যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ: আবেদন, খরচ ও বৃত্তির খোঁজ
Published: 30th, October 2025 GMT
চিরাচরিত ইতিহাস, রাজকীয় স্থাপত্য, সবুজে ঘেরা প্রাচীন ক্যাম্পাস আর জ্ঞানের দীপ্তি মিশে আছে যুক্তরাজ্যের বাতাসে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দেশটি শুধু রাজনীতি বা সংস্কৃতি নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রেও এক অনন্য ঐতিহ্য বহন করে আসছে। উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাম তাই বিশ্বজুড়েই সুপরিচিত। বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়, মানসম্মত শিক্ষা ও প্রাণবন্ত সংস্কৃতির কারণে দেশটি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অন্যতম পছন্দের জায়গা।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। যেমন অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ও এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শিক্ষার মানে নয়, বরং গবেষণার গভীরতা ও বাস্তবমুখী শিক্ষাপদ্ধতির জন্যও বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। এখানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের অসংখ্য বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে, যার মধ্যে অনেক কোর্সই ইংরেজি মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
এ ব্যাপারে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় সেনজেন এডুকেশন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের প্রক্রিয়া সাধারণত সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশে রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষা–পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ও এজেন্ট, যাদের মাধ্যমেও আবেদন করা যায়। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভর্তির প্রক্রিয়া, নথি প্রস্তুতি ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে।’
মনিরুল হক আরও বলেন, ‘ভর্তিপ্রক্রিয়ায় আবেদনকারীর একাডেমিক যোগ্যতা, ভাষাগত দক্ষতা যেমন আইইএলটিএস, ওটিআই, ডুলিঙ্গো, এমওআই বা টোফেল পরীক্ষার ফলাফল, ব্যক্তিগত বিবৃতি এবং সুপারিশপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
আরও পড়ুনজাপানে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ কেমন৩০ মিনিট আগেযুক্তরাজ্যে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলক কিছুটা বেশি হলেও শিক্ষার মানের দিক থেকে তা যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ। গড়ে স্নাতক পর্যায়ের বার্ষিক টিউশন ফি প্রায় ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা, আর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তা প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা হতে পারে। পাশাপাশি, লন্ডন বা বড় শহরগুলোয় জীবনযাত্রার খরচ গড়ে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজের মাধ্যমে এর একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারেন।
স্টুডেন্ট ভিসাধারী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার সময় প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। অর্থাৎ মাসে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করারা সুযোগ রয়েছে। এই আয় বাসা ভাড়া, খাবার ও অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ সামলাতে যথেষ্ট সহায়ক।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের সুযোগ এবং সম্ভাবনা কেমন২৯ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনহার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, মূল্য হারাতে বসেছে ১০ ডিগ্রি২৮ অক্টোবর ২০২৫এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য রয়েছে নানা বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তার সুযোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো চিভনিং স্কলারশিপ, কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, রোডস স্কলারশিপ, ইম্পেরিয়াল কলেজ প্রেসিডেন্ট বৃত্তি, থিঙ্ক বিগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট গ্রেট স্টার্ট স্কলারশিপ, ইউসিএল গ্লোবাল আন্ডারগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, আম্বার স্কলারশিপ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ফি মওকুফের সুযোগ। এসব বৃত্তির মাধ্যমে শুধু টিউশন ফি নয়, বরং থাকা, যাতায়াত ও অন্যান্য ব্যয়ও বহন করা হয়। ফলে যোগ্যতা ও আগ্রহ থাকলে তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব।
শিক্ষার পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, ঐতিহ্যবাহী শহর, গবেষণার সুযোগ এবং বিশ্বব্যাপী সংযোগ—সব মিলিয়ে এটি শুধু পড়াশোনা নয়, বরং এক গভীর শিক্ষামূলক ও মানবিক যাত্রা। তাই যাঁরা বিশ্বমানের শিক্ষা, গবেষণা ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের উজ্জ্বল সম্ভাবনা খুঁজছেন, তাঁদের জন্য যুক্তরাজ্য হতে পারে উচ্চশিক্ষার আদর্শ ও স্বপ্নময় গন্তব্য।
আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স থেকে পিএইচডি ও রিসার্চের সাতসতেরো২৭ অক্টোবর ২০২৫আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কাজের সুযোগ২৮ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর জ য
এছাড়াও পড়ুন:
যবিপ্রবি প্রক্টর ওঠা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের শিক্ষক।
এসব সংবাদকে মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি (এনএফটি) বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘাত, ক্ষতিপূরণ পাবে সিটি
রাবি উপাচার্যের আশ্বাসে অনশন স্থগিত, শাটডাউন বহাল
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে (গ্রামের কাগজ, দৈনিক জনকণ্ঠ) প্রকাশিত সংবাদে অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ‘অবৈধভাবে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি’, ‘বারডেমে চাকরিরত অবস্থায় নিয়মবহির্ভূতভাবে পিএইচডি সম্পন্ন’ এবং ‘অস্তিত্ববিহীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন’ এর মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা একযোগে অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা এসব অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং তা যুক্তি ও প্রমাণের মাধ্যমে খণ্ডন করেন। এসব অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে তারা জানান, একজন সম্মানিত শিক্ষকের মানহানি করার অপচেষ্টা।
পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ঐত্রী বলেন, “স্যারের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত আক্রোশ ও প্রতিহিংসার ফল। স্যার সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি টানা ৯ বছর সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৫ বছর পূর্ণ হলেই অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়।”
তিনি আরো বলেন, “চাকরিরত অবস্থায় পিএইচডি সম্পন্ন করা কোনো নিয়মবহির্ভূত কাজ নয়। দেশের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো চাকরিজীবী পিএইচডি করতে পারেন। স্যার সম্পূর্ণ নিয়ম মেনেই তার গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। আর যারা বলছেন স্যারের পিএইচডিকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব নেই, তারা প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞ। স্যার ফ্রান্সের বিখ্যাত ‘ইউনিভার্সিটি ডি মন্টপেলিয়ার’ থেকে পিএইচডি করেছেন, যা প্রায় ৮০০ বছরের পুরোনো একটি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়।”
ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন এবং পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. শিরীন নিগার বলেন, “কিছু পত্রিকায় স্যারকে নিয়ে যে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তার প্রতিবাদে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপরাধী বলা নৈতিক নয়। এটি শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”
মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী