সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায় পুরোপুরি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর ছেড়ে দিতে পারে না। সরকারের এখানে মৌলিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি হয়ে গেলে যদি জানুয়ারিতেও নির্বাচন হয়, তাতে জামায়াতে ইসলামীর আপত্তি নেই। তবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সবার এটা বোঝা উচিত, মৌলিক সংস্কার ছাড়া এ দেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মানবে না।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতি উদ্বিগ্ন। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, দেশ কোন দিকে যাচ্ছে—এর কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা মানুষ খুঁজে পাচ্ছে না। আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি জাতীয় নির্বাচন জাতির প্রত্যাশা। আমরা মনে করি, সব রাজনৈতিক দল এবং বর্তমান সরকারেরও এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই, ভিন্নতা নেই। এখন যে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন।

আরও পড়ুনজাতি নির্বাচনের মাঠে, সনদ বাস্তবায়নের দাবি কেন রাজপথে৪৩ মিনিট আগে

যে কতিপয় সংস্কারের ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হয়েছি, যেটাকে জুলাই সনদ বলা হচ্ছে; এই জুলাই সনদের মাধ্যমে দেশে একটি গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তন আসবে—এ ব্যাপারে মানুষ গভীরভাবে আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করছে। সুতরাং আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো যদি আন্তরিক হয়, তাহলে এ ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা কোনো বড় ধরনের কঠিন কাজ হবে না।

জুলাই সনদের বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমরা সবাই সই করেছি এবং এনসিপিও (জাতীয় নাগরিক পার্টি) ইতিমধ্যে এই সনদের আইনি ভিত্তি এবং সাংবিধানিক ভিত্তি পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেলে স্বাক্ষর করার বিষয়ে মতপ্রকাশ করেছে।

সুতরাং জুলাই সনদের ব্যাপারে এখানে আর কারও কোনো ভিন্নমত নেই এবং এ ব্যাপারে ঐকমত্য কমিশন যেটি সুপারিশ দিয়েছে, আমরা সবাই সেটাকে গ্রহণ করি। আমরা চাই জুলাই সনদের একটি সাংবিধানিক ভিত্তির ব্যাপারে নিশ্চয়তা এবং সে ব্যাপারে একটি আদেশের মাধ্যমে যে সুপারিশ করা হচ্ছে, এটাকে সাংবিধানিক এবং আইনি বৈধতা দেওয়ার জন্য আলোচনা করা। এটা অতি জরুরিভাবে সম্পন্ন করা উচিত এবং এ ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার যে সময়ক্ষেপণ করছে, এটাই সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টাকে আদেশ জারি করার যে সুপারিশ করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রথমত তিনি আদেশ ঘোষণা করবেন এবং এর জন্য যে গণভোটের প্রয়োজন, সে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। জুলাই সনদে যদি আইনগত, শাসনতান্ত্রিক ও সংবিধানভিত্তিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তাহলে এই নির্বাচন জানুয়ারি মাসে হতে পারে এবং সে জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যদি কোনো আইনি ভিত্তি না থাকে এবং কেউ এ নিয়ে গড়িমসি করে যদি সবকিছুকে অনিশ্চিত করে ফেলে, তাহলে এই সমস্যার সমাধানে অনেক জটিলতা হতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার কথা আমরা বলেছি। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোতে পারস্পরিক যে সংকট দেখা দিয়েছে, মানুষের ভেতরে যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে—সবকিছু দূর করার জন্য মূল রাজনৈতিক শক্তি যারা আছে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা হওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমাদের আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, অবাধ–সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে পরিবেশ দরকার, সে পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত হবে এবং আমরা সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কীভাবে রাস্তা বের করতে পারি—এসব বিষয়েও পারস্পরিক আলোচনা হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হোক। সেটি জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার মাধ্যমে যদি নির্বাচন আগেও করা সম্ভব হয়, সে ব্যাপারেও আমাদের দলের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। আমরা আশা করি, সবাই মিলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যথাযথ, উপযুক্ত, উপযোগী পরিবেশ তৈরি করব। একই সঙ্গে জুলাই সনদকে গঠনতান্ত্রিক ও আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা সহযোগিতা করব।

আমি মনে করি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বাঞ্ছনীয়। বিএনপিকে আমরা আহ্বান করেছিলাম, তারা সাড়া দেয়নি। এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এতে আমরা মাইন্ড করি নাই। আমরা এখনো মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা দরকার। শুধু জুলাই সনদ নয়, আজকে যে একটি ভুল–বোঝাবুঝি আছে, পারস্পরিক আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে, সেগুলো দূর হওয়া দরকার এবং আলোচনার মাধ্যমেই সেটা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এখন বিএনপিও যদি সে উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে আমরা তাদের উদ্যোগে সাড়া দেব। আলোচনা যদি না হয়, যদি আলোচনা করতে না চান, তাহলে প্রতিটি দল নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য আলোচনা এবং কর্মসূচি—দুটি পথই বেছে নেবে। সমস্যার সমাধানের জন্য আপাতত এই দুটি পথই খোলা আছে। এটি যেকোনো রাজনৈতিক দলই করবে। তবে আমরা আলোচনার ওপরেই বেশি জোর দিতে চাই।

সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের: নায়েবে আমির, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র র জন য য ন র জন য গ রহণ সনদ ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রত্যাহারের ২ মাস পর এবার বরখাস্ত গাজীপুরের সেই পুলিশ কমিশনার

সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে যাতায়াতের ঘটনায় প্রত্যাহারের দুই মাস পর এবার বরখাস্ত হলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সাবেক কমিশনার নাজমুল করিম খান।

মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়।

সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বরাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গাজীপুর মহানগর পুলিশের-জিএমপি কমিশনার (কর্মস্থল থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রত্যাহৃত) মো. নাজমুল করিম খানকে জনস্বার্থে সরকারি কর্ম থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন। সেহেতু নাজমুল করিম খানকে সরকারি চাকরি আইনের বিধান মোতাবেক সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

এতে আরো বলা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে আদেশে।

গত ১ সেপ্টেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমের স্বাক্ষরিত এক আদেশে জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খানকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এর আগে, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা-গাজীপুরে যাতায়াতের সময় তার চলাচলের জন্য রাস্তা বন্ধ করে রাখার খবর প্রকাশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

বিসিএস ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. নাজমুল করিম খান পুলিশ সুপার থাকার সময় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় ২০২৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে চাকরি ফিরে পান তিনি। এরপর দ্রুত দুটি পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন নাজমুল।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ