চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গবেষণা, ডিসেম্বরে ‘ম্যাপিং রিপোর্ট’
Published: 25th, November 2025 GMT
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রথমবারের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে যাচ্ছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত হবে এই ‘ম্যাপিং রিপোর্ট’। গবেষণাটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ডকল্যাব। আয়োজকদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে আরও ন্যায়সংগত, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে গড়ে তোলার পথ খুঁজে বের করা। প্রতিবেদনে চলচ্চিত্র খাতের কাঠামো, বিনিয়োগের সুযোগ, নীতিগত দুর্বলতা ও সম্ভাবনার জায়গাগুলো তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে থাকবে খাতটির উন্নয়নে একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ও করণীয় বিষয়ে সুপারিশ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উন্মুক্ত আহ্বানের মাধ্যমে এই গবেষণা শুরু করে ব্রিটিশ কাউন্সিল। এরপর প্রধান গবেষক ইমরান ফিরদাউসের নেতৃত্বে ঢাকা ডকল্যাবের একটি গবেষক দল দেশব্যাপী মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করে। তারা প্রযোজক, পরিচালক, স্বাধীন ধারার নির্মাতা, সিনেমা হলমালিক, শিক্ষার্থীসহ চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট নানা পেশাজীবীর সঙ্গে কথা বলেন এবং জরিপ পরিচালনা করেন।
গবেষক দল বর্তমানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র খাতসংক্রান্ত বিদ্যমান নীতিমালা পর্যালোচনা করছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে একটি বিস্তারিত ইকোসিস্টেম ম্যাপ, নীতি বিশ্লেষণ এবং অংশীজনদের জন্য বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ডিসেম্বরে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক আয়োজন করা হবে। সেখানে চলচ্চিত্র নির্মাতা, নীতিনির্ধারক এবং বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর মারিয়া রেহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র খাতের নীতি পর্যালোচনার মাধ্যমে এই খাতের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করা এবং সৃজনশীল খাতে অংশীদারত্ব গড়ে তোলার যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, এই উদ্যোগ তারই প্রতিফলন।’
মারিয়া রেহমান আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সৃজনশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। এই গবেষণাটি নীতিনির্ধারকদের সামনে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা তুলে ধরবে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে সাংস্কৃতিক বিকাশের পাশাপাশি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে।
ঢাকা ডকল্যাবের পরিচালক তারেক আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্প এখন একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ের জন্য গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করছি, এই ম্যাপিং থেকে এমন তথ্য পাওয়া যাবে, যা ভবিষ্যতে স্মার্ট নীতিমালা ও লক্ষ্যভিত্তিক বিনিয়োগে কাজে লাগবে।’
প্রধান গবেষক ইমরান ফিরদাউস জানান, ‘দেশজুড়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা চলচ্চিত্র খাতে বিপুল সম্ভাবনা, প্রতিভা ও আগ্রহ লক্ষ করেছি। এই গবেষণা শুধু বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরবে না, বরং বাস্তবসম্মত ও প্রমাণভিত্তিক করণীয় নির্দেশনা দেবে। বিশেষভাবে আমরা লৈঙ্গিক সমতা এবং খাতটির টেকসই উন্নয়নের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েছি।’
সব মিলিয়ে এই গবেষণা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হতে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারণ, বিনিয়োগ এবং শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা আয়োজকদের।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ র চলচ চ ত র ব র ট শ ক উন স ল চলচ চ ত র খ ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় রেজিস্ট্রারদের প্রাণনাশের হুমকি-হামলার অভিযোগ: ৬ দলিল লেখক
পাবনা জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রারদের কার্যালয়ে হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, মামলা প্রত্যারের আল্টিমেটাম, চাঁদাবাজি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করাসহ নানা অভিযোগে পাবনা সদর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তালিকাভুক্ত ছয় জন দলিল লেখকের সনদ বাতিল করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার। এর আগে রবিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বীপক কুমার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের সনদ বাতিল ও অফিস আঙ্গিনায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত দলিল লেখকরা হলেন— পাবনা সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ইসহাক উল আলম, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শাহীন, সদস্য আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, হাসান মাহমুদ পাপ্পু ও গোলজার হোসেন।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার দ্বীপক কুমার সরকার বলেছেন, হত্যার হুমকি ও অশালীন আচরণসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত উল্লিখিত দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছিলেন সদর উপজেলার সাবেক সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। সেই অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া যায়। সম্প্রতি সেই অভিযোগসহ দলিল লেখকদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এছাড়াও একাধিক সময়ে তাদের বিরুদ্ধে অফিসে হামলা, প্রাণনাশের হুমকি, মামলা প্রত্যাহারের আল্টিমেটাম, অফিসে আতঙ্ক সৃষ্টি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করা, চাঁদা আদায়সহ নানা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ আদেশ দেওয়া হয়েছে। এই ৬ জন ছাড়াও যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লেখকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নুরুল আলম শাহীন আওয়ামী লীগের সময় নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে পাবনা সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আধিপত্য গড়ে তোলেন। জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ছত্রছায়ায় সেখানে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেকে বিএনপিপন্থী পরিচয় দিয়ে কয়েকজন নেতার ছত্রছায়ায় এই স্বর্গরাজ্য ধরে রেখেছেন। প্রতিদিন সেখানে ৪ থেকে ৫০০ দলিল সম্পাদন হয়। দলিল প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করেন তিনি। সেই হিসেবে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকা চাঁদা তুলে ভাগবাটোয়ারা করা হয়।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফোন বন্ধ থাকায় নুরুল আলম শাহীনের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাবনা সদর উপজেলার দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ইসহাক উল আলম বলেছেন, “আমরা শুধু চিঠি পেলাম যে, আমাদের সনদ বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু, কেন করা হয়েছে, তা আমরা জানি না। আমাদের এর আগে কোনো নোটিশও দেয়নি। এখন মিথ্যা মামলা দিলে আমাদের কী বলার আছে?”
ঢাকা/শাহীন/রফিক