তিন দিন অটো চালিয়েও জরিমানার টাকা ওঠে না, ট্রাফিক কার্যালয়ে বিক্ষোভ
Published: 20th, November 2025 GMT
রাজশাহী শহরে অটোরিকশার বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশের চলমান অভিযানকে কেন্দ্র করে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এখন কোনো সার্জেন্ট অটোরিকশা ধরলেই চালকদের গুনতে হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা, যা আগে ছিল মাত্র ৩০০ টাকা।
হঠাৎ বেড়ে যাওয়া এই জরিমানাকে আয়-উপার্জনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ দাবি করে রাজশাহী শহরের শতাধিক অটোরিকশাচালক বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তারা বলছেন, তিন দিন অটো চালিয়েও জরিমানার টাকা ওঠে না। এ জরিমানা তারা মানেন না।
বিক্ষোভকারীরা জানান, রাজশাহী শহরে এখন দুই শিফটে অটোরিকশা চলে। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে সবুজ রঙের অটোরিকশা এবং পরের শিফটে চলে মেরুন রঙের অটোরিকশা। গ্রাম থেকে অনেক সময় অটোরিকশা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসে। শহর থেকে বের হতে হতে শিফট পরিবর্তন হয়ে গেলে সার্জেন্ট তাদের গাড়ি জব্দ করে মামলা দেন। সেই মামলার জরিমানাই দাঁড়ায় ২ হাজার ৬০০ টাকা। এতে একজন চালকের সারাদিনের আয় প্রায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।
তারা আরো জানান, গাড়ি জব্দ হওয়ার পরদিন জরিমানার টাকা জমা দিলেই কেবল তারা গাড়ি ফেরত পান। একই অভিযোগে দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে জরিমানা বেড়ে হয় ৫ হাজার টাকা। তৃতীয় ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ দাঁড়ায় ৭ হাজার ৫০০ টাকা।
অটোরিকশার চালকরা বলেন, এমন অস্বাভাবিক জরিমানা দিয়ে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এতে পরিবার–পরিজনসহ নিদারুণ কষ্টে আছেন হাজারো চালক।
বিক্ষোভে জাতীয়তাবাদী ইজিবাইক শ্রমিক দলের রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দীন বলেন, “অটোরিকশার বর্তমান জরিমানা ২ হাজার ৬০০ থেকে ৭ হাজার ৫০০ টাকা, যা একজন চালকের সাপ্তাহিক আয়ের চেয়েও বেশি। এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ও এই জরিমানা ৩০০ টাকার বেশি ছিল না। এখন সেটি হঠাৎ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবে চললে গাড়ি জব্দ হওয়ার পর চালকদের ভিক্ষা করে বাঁচতে হবে।”
সংগঠনটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেছেন, “আমরা মোট ১১ দফা দাবি জানিয়েছি। এগুলো কোনো বাড়তি সুবিধা নয়; এগুলো চালকদের ন্যায্য অধিকার। অযৌক্তিক জরিমানা, গাড়ি ডাম্পিং ও হয়রানির কারণে হাজারো পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, সহনশীল জরিমানা, নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা এবং নিবন্ধিত গাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত হোক।”
চালকদের দাবিগুলো হলো—ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ, হালনাগাদ ভাড়ার তালিকা প্রকাশ, অতিরিক্ত যাত্রী তোলার বিরুদ্ধে তদারকি, নির্দিষ্ট পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামার স্থান নির্ধারণ, অনিবন্ধিত গাড়িকে আইনের আওতায় আনা, নকশা অনুযায়ী নিরাপদ গাড়ি উৎপাদন, সমন্বিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নীতি, টাইম ওভার মামলার পুনর্বিবেচনা, চালকদের ট্রাফিক আইনবিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং মাসিক সমন্বয় সভা আয়োজন।
বিক্ষোভকালে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি গগন কুমার রায়, শাহ আলম ও মো.
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপি ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার নূর আলম সিদ্দিকী বলেছেন, “জরিমানা সফটওয়্যারে অটোমেটিক সেট করা। সেখানে কমানোর সুযোগ নেই। তবে, কোনো চালক নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে আমি বিষয়টি বিবেচনায় নিই। বৈধ কাগজপত্র থাকলে ২ হাজার ৬০০ টাকার জরিমানা কমিয়ে ৬৫০ টাকা করে দিই।”
তিনি আরো বলেন, “চালকদের আরো কিছু দাবি আছে, সেগুলো শুধু ট্রাফিক বিভাগ নয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২ হ জ র ৬০০ চ লকদ র
এছাড়াও পড়ুন:
সলিলের গানের ভেতরেই ছিল মিছিলের স্লোগান
‘গণসংগীত মানুষের রক্তে আগুন জ্বেলে দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে, মুক্তির পথ দেখিয়েছে’—আজ শহীদ মিনারে এই উচ্চারণে আবারও ফিরে এলেন সলিল চৌধুরী। বুধবার, সন্ধ্যায় উদীচীর আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হলো কিংবদন্তি গণসংগীতকার সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন ‘সতত সলিল’।
আলোচনা, গান, কবিতা ও নৃত্যে সজ্জিত এই আয়োজন ছিল একাধারে স্মরণ, শ্রদ্ধা ও চেতনার পুনর্জাগরণ। সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন লেখক–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়েম রানা এবং উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।
সলিল চৌধুরী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকেরা বলেন, জাতির যে ঐতিহাসিক ধারাক্রম রয়েছে, সেই ধারার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন সলিল চৌধুরী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার মানুষের প্রতিটি লড়াই–সংগ্রামে গণসংগীত মানুষের রক্তে আগুন জ্বেলেছে, মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, মানুষকে তার মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সলিল চৌধুরী ছিলেন সেই গণসংগীতের একজন কিংবদন্তি কারিগর। তাঁর হাত ধরে গণসংগীত পেয়েছে এক নতুন মাত্রা। তিনি কবিতাকে, মিছিলের স্লোগানকে যেমন গানে রূপান্তর করেছেন, তেমনি তাঁর রচিত সংগীত হয়ে উঠেছে মিছিলের স্লোগান। বক্তারা আরও বলেন, ‘গণমানুষের মুক্তির বাণী নিয়ে যে গান, তা আমাদের যুগে যুগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসকশ্রেণি থেকে শুরু করে অনেকেরই পছন্দের নয়। তাই হয়তো আমাদের সমাজে গণসংগীত যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু তারপরও মানবমুক্তির প্রতিটি লড়াইয়ে, প্রতিটি সংগ্রামে গণসংগীত আমাদের শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়। বাংলা আধুনিক গানের অবিস্মরণীয় সুরস্রষ্টা ও গণসংগীতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তি সলিল চৌধুরীর তৈরি করা গণসংগীত সর্বকালের জন্য প্রাসঙ্গিক।’
আলোচনা শেষে আয়োজন মাতিয়ে তোলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বৃন্দগান পরিবেশন করে উদীচী সংগীত বিভাগ ও ‘কোরাস’। একক গান করেন তানভীর আলম সজীব এবং মনসুর আহমেদ। বৃন্দনৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন; একক নৃত্যে অংশ নেন আদৃতা আনোয়ার প্রকৃতি। আবৃত্তিতে অংশ নেয় উদীচী আবৃত্তি বিভাগ; একক আবৃত্তি করেন শাহেদ নেওয়াজ।
আলোচনা শেষে আয়োজন মাতিয়ে তোলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা