মুরাদনগরে ড্রেজার সিন্ডিকেট, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন
Published: 30th, October 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার পূর্ব ধৈইর পশ্চিম ইউনিয়নের কোরবানপুর ও খোষঘর এলাকায় অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কৃষিজমি থেকে উর্বর মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে তিন ফসলি জমি, ক্ষয়ে যাচ্ছে মাটির স্তর, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশপাশের জমি এবং হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষকদের জীবিকা। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবার আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামে ড্রেজার সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার কোরবানপুরে ৪টি, পেন্নাই গ্রামে ২টি, রোয়াচলা গ্রামে ২টি, ছালিয়াকান্দি ইউনিয়নে ৫টি, দারোরা ইউনিয়নে ৩টি, ধামঘর ইউনিয়নে ২টিসহ মুকলিশপুর, সীমানার পাড়, জুগিরখিল প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।
বছরের পর বছর ধরে এই ড্রেজার সিন্ডিকেট ফসলি জমি থেকে মাটি ও বালু তুলছে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালালে কয়েক দিন থেমে থাকে মাটি উত্তোলন, পরে আবার সক্রিয় হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় ড্রেজার ব্যবসায়ীরা হয়ে উঠেছে বেপরোয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেছেন, “প্রতিদিন জমি থেকে বালু তুলে নেওয়া হচ্ছে। একসময় যে জমিতে ধান, গম, ডালসহ অনেক কিছু হতো, এখন সেখানে পানি জমে থাকে। চাষাবাদ তো দূরের কথা, জমি আর জমি নেই।”
আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বলেন, “আমরা বারবার ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে বলেছি। কিন্তু, কিছুদিনের জন্য বন্ধ হলেও পরে আগের মতোই ড্রেজার চলে। সবাই দেখেও না দেখার ভান করে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার এবং আজাদ দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় একাধিক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। কোরবানপুর জিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের পুকুর থেকে শুরু করে কোরবানপুর নতুন কবরস্থানের পাশ পর্যন্ত ৩-৪টি স্থানে ড্রেজার মেশিন নিয়মিত চলছে।
ড্রেজার ব্যবসায়ী সারোয়ার অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ড্রেজার শুধু আমার একার চলছে না। পাশেই তো আজাদ ও মামুনের ড্রেজার চলছে। আগে ওগুলো বন্ধ করুন, পরে আমারটা করব।
অন্য ড্রেজার ব্যবসায়ী আজাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেছেন, “অবৈধ ড্রেজিংয়ের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১ থেকে ২ শতাংশ কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। গত বছর থেকে এ বছর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হেক্টর জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে গেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে ফসল উৎপাদনে।”
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাকিব হাসান খান বলেছেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর কোরবানপুর এলাকায় ইতোমধ্যে ২০-২৫ বার অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযোগ পেলেই আমরা অভিযানে যাই। তবে, অভিযান শেষে তারা আবার নতুন পাইপ ও ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করে। এগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে জমির মালিকদের নিয়মিত মামলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকি।”
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ব যবস এল ক য় বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের অভিযোগ, ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রত্যক্ষদর্শীকে হুমকি
কুমিল্লার মুরাদনগরে সাত বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আজিজ মিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আর এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শীকে হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে অভিযুক্ত আজিজ মিয়াকে আটক করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁকে আটক করা হয়েছে বলে জানান মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান।
এর আগে গত সোমবার দুপুরে উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের একটি গ্রামে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। অভিযুক্ত আজিজ মিয়া (৫০) কামাল্লা ইউনিয়নের নেয়ামতপুর গ্রামের প্রয়াত শব্দরআলীর ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাত বছর বয়সী শিশুটি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। শিশুটির মা অন্যত্র থাকেন, সে থাকে বাবার সঙ্গে। সোমবার দুপুরে শিশুটির বাবা ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় আজিজ মিয়া বাড়িতে ঢুকে শিশুটিকে জোর করে বসতঘরের পাশে থাকা রান্নাঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি প্রতিবেশী এক নারী দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় শিশুটিকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমি কাঁধে বাঁশ নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। তখনই তিনজন নারী আমাকে ডেকে বলে রান্নাঘরে কিছু একটা হচ্ছে। তখন আমি তাঁদের সাথে নিয়ে রান্নাঘরের দরজা খুলে দেখি শিশুটির ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছেন আজিজ মিয়া।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, সোমবার দুপুরে এ ঘটনা দেখার পর থেকেই আজিজ মিয়ার পক্ষের লোকজন তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া শুরু করেন। তাঁর মুঠোফোনেও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল রাতে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। সন্ধ্যায় আজিজ মিয়াকে আটক করা হয়েছে। তিনি থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আজ বুধবার সকালে তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।