করোনাকালের শেষ দিকে এক বিকেলে হাজির হই গাজীপুর সাফারি পার্কে। ওই সময় পার্কে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ ছিল। যখন পার্কে পৌঁছায়, তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল, চারপাশে সুনসান নীরবতা। প্রবেশপথে কোনো দোকানি নেই, মানুষের আনাগোনা নেই, নেই কোনো কোলাহল। পার্কের পরিবেশ বেশ ছিমছাম, খাঁচার ভেতর-বাইরে গাছ-গুল্ম-লতায় সবুজের সমারোহ। মানুষের চলাচলের রাস্তায় শেওলা পড়েছে। নানা প্রাণীর হাঁকডাক কানে আসছে।

পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে একটি বিশেষ প্রাণী দেখার আগ্রহের কথা জানালাম। পার্ক অফিসে চা পান শেষে তিনিও ক্যামেরা হাতে আমাকে নিয়ে পার্কের হাসপাতালের দিকে হাঁটতে শুরু করলেন। পার্কের হাসপাতালের মূল দরজার একটু পরেই ডান দিকের একটি বড় রুমে প্রাণীটি একটি কাঠের বাক্সের ওপর বসে আছে। জীবনে প্রথম ওকে দেখে মনটা আনন্দে নেচে উঠল। তবে পরক্ষণেই বুকের ভেতর কোথায় যেন চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। এমন সুন্দর একটি প্রাণী আমাদের দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে!

অতীতে বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেট ছিল। প্রাইমেট হলো বানর, হনুমান, উল্লুক–জাতীয় প্রাণী। এই প্রাইমেটদের মধ্যে সবচেয়ে বিরল খাটোলেজি বানর, ইংরেজি নাম স্টাম্পটেইল ম্যাকাক। এর মুখমণ্ডল সিঁদুর-রাঙা, যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য একে অন্যান্য বানর প্রজাতি থেকে আলাদা করেছে। স্থানীয়ভাবে বাংলা ভাষায় এটি তাই সিন্দুরি বানর নামেও পরিচিত। নামটা বেশ জুতসই বলা যায়। আমরা হরহামেশা যে বানর দেখে থাকি, তার চেয়ে এরা কিছুটা বড়, মুখাবয়ব বেশ প্রশস্ত। দেহের লোম তুলনামূলকভাবে লম্বা, দেহের নিচের দিকে বাদামি, ওপরের দিকে হালকা সোনালি। মাথার চুল মাঝখান দিয়ে সিঁথি কাটা।

সিন্দুরি বানর মিশ্র সবুজ বনের বাসিন্দা, তবে পত্রঝরা বনেও এদের উপস্থিতি আছে। গভীর বনই এদের পছন্দ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সিন্দুরি বানর দেখা যায়। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, উত্তর-পূর্ব ভারত, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চল, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার গভীর বনাঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে এরা টিকে আছে। পার্শ্ববর্তী ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী বনাঞ্চলে এই বানরের উপস্থিতি থাকায় ওই এলাকাসংলগ্ন বাংলাদেশ অংশের বনে এই বানর থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত দেশের কোনো বনাঞ্চলে এটি দেখা গেছে এমন তথ্য নেই। তাই হঠাৎ করে মৌলভীবাজারের একটি ব্যক্তিগত প্রাণী সংগ্রহশালায় এই বানরের আবির্ভাব ঘটলে বন অধিদপ্তর জব্দ করে বানরটিকে গাজীপুর সাফারি পার্কে পাঠায়।

পার্কজুড়ে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নেমেছে। রুমের ভেতরে রাখা কাঁঠালগাছের একটি ডালে বানরটি বসে আছে। বেশ শান্ত, নির্লিপ্ত, কোনো উচ্ছলতা নেই। চোখে দৃষ্টির অসীম গভীরতা, মুখমণ্ডলজুড়ে যেন হতাশার ছায়া। নিজের হাত-পা-লোম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। দূর থেকে ওর আঙুল, হাতের তালু স্পর্শ করলাম। তাতেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না ওর মধ্যে। মুখমণ্ডলে কোনো ভাবান্তর নেই। চোখ জাগিয়ে একনজর আমাকে দেখল, তারপর আবার নিজের হাতের দিকে নজর দিল। বানরটির বয়স হয়েছে, তবে এতটা শান্ত হওয়ার মতো বয়স নয় মোটেই। হয়তো দীর্ঘদিন খাঁচায় বন্দী করে রাখার ফলে ওর মধ্যে সীমাহীন এক নীরবতা ভর করেছে।

সিন্দুরি বানর আইইউসিএনের বৈশ্বিক লাল তালিকায় বিপন্ন প্রাণী। এতে বাংলাদেশ থেকে এই বানর ‘সম্ভবত বিলুপ্ত’ হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গত ৪০ বছরে এই বানরের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে ৩০ শতাংশের বেশি, প্রায় একই হারে এরা বসতি হারিয়েছে নানা দেশে। বনাঞ্চল ধ্বংস এই বানরের অস্তিত্বের প্রধান হুমকি। এ ছাড়া প্রথাগত ওষুধ তৈরি, শখের পোষা প্রাণী কিংবা চোরা শিকারের কারণে এদের সংখ্যা কমছে দিন দিন।

বুনো উদ্ভিদের বীজ, ফল এই বানরের বেশ পছন্দ। শীতকালে বনাঞ্চলে খাবারের জোগান কমে এলে উদ্ভিদের পাতা, কুঁড়ি, মূল, কন্দ ইত্যাদি খেয়ে টিকে থাকে এরা। বনাঞ্চলের সম্প্রসারণ ও উদ্ভিদের বিস্তারে এদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ফলে বন ধ্বংস হলে এদের টিকিয়ে রাখা যেমন কঠিন, তেমনি এসব বুনো প্রাণী হারিয়ে গেলে বনের অস্তিত্বও বিলীন হবে। তা ছাড়া মানুষের জীবন রক্ষাকারী নানা ধরনের অমূল্য ভ্যাকসিন ও মূল্যবান ওষুধ প্রাথমিকভাবে এমন ধরনের প্রাইমেটের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। তাই নিজেদের স্বার্থে সব বুনো প্রাণীর বাঁচার অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে আমাদেরই।

আজ থেকে ২৫ বছর আগে তৈরি বাংলাদেশের বন্য প্রাণীর প্রথম লাল তালিকায় সিন্দুরি বানরকে ‘ডাটা ডেফিশিয়েন্ট’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। ২০১৫ সালের লাল তালিকায়ও এই প্রাণীর অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এরপর আরও ১০ বছর অতিবাহিত হলো, এই বানর আদৌ বাংলাদেশের কোনো বনে আছে কি না, আজও আমরা জানতে পারলাম না। এই ‘না জানাও’ একধরনের হুমকি। প্রাণীর লাল তালিকা তৈরির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হুমকিগ্রস্ত প্রাণীর সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা, অজানা প্রাণী সম্পর্কে গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেওয়া। ভবিষ্যতে বন্য প্রাণীর লাল তালিকা তৈরির সঙ্গে এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে। তাহলেই এই লাল তালিকা তৈরির উদ্দেশ্য অর্জিত হবে।

এম এ আজিজ: অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র একট

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে নারীদের প্রশিক্ষণের সুযোগ, আবেদন শেষ ৩০ নভেম্বর

বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই)  তত্ত্বাবধানে কর্মসংস্থানমুখী তিন মাস মেয়াদি বিভিন্ন কোর্সে বাংলাদেশি নারীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কম্পিটিটিভনেস অ্যান্ড  ইনোভেশন প্রোগ্রামের (এসআইসিআইপি) সহায়তায় এ প্রোগ্রামটি বাস্তবায়ন করা হবে।

আবেদনের শেষ তারিখ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫।

যে ১১টি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে—

১. পার্থিব গ্যালারি বিউটি অ্যান্ড পার্লার ট্রেইনিং সেন্টার: শ্যামলী হাউজিং-২, রোড নং-৩ হাউজ-বি-১, আদাবর, ঢাকা।

যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

আরও পড়ুনবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রি অনলাইন কোর্স: ২০টির বেশি ভাষা শেখার সুযোগ২৪ নভেম্বর ২০২৫

২.  টিএমএস: রংপুর রোড, ঠেংগামারা, বগুড়া।
যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ফ্যাশন ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

৩.  সাফা হারবাল বিউটি পার্লার: হাউজ ১৫৩/২, পোস্ট-ঘোড়ামারা, বোয়ালিয়া, রাজশাহী। যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

৪. লেডিস লাউঞ্জ বিউটি পার্লার অ্যান্ড ওয়েলস: চাল্ড ভিলা (জল্লারপার মসজিদের পাশে) জিন্দাবাজার, সিলেট।
যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

৫. প্রফেশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট: দক্ষিণ সুরমা, সিলেট।
যে কোর্স করানো হবে:
—ফ্যাশন ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

আরও পড়ুনমেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা : মানবিক গুণাবলির প্রশ্ন-১৩ ঘণ্টা আগে

৬. জীবনতরী টেকনিক্যাল ট্রেনিং একাডেমি: দারুসা রোড, রাজশাহী কোর্ট, রাজশাহী।
যে কোর্স করানো হবে:
—ফ্যাশন ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

৭. মিনাল টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট: ফুকতিবাড়ি, সদর, পঞ্চগড়।
যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।
—ফ্যাশন ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

৮. স্কাস টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার : বিজয়নগর আবাসিক, ডলফিন মোড়, কলাতলী, চট্টগ্রাম।
যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ফ্যাশন ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট,
—ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ।

৯. হোপ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট: সিএসএস, ৪৭ এম এ বাড়ি রোড, গল্লামারী, খুলনা।
যে কোর্স করানো হবে:
—বিউটিফিকেশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

১০. বাংলাদেশ স্কিলস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (বিএসডিআই), হাউস-২/বি, রোড-১২, মিরপুর রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা।
যে কোর্স করানো হবে:
—ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট।

তিন মাস মেয়াদি বিভিন্ন কোর্সে আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ