দিনাজপুর সীমান্তে বিজিবি-গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, ১২ সদস্য প্রত্যাহার
Published: 17th, October 2025 GMT
দিনাজপুরের বিরামপুর সীমান্তে এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধরের জেরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর বিজিবির ১২ সদস্যকে প্রত্যাহার করে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিরামপুর উপজেলার দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামে বিজিবির জয়পুরহাট ২০ ব্যাটালিয়নের দাউদপুর বিওপির সদস্যদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মাগরিবের নামাজের পর দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন আতিয়ার রহমান (২২) তাঁর প্রতিবেশী আমিনুল ইসলামকে (১৮) নিয়ে গ্রাম-সংলগ্ন বিল থেকে নিজের খামারের হাঁস আনতে যান। পথে বাংলাদেশ-ভারতের ২৯০/২৭ নম্বর সীমানাপিলার থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে তাঁদের দুজনকে আটক করে বিজিবি। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা বিলে হাঁস আনতে গিয়েছিলেন জানালে আতিয়ার রহমানকে টহল পোস্টে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে দাউদপুর ক্যাম্পের নায়েকসহ কয়েকজন তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এ সময় আতিয়ারের চিৎকারে টহল পোস্ট-সংলগ্ন বাড়ি থেকে তাঁর মা রাবেয়া বেগম গিয়ে ছেলেকে মারধরের প্রতিবাদ করেন। এ সময় তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে গ্রামবাসী গিয়ে আতিয়ার ও তাঁর মাকে মারধরের ঘটনায় বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর হাতাহাতি হয়। এ সময় বিজিবির টহল পোস্টে ভাঙচুর করেন। পরে গ্রামবাসী বিজিবির কাছ থেকে আতিয়ার, তাঁর মা রাবেয়া ও আমিনুলকে উদ্ধার করে গ্রামে নিয়ে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, ওই ঘটনার প্রায় আধা ঘণ্টা পর দাউদপুর বিওপির ১৫ থেকে ১৭ জন বিজিবি সদস্য গ্রামে গিয়ে নারী-শিশুসহ গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হন। তাঁরা প্লাস্টিকের পাইপ ও গাছের ডাল দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও দক্ষিণ দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা মইনুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে তাঁকে মারতে তেড়ে আসেন বিজিবির সদস্যরা। বাধা দিলে ইউপি সদস্যের স্ত্রীকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এতে ছয় শিশুসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন।
আহত জফেলা বেগম (৬২) বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলা হারা (আমি) বাড়িত আন্দাবাড়ি (রান্না) করোছো নো। হামাক বাড়িত যাইয়ে মারে আইছে। হারা কাওকে কিছু বলি নাই। হারা ভিড়োতও যাই নাই। বিজিবি হামার বাড়িত যায়ে লাঠি দিয়ে মারে হামার হাত ভাঙে দিছে। হারা কী ক্ষতি করিছি ওমার (বিজিবি)।’
স্থানীয় বাসিন্দা জোসনা বেগম বলেন, আতিয়ারকে বিজিবি ধরে নিয়ে টহল পোস্টে মারধর করে। খবর পেয়ে গ্রামের তরুণ-যুবকেরা তাঁকে নিয়ে আসেন। এরপর তিনি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিজিবির সদস্যরা ধাওয়া করে বাড়িত ঢুকে কাঁচা কঞ্চি দিয়ে পেটানো শুরু করেন। এতে তাঁর শরীর রক্তাক্ত হয়ে যায়।
জানতে চাইলে দাউদপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার তাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে একটা ভুল–বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছিল। পরে বিজিবির জয়পুরহাট ২০ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিতি ছিলেন। পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বিষয়টির সমাধান হয়। এ ঘটনায় ১২ জন বিজিবি সদস্যকে আজ শুক্রবার সকালে দাউদপুর বিওপি থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র মব স র স টহল প স ট র রহম ন র সদস সদস য এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত অন্তত ১৭
অস্ত্রবিরতির মধ্যেই পাল্টাপাল্টি হামলার দাবি করেছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানে ১০ জন নিহত হওয়ার দাবি করেছে কাবুল। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান সীমান্তে আত্মঘাতী হামলায় ৭ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর বুধবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে ৪৮ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়। শুক্রবার সন্ধ্যায় অস্ত্রবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে দুই পক্ষই জানায়, অস্ত্রবিরতির মেয়াদ আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়াতে রাজি তারা।
পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে ‘শান্তি আলোচনা’ শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় প্রথম দফার বৈঠক করেছে দুই পক্ষের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
এদিকে গতকাল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির বলেছেন, আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হচ্ছে। এটা ইসলামাবাদ ও কাবুল উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে উদ্বেগজনক।
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আফগান উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ নবি ওমরি। তিনি বলেছেন, কাবুল কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়নি। এসব গোষ্ঠীকে সমর্থনও করে না।
আফগানিস্তানে তিন স্থানে হামলাযুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির কয়েক ঘণ্টা পর কাবুল জানায়, দেশটির পাকতিকা প্রদেশের পৃথক তিন স্থানে পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের মুখপাত্র মোহাম্মদউল্লাহ আমিনি বলেন, পাকতিকা প্রদেশে পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন বারমাল, উরগুন ও খানাদার এলাকায় হামলা চালায় পাকিস্তান। তবে হামলায় কতজন হতাহত হয়েছেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।
পাকতিকার প্রাদেশিক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হামলায় স্থানীয় তিন ক্রিকেটারসহ ১০ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মুখপাত্র সাইয়েদ নাসিম সাদাত জানান, হামলায় নিহত সেই তিন ক্রিকেটার একটি ম্যাচ শেষে উরগুনে ফিরছিলেন।
গতকাল আফগান সরকারের মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে চালানো হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে কাবুল। তবে শান্তি আলোচনার বিষয়টি ভেবেই তাদের বাহিনীকে পাল্টা হামলা চালানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান বলছে ‘জঙ্গি আস্তানা’এর আগে গতকাল পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, আফগান সীমান্তের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) পৃষ্ঠপোষকতায় আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালানো হয়। এতে পাকিস্তানি সাত সেনা নিহত হয়েছেন।
আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী জেলা উত্তর ওয়াজিরিস্তানের মির আলী শহরে এ হামলা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা ইরফান আলী।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্র জানায়, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হামলাটি চালায় পাকিস্তানের নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী টিটিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ। এর জবাব দিতেই আফগানিস্তানে ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর আস্তানা নিশানা করে পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালায়।
এ বিষয়ে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধবিরতি তো আফগান তালেবানের সঙ্গে হয়েছে। আফগানিস্তানে অবস্থানরত সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সঙ্গে হয়নি, যারা পাকিস্তানে হামলা চালায়।
দোহায় শান্তি আলোচনাগতকাল দোহায় প্রথম ধাপের বৈঠকের পর ইসলামাবাদ বা কাবুল এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তবে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ গতকাল রাতে জানায়, দুই দেশের মধ্যে প্রথম দফার বৈঠক শেষ হয়েছে।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে জিও নিউজ জানিয়েছে, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ছিল আলোচনার মূল বিষয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতি ‘অগ্রহণযোগ্য’। আজ সকালে আবার দুই পক্ষ বৈঠকে বসবে।
পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। আরও রয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ আসিম মালিক। আফগান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ ইয়াকুব।
বৈঠক শুরুর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে জানায়, আলোচনায় মূলত আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অবসান এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে গুরুত্ব দেওয়া হবে।