৩২টি ব্যাংক ও ৩২০ জন রিটেইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহারকারী গ্রাহককে প্রশ্ন–উত্তরের মাধ্যমে গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন।

অনুষ্ঠানে গবেষণার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম ও সহযোগী অধ্যাপক শামসুন নাহার মমতাজ। অনুষ্ঠানে অনলাইন মাধ্যমে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের ‘এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর’ ফারুক এম আহমেদ ও সুপারনিউমারারি অধ্যাপক আলী হোসেন প্রধানিয়া। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের শিক্ষক জুলহাস উদ্দিন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আইসিটি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রয়।

আলোচনা সভায় গবেষণার নানা গ্রাহক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ডিজিটাল সেবা নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে সব ধরনের আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ডেলিভারি চ্যানেলের সংখ্যা ৬ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখে। আর চলতি বছরে এসব ডেলিভারি চ্যানেলের ৮৮ শতাংশ দখল রয়েছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর।

গবেষণায় আরও বলা হয়, ব্যাংক খাতের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন–উত্তরের ভিত্তিতে তৈরি জরিপে ডিজিটাল পণ্য ও অবকাঠামো সফলতার সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এটিএম সেবা। আর ব্যাংকগুলো তাদের সেবার ডিজিটাল রূপান্তরে মোট বার্ষিক বাজেটের ১২ শতাংশের বেশি অর্থ খরচ করে। আর দেশের ৭১ শতাংশের বেশি গ্রাহক স্মার্টফোনের মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বিআইবিএমের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারে বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ডিজিটাল চ্যানেল তৈরির জন্য খরচ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, ব্যাংকিং খাতের ডিজিটাল রূপান্তরে সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রযুক্তি ও অবকাঠামোয় বিনিয়োগের খরচ। এ ছাড়া আছে সাইবার প্রতারণার ঝুঁকি। এ অবস্থায় দেশের ৬৮ শতাংশের বেশি ব্যাংক এখনো উন্নয়ন পর্যায়ে আটকে আছে।

বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি প্রফেসর আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, অনেক দেশে বড় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

বিআইবিএমের এ কে গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ার প্রফেসর ফারুক এম আহমেদ বলেন, ডিজিটালাইজেশনকে অনেক সময় বাড়তি ব্যয় হিসেবে দেখা হয়। তবে এই খরচ আসলে বিনিয়োগ। তিনি প্রস্তাব করেন যে ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে অন্তত একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আর্থিক সেবার অন্তর্ভুক্ত ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই ডিজিটাল সেবার বাইরে