সরকার এখন প্রতারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে: মান্না
Published: 30th, October 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার প্রতারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এনসিপি বলেছে সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এখন বিএনপি বলছে সরকার তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সরকার এখন প্রতারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পথরেখা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মান্না এ অভিযোগ করেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।
মান্না বলেন, সবার ধারণা ছিল, নোট অব ডিসেন্ট বা ভিন্নমতসহ সংস্কার প্রস্তাবগুলো গণভোটে যাবে। কিন্তু নোট অব ডিসেন্ট বাদ দিয়ে ঐকমত্য কমিশন একটা বাজে কাজ করেছে।
দেশে একটা সংকট চলছে উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, এই সংকট বিবেচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোকে এখান থেকে বেরোনোর উপায় বের করতে হবে। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। দলগুলো একে অপরকে হুমকি দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। তাতে অন্ধকারের শক্তি সামনে চলে আসতে পারে।
বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চ যুক্ত হয়ে কীভাবে নির্বাচন করতে পারে, সেটি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে বলে জানান মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, প্রার্থিতার বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এটি চলতে থাকবে। একই সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চ আরও তিনটি দলের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে। এসব দল চাইলে একসঙ্গে মিছিল-মিটিংও করতে পারে। নিজেরা চলতে চলতে বৃহত্তর ঐক্য হলে সেটি সবার জন্যই ভালো হবে। বিএনপি বা অন্যদের এ ক্ষেত্রে অখুশি হওয়ার কিছু নেই। তবে গণতন্ত্র মঞ্চভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে বা এনসিপির সঙ্গে যদি বিএনপির নির্বাচনী সমঝোতা হয়, তারপরও দলগুলোকে নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে।
দুই মাস পর নির্বাচন হয়ে গেলে সরকারের উপদেষ্টাদের আর পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, উপদেষ্টারা মনে করেন, তাঁরা যত তাড়াতাড়ি বিদায় নিতে পারেন, তত ভালো। এখন দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। এখন মাথা ঠান্ডা রেখে বুদ্ধির সঙ্গে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ব এনপ দলগ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলে ধ্বংস হয় গণতন্ত্র, শুরু হয় গুম-খুন: শুনানিতে জয়নুল আবেদীন
দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গুম-খুনের শুরুর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলকে কারণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সংকটের জন্য তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি দায়ী করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপির মহাসচিবের করা আপিল–সংক্রান্ত শুনানিতে আজ বুধবার অংশ নেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ এ মামলার পঞ্চম দিনের শুনানি হয়। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার দিন রাখা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে আনা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে ১৪ বছর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠমতে দেওয়া রায় সর্বোচ্চ আদালতের অন্য সব রায়কে লঙ্ঘন করেছে দাবি করে জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশেষ করে অষ্টম সংশোধনী মামলা, মাসদার হোসেন মামলাসহ অন্য সব মামলার রায়। সংবিধানের অভিভাবক সুপ্রিম কোর্ট। এই ক্ষমতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় না, যা ত্রয়োদশ সংশোধনীর মামলায় ব্যবহৃত হয়েছে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে সবাই কথা বলে। আগের যে সরকার, ফ্যাসিস্ট সরকার, সে–ও বলেছে, বিচার বিভাগের সব স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এমন স্বাধীনতা পেয়েছি যে “রাতের বেলায় কুপিবাতি জ্বালিয়ে” বিচার হয়েছে।’
১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার ঠিক আগে বিচারপতি খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন তৎকালীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন।
বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রবর্তনের পটভূমি শুনানিতে তুলে ধরেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার আগেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, বিচারপতি খায়রুল হক সংক্ষিপ্ত রায় বদলে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন অনুসারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন, যা অনৈতিক।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এ বি এম খায়রুল হক তাঁর রায়ে বলেছেন, সেখানে (তত্ত্বববধায়ক ব্যবস্থায়) কোনো বিচারপতি থাকতে পারবে না, তারা লাভবান হবে। কিন্তু সেই ক্রিমটা নিজে নিয়েছেন। তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থার জায়গাটা যিনি ধ্বংস করেছেন।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছর পর গত আগস্টে বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার হন। তিনি এখন কারাগারে রয়েছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ১৪ বছর আগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি নামের একটি সংগঠন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসেবে যুক্ত হয়।
রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং বিএনপির মহাসচিবের করা রিভিউ আবেদন থেকে উদ্ভূত আপিলের সঙ্গে অপর রিভিউ আবেদনগুলো শুনানির জন্য যুক্ত হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। এ অনুসারে পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের করা রিভিউসহ অপর রিভিউ আবেদন এবং বিএনপির মহাসচিবের আপিল শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে।
পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তির করা আপিলের ওপর ২১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। এরপর ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত সংগঠনের পক্ষে শুনানি করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। এরপর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন। এরপর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল এবং এ এস এম শাহরিয়ার কবির শুনানি করেন। শাহরিয়ার কবিরের বক্তব্য উপস্থাপনের পর হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (রিভিউ আবেদনকারী) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক শুনানি করেন। এরপর বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি শুরু করলেন, সঙ্গে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস।