সরকারকে এখন বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে
Published: 10th, November 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসে মতৈক্যে পৌঁছাতে অন্তর্বর্তী সরকার যে সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছিল, তা শেষ হচ্ছে আজ সোমবার। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট প্রশ্নে মতভিন্নতার কারণে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসে এ বিষয়ে সমঝোতার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিয়েছিল।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক এবং তাতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ৪ নভেম্বর আমরা সম্পাদকীয় ছেপেছিলাম। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও তাঁদের অভিমতে এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। বাস্তবেও রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থানের কারণে সমঝোতার সম্ভাবনাটা ক্ষীণ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ফলে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যাতে নতুন কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন বিচক্ষণ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার সমঝোতায় পৌঁছানোর দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দেওয়ার পর কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও জোটের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাস্তবে সেটা ফলপ্রসূ হয়নি; বরং এ সময়ে বড় দলগুলোর মধ্যে উল্টো দূরত্ব বেড়েছে। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, আলোচনার জন্য জামায়াতে ইসলামী এবং নয়টি দলের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হলেও, বিএনপি এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি। বিএনপি রাজনৈতিক দলের নেওয়া উদ্যোগে আলোচনায় বসতে রাজি নয়, অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিলে তবেই আলোচনায় বসবে। জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের পাল্টাপাল্টি কঠোর বক্তব্যে রাজনৈতিক বিরোধটাও তীব্র হয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সমঝোতার উদ্যোগ যখন চলছে, তখন জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল পাঁচ দফা দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে।
প্রশ্ন হলো, বড় রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তাহলে তারা কীভাবে সমঝোতায় পৌঁছাবে? শুধু মুখে সমঝোতার কথা বললে তো হবে না, বাস্তবে প্রতিটি দলকেই কিছুটা ছাড় দিতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যেখানে একটা মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব, সেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচি বিরোধকেই শুধু উসকে দিতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ পালন করতে হবে।
ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ বাংলাদেশের সামনে স্বৈরতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে বেরিয়ে গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণযাত্রার বড় এক সুযোগ এনে দিয়েছে। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই সেই যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরপর তিনটি নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগবঞ্চিত নাগরিকেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের জাতীয় নির্বাচনের জন্য। বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক গতিশীলতা, আইনশৃঙ্খলা ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো অতি সংবেদনশীল বিষয়গুলো এ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক দলগুলোকে এটা বিস্মৃত হলে চলবে না যে সব শ্রেণি ও মত–পথের মানুষের সমর্থন নিয়েই তারা শেখ হাসিনার শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার প্রক্রিয়া শেষে দলগুলোও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। একসঙ্গে প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল বসে এ রকম একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল ও অনন্য। এরপরও যদি সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থানের কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তার চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার জন-আকাঙ্ক্ষা ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশাকে বিবেচনায় নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও গণভোট প্রশ্নে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও নাগরিক ও দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সরকার, রাজনৈতিক দল—সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবে, সেটাই প্রত্যাশিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমঝ ত র উদ য গ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মুন্সীগঞ্জে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবক নিহত
মুন্সীগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের গুলিতে আরিফ মির (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন নিহতের চাচাতো ভাই ইমরান। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৬টার দিকে ইউনিয়নের চরডুমুরিয়া গ্রামে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
বগুড়ায় অটোরিকশা চালক হত্যায় জড়িত ২ জন গ্রেপ্তার
নিহতের স্ত্রী পারুল বেগম ও এলাকাবাসী জানান, এলাকায় আধিপত্য নিয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিক ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি ওহিদ মোল্লার অনুসারী শাহ কামাল গ্রুপের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপি সাবেক সহ-সভাপতি আওলাদ হোসেনের অনুসারী নিহত আরিফ গ্রুপের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজ সকালে আরিফ ও ইমরান বাড়ির সামনে গেলে শাহ কামালের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি তাদের ওপর হামলা চালায় ও গুলিবর্ষণ করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরিফ ও ইমরানকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিরোধ চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। যে ঘটনাটি ঘটেছে তা তাদের নিজেদের বিষয়। এর দায়ভার বিএনপি নেবে না।”
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রুহুল আমিন জানান, দুইজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনেন স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে আরিফ হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। আহত ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল আলম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা/রতন/মাসুদ