আজ শুক্রবার ছুটির দিনের সকালে বিশ্বের ১২৭টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ষষ্ঠ। আজ সকাল আটটার দিকে আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৭৪। এই মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ নগরীর সাত এলাকায় দূষণ অপেক্ষাকৃত বেশি।

ছুটির দিনে সাধারণত যানবাহন কম চলে, বেশির ভাগ কলকারখানাও বন্ধ থাকে। ঢাকার বায়ুদূষণের বড় উৎস এগুলো। তারপরও আজ দূষণ কমেনি।

বায়ুদূষণে আজ বিশ্বের নগরীগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে পাকিস্তানের শহর লাহোর, স্কোর ৩০৪। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারতের দিল্লি নগরীর স্কোর ২১৫।

বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সেই সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।

চলতি মাসের শুরু থেকে রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে রাজধানীর দূষণ কমে। বছরে জুলাই সবচেয়ে কম দূষণের মাস। তবে বৃষ্টি থাকার পরও গত সেপ্টেম্বর মাসে একাধিক দিন ঢাকার দূষণ বেড়েছে। দু-এক দিন বিশ্বের শীর্ষ দূষিত নগরীর তালিকায়ও থেকেছে। অক্টোবর মাস থেকেই সাধারণত দূষণ বাড়তে থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকেই কয়েক দিন বায়ুদূষণে শীর্ষ নগরীগুলোর একটি ছিল ঢাকা।

ঢাকার সাত এলাকায় দূষণ বেশি

নগরীর সাত এলাকায় দূষণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এসব এলাকা হলো মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং, গোড়ান, পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, মাদানী অ্যাভিনিউয়ের বেজ এইজ ওয়াটার, কল্যাণপুর, গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও তেজগাঁওয়ের শান্তা ফোরাম।

নগরবাসীর জন্য পরামর্শ

আজ ঢাকার যে বায়ুমান তার পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। আর যেসব এলাকায় বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর, সেসব এলাকায় অবশ্যই বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য় নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

আইনশৃঙ্খলার উন্নতিতে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়া এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর খুলনায় প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে একটি বার্তাই দেয়—দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে গভীর শঙ্কার জন্ম দিতে বাধ্য।    

মানবাধিকার সংস্থা এনএসএফের প্রতিবেদনের বরাতে প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা অক্টোবরের ৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২-এ। আহত ব্যক্তির সংখ্যা একলাফে ৫৪৭ থেকে ৭২৪ এবং নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ২ থেকে ৯—এই ঊর্ধ্বগতি শুধু পরিসংখ্যান নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার প্রতিফলন। রাজনৈতিক সহিংসতা যখন মাসে মাসে বাড়ে, তখন তা নির্দেশ করে যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা মিলেমিশে সমাজে একধরনের সহিংসতার পরিবেশ তৈরি করেছে।

গণপিটুনির পুনরুত্থান ভয়াবহ সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আইনকে পাশ কাটিয়ে সংঘবদ্ধ জনতা বিচার করছে—এমন প্রবণতা যেকোনো সভ্য সমাজের জন্য লজ্জাকর। নভেম্বর মাসে ৪৩টি ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু; অক্টোবরে নিহত হয়েছেন ১২ জন—এ সংখ্যাগুলো শুধু হত্যার পরিসংখ্যান নয়; এ সংখ্যা আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর ইঙ্গিত। চুরি, ছিনতাই বা ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগেই হোক, আইনের শাসন ভেঙে পড়লে সাধারণ মানুষ নিজেরাই আইন হাতে তুলে নেয়। অথচ অপরাধীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা, গণপিটুনি ঠেকাতে তৎপরতা দেখানো—এসব দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

নভেম্বরে কারা হেফাজতে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে অসুস্থতার কথা বলা হলেও সেটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারাগারের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক অবহেলা কি এই মৃত্যুর কারণ? বারবার তদন্তের দাবি উঠলেও দায় নির্ধারণ বা কাঠামোগত সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই।

সীমান্ত পরিস্থিতিও সমানভাবে নাজুক। ভারতীয় কোস্টগার্ড কর্তৃক ১০৮ জেলে আটক, আরাকান আর্মির হাতে ৪৭ জেলে, বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু—এসব মিলিয়ে সীমান্তবাসী আজ অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। প্রতিবাদ বা কূটনৈতিক অনুরোধে তেমন ফল না হওয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতাকেই সামনে নিয়ে এসেছে।

নভেম্বর মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যেভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার খুলনায় দিনদুপুরে আদালত চত্বরে হাজিরা শেষে বের হওয়ার সময় দুজনকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ, যেখানে মানুষের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি থাকার কথা, সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যেভাবে প্রবেশ করেছে ও হত্যা করে বেরিয়ে গেছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা ও গোয়েন্দা নজরদারির ব্যর্থতা তুলে ধরেছে। খুলনায় ১৫ মাসে ৪৬টি হত্যাকাণ্ড এ শহরকে ধীরে ধীরে সহিংসতার কেন্দ্রে পরিণত করছে।

রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপ এখনো জোরালো ও দৃশ্যমান নয়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান—এখনই এসব পদক্ষেপ নিতে হবে।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতি চলতে থাকলে নির্বাচনী পরিবেশে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টিকে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ